somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

রাজধানীর এইসব দিন রাত্রিঃ

১৭ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানীর এইসব দিন রাত্রিঃ

তবে কি পার্ক মানে ডার্ক! রাজধানীতে সে অর্থে আজ আর পার্ক কিংবা উদ্যান আছে কই? আভিধানিক অর্থে পার্ক হচ্ছে জনসাধারণের চিত্তবিনোদনের বাগান। এই শহরে পার্কের মানে দাঁড়িয়েছে "ডার্ক" বা আন্ধার। নয়তো কি। দিনের আলোতেও যে কালোদেরই দৌরাত্ম্য এখানে। বিশেষ করে গুলিস্তান পার্ক। ওসমানী-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা ইত্যাদি সমাজবিরোধীদের আখড়া। আপনার "মুড" ফিরিয়ে আনতে, প্রিয়জনের সঙ্গে অনাকাঙিক্ষত "গ্যাপ" ঘোচাতে পার্কে গিয়ে বসবেন? তা হলেই হয়েছে! মন ফুরফুরে হওয়াতো দূরের কথা উল্টো একরাশ বিষাদ আর তিক্ততা নিয়েই ফিরতে হবে। কখনো কখনো সর্বস্ব খুইয়ে, রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরতে এমন কি জীবন নিয়ে নাও ফিরতে হতে পারে।

বাজারের আগুনে ঘৃতাহুতি অবস্থা! বাড়ছেই বাড়ছে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। গতি কি এখন স্বল্প আয়ের মানুষজনের? প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আয় রোজগার বাড়বে, তেমন সুযোগ কোথায়? রাজধানীর বাজার, বিপনি বিতানগুলো যেন আজ ক্ষুধার্ত বাঘের মুখ এক একটা! ভয়ে ভয়ে পা বাড়ায় ক্রেতাসাধারণ। নিতান্ত বাধ্য না হলে কে চায় কেনা-কাটা করতে গিয়ে কাটা পড়তে! বিত্তবানের হয়তো কিছুই যায় আসে না, দ্রব্যমূল্য বাড়া-কমায়।

কোন রকমে সংসার চালায় যারা, যত হা পিত্যেশ তাদেরই। বাজারে আসা ক্রেতাসাধারণের চোখে মুখে ক্যামন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-বিরক্তির ছাপ। সেদিন মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে বিড়বিড় করে একজনকে বলতে শোনা গেল, অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, কোন রকমে নূন ভাত খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ওদিকে নূন আনতে যাদের পান্তা ফুরায়, তাদের খোঁজ-খবর কে রাখে! বিত্তহীন এতো এতো মানুষের দিন কী করে হয় গুজরান, সে বড় বিস্ময়ের ব্যাপার বটে।

নাকাল মধ্যবিত্ত! সব দিক বিবেচনায়, মধ্য বিত্তেরই সবচে নাস্তানাবুদ অবস্থা এখন। জীবন যাত্রায় কত কী সামাল দিয়ে এগুতে হয়। একদিকে ইঁদুর দৌড়ের কান্তি তার ওপর বাড়তি মানসিক চাপ। চেনা জানা এমন অনেক পরিবার আছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই যাদের একমাত্র উপার্জন। সম্প্রতি এই অর্থের ১০ ভাগ ছেড়ে দিতে হচ্ছে সরকারি সিদ্ধান্তে! সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী এক তরুণ বললেন, "আমরা ভাই মাইনকা প্যাঁচে পড়ছি। হঠাৎ কইরা ইন্টারেস্ট থাইক্যা ১০ ভাগ কাটার বিষয়টাতো জবদস্তির। এখন মেয়াদ পুরা হবার আগে টাকা তুইলা নিলেতো আরো লস"! প্রয়াত এক আর্মী অফিসারের স্ত্রী বললেন, আমি যখন সঞ্চয়পত্র কিনেছি, তখন তো এই ১০ পারসেন্ট কেটে নেয়ার শর্ত ছিলো না। নতুন যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আসছে তাদের জন্য এ ঘোষণা প্রযোজ্য হতে পারে। এটি জানার পর কে সঞ্চয়পত্র কিনবে কে কিনবে না, সেটি তার সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আগের ক্রেতাদের কাছ থেকে এভাবে অর্থ কেটে রাখাটা এক ধরনের ছিনতাই।

সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর কর কেটে নেয়ার এমন সিদ্ধান্তের বলি কেন মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্তকে হতে হবে? প্রযোজ্য হতে পারে এটি বিত্তশালীদের জন্য।

মানবেতর বনাম ইতর মানব জীবনঃ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ইতর প্রাণীর মতো বেঁচে থাকাকে বলা হয় মানবেতর জীবন। তাহলে জন্তু-জানোয়ারের বিলাসী জীবন যাপনের সুযোগ সুবিধাকে কি বলবো? ইতর মানব জীবন? এই শহরে একদিকে যখন ভূখা-নাঙ্গা মানুষের কাফেলা, অন্যদিকে তখন কোন কোন বিত্তবানের প্রাসাদে পোষা প্রাণীর জন্য আদর-আপ্যায়নের দৃশ্য দেখে আপনি মূর্ছা যেতে পারেন। বেশ গর্বের সঙ্গেই সেদিন জোড়া কুকুরীর জন্য বিরাট অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের কথা শোনালেন এক শিল্পপতির স্ত্রী।

কোন রূপকথা নয়। শেরী-কুকি নামে তাঁর দুই কুকুরীকে প্রতিদিন যে খাবার পরিবেশন করা যে অনেক মধ্যবিত্ত সদস্যেরই কপালে তা জোটে না। কোনরকম বিব্রত না হয়েই মহিলা জানান, কখনো মুরগির মাংস, কখনো গরুর কলিজার সাথে বিদেশী বিস্কিট-দুধ খাওয়ানো হয় তার প্রিয় দু কুকুরীকে। এদের স্বাস্থ্যের দেখভালের জন্য আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চুল-নখ কেটে দেয়ার জন্য রয়েছে আলাদা কর্মী। একদিকে যখন বিপুল সংখ্যক মানুষের দু'বেলা দু'মুঠো খাবারের বন্দোবস্ত নেই, ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট খুঁজে হয়রান ভাসমান মানুষের দল। সেখানে রীতিমতো জামাই আদরে-বিলাসী আপ্যায়নে, সুরম্য ভবনে বাস করছে ইতর প্রাণী! সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই রাজধানী!

কী আশ্চর্য্য ঢাকা শহরে পাখি নেই! কাক ছাড়া এই শহরে আজ আর কোন পাখি চোখে পড়ে না। এ কী কাণ্ড! ইঁদুর দৌঁড়ে ব্যতিব্যস্ত নগরবাসীর এ নিয়ে ভাববার সময় কোথায়? একজনতো বলেই বসলেন, "কাজ নিয়ে ভাবো, পাখি খোঁজার দরকার নেই"। এক সময় দোয়েল-শালিক-চড়ুই-ঘুঘু কত না পাখি দেখে চোখ জুড়ানো যেত। শৈশবে এই নগরীতে নানা রং-এর ফড়িং, প্রজাপতি নিয়ে খেলা করেছি মনে পড়ে। এখন খেলা করা না হোক।।চোখের দেখাও কি দেখতে নেই। কাঠখোট্টাভাবে আরেক বন্ধু জানালো, "পাখি নেই কে বলেছে, কাটাবনে যাও, দোকানে দোকানে কত পাখি"। একথা সত্যি। কিন্তু এতো কারাবন্দি প্রিয়জনকে দেখতে যাওয়ার মতো! মুক্ত, ধাবমান উড়ে চলা, শুরতোলা পাখি।।এই শহরের আকাশসীমায় কি নিষিদ্ধ হয়ে গেল! তবে কী কেবল শীতেই পরিযায়ী পাখি দেখার সুযোগ মিলবে শহর প্রান্ত ছাড়িয়ে জাহাঙ্গীরনগরে কিম্বা চিড়িয়াখানার লেকে!

রাজপথে গাড়ির ঘর্ঘর, হর্ণের বিকট শব্দ কিংবা শব্দ দূষণ। গাছ-গাছালীর ডালে উঁচু ভবনের ছাদে কাকের কা কা। এইসব কর্কশ ধ্বনিই বুঝি নগরবাসীর নিয়তি।

সেদিন আকাশে উল্কা পতন দেখার দাওয়াত জানাতে এক বন্ধুকে ফোন করতেই ওপার থেকে হো হো হাসির রোল। যেন উদ্ভট প্রস্তাব দিয়ে বসেছি। দাওয়াত নাকচ করাই শুধু নয়, এ ধরনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার অনুরোধ জানায় বন্ধুবর। তবে কি গ্রহণকালকেই গ্রহণ করতে হবে। চির নির্বাসনে পাঠাতে হবে ফুল-পাখি-চাঁদ?

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×