প্রতারণার আর এক নাম জ্যোতিষী!
মানুষ বিপদে পড়লে কোথায় না ছোটে। নেতা, মন্ত্রী, দেবস্থান, গোরস্থান থেকে শুরু করে জ্যোতিষীদের দরবারে। আর এই জ্যোতিষী বাবাজী, মাতাজীরা মানুষের দুর্বলতা, অসহায়তা, কুসংস্কার এবং অসচেতনতাকে হাতিয়ার করে তাদের সর্বস্বান্ত করার জন্য শুরু করে তাবিজ, কবজ, মাদুলি, ঠিকুজি, কোষ্টি ও বশীকরণের সম্মোহনী খেলা।
জ্যোতিষ কোনো শাস্ত্র নয়, নয় বিজ্ঞান কিংবা দর্শন। স্রেফ মানুষের অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার ফসল। কতগুলো মনগড়া কথা বলে, কখনও ভয় দেখিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলে পয়সা উপার্জনের ফিকির। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কেউ ভেক ধারী সন্ন্যাসী সেজে, কেউ বা ধোপদুরস্থ ভদ্রলোক সেজে খদ্দের ধরার জন্য জাল বিছিয়ে বসে থাকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের রমরমা বিজ্ঞাপনে। সেইসব বিজ্ঞাপনের মডেল হয় সিনেমা নাটকের বাতিল হওয়া কিছু নটনটী -যারা পেশাগত জীবনের মূলত যৌনকর্মী হিসেবেই গতর খাটাতো। ওরাই মডেল সেজে টিভি, খবরের কাগজে দেয় গাল ভরা বিজ্ঞাপন। তাদের মতে রাহু, কেতু, রবি এবং চন্দ্র নাকী গ্রহ! কিন্তু তার সন্ধান আজ পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পেলেন না!!
সৌরজগতের কয়েক লক্ষ মাইল দূরে থাকা শনি গ্রহ নাকি খুবই দুষ্টু গ্রহ। যার প্রতি তার নজর পড়ে তার জীবন একদম বরবাদ হয়ে যায়! হ্যাঁ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা না পারলেও সৌরজগতের সেই গ্রহগুলোকে আমাদের এই স্বনামধন্য জ্যোতিষীরা তাদের তন্ত্র, মন্ত্র, মাদুলি তাবিজ আর পাথর দিয়ে বশীভূত করতে পারে। হররোজ বেশ মোটা টাকার বিনিময়ে তা করে থাকেন! আশ্চর্য এরা যে সবাই তন্ত্র সাধক ,মাতৃসাধক, জীন বিদ্যা বিশারদ কিম্বা জ্যোতিষ বিশ্ববিদ্যালয়ের 'গোল্ড মেডালিষ্ট'! এরা সবাই এইট পাস প্রফেসর। আজগুবি নামের সব ডিগ্রি নিয়ে তারা প্রতিনিয়ত মানুষের সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে, গালভরা কথা বলে একশ্রেণির দুর্বলচিত্তের শিক্ষিত/অর্ধ শিক্ষিত/অশিক্ষিতদের সম্পূর্ণ বোকা বানিয়ে যাচ্ছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞান একটা ফলিত বিজ্ঞান। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু জ্যোতিষ নয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণা হয়। সেই গবেষণার পরীক্ষালব্ধ প্রমাণের কারণেই আজ মানুষ মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছে। মনে রাখবেন, জ্যোতির্বিজ্ঞান আর জ্যোতিষ এক বিষয় নয়।
সাধু সাবধান! শুধু লিটন দেওয়ান, প্রফেসর হাওলাদার নয় এরকম বহু শাস্ত্রী, বাবাজী, মাতাজী ভেক তন্ত্রসাধক প্রতিনিয়ত মানুষ ঠকিয়ে চলেছে। ভবিষ্যতেও ঠকাবে। এদের বিরুদ্ধে না আছে কোনো আইন না আছে গণ আন্দোলন। আমার আপনার সচেতনতা, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং গণমাধ্যম গুলির ব্যাপক প্রচারই পারে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৪৪