somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

ফুলের নাম রডোডেনড্রন.......

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফুলের নাম রডোডেনড্রন।
রডোডেনড্রনের রয়েছে শতাধিক প্রজাতি। প্রচণ্ড রোদে রডোডেনড্রনে রংধনুর রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। সে এক অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য!
প্রকৃতির মাঝে দোলায়িত শত-সহস্র ফুলের মধ্যে খুব কম ফুলের ভাগ্যে কালজয়ী সাহিত্যে স্থান পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। রডোডেনড্রনের রয়েছে তেমনই সৌভাগ্য।


বাংলা সাহিত্য ছাড়িয়ে এই ফুল জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বসাহিত্যের আসরেও। সাহিত্যের বিশ্বসভায় সমাদরের দিক থেকে তুলনা করলে একমাত্র গোলাপকেই পাওয়া যায় রডোডেনড্রনের প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে। অনেক পেছনে থাকে চেরি, লিলি এবং আমাদের জবা, জুঁই, মালতী, বকুল, পলাশ, শিমূল, রজনীগন্ধা।

প্রসঙ্গত বলা ভালো, গোলাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক নিবিড় সাহিত্যিক বিষণ্নতা। জার্মান কবি মারিয়া রিলকে প্রেমিকার কাছ থেকে পাওয়া উপহার স্বরূপ গোলাপ স্তবক গ্রহণ করতে গিয়ে আবেগ ও উত্তেজনার আতিশয্যে কাঁটায় বিদ্ধ হন। যে আঘাতের ক্ষতটিই তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। ‘রিলকের গোলাপ’ তাই বিশ্বসাহিত্যে এক ট্র্যাজিক ব্যাঞ্জনা পেয়েছে।

রডোডেনড্রনের প্রসঙ্গ শুরু করা যেতে পারে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে। তাঁর ‘শেষের কবিতা’র মতো বিখ্যাত লেখা সম্পর্কে কে না জানে! রবীন্দ্রনাথ ‘শেষের কবিতা’য় বাংলাভাষী পাঠকের মনে রডডেনড্রনকে অমরত্ব দিয়েছেন! একটি অতি রোমান্টিক ও নাটকীয় আবহে প্রেমের ফুল হয়ে এসেছে রডোডেনড্রন।

‘শেষের কবিতা’-এর কাহিনীতে আছে: শিলং পাহাড়ে সন্ধাবেলায় গাড়ি নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছে অমিত রায়, পাহাড়ি পথে আচমকা তার গাড়ি ধাক্কা দিল আর একটি গাড়িকে। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল একটি মেয়ে। সে দিন লাবণ্যকে তার বাড়ি নামিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে কবিতার খাতা খুলতেই বেরিয়ে এসেছিল নিবারণ চক্রবর্তী তথা অমিত রায়ের উচ্ছ্বাস, ‘...অরুণ মেঘেরে তুচ্ছ,/ উদ্ধত যত শাখার শিখরে/ রডোডেনড্রনগুচ্ছ।’ প্রেমকে নতুন প্রেমিক পেয়েছিলেন রডোডেনড্রনের আবহে।

রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের ধীমান লেখক বুদ্ধদেব বসুও পরে এই ‘রডোডেনড্রনগুচ্ছ’ নামেই লিখেছিলেন এক আস্ত উপন্যাস। শুধু বাংলা নয়, কালজয়ী ইংরেজি সাহিত্যেও প্রেমের এক অমোঘ দৃশ্যে রডোডেনড্রনের উপস্থিতি উজ্জ্বলতর হয়ে রয়েছে। জেমস জয়েস-এর ‘ইউলিসিস’-এ ডাবলিন উপসাগরের ধারে এক এলাকায় ঝরে-পড়া রডোডেনড্রনের মাঝে লিওপোল্ড ব্লুম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে নায়িকা মলি ব্লুমকে। প্রণয় নিবেদনের চমৎকার প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল রডোডেনড্রনের সান্নিধ্যে। সংলাপেও সে কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি ঔপন্যাসিক, যা পরবর্তী কালে স্মৃতি হাতড়েছে নায়িকা মলি: '...the day we were lying among the rhododendrons on howth head in the grey tweed suit and his straw hat I got him to propose to me'.

অনেকেই স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজের চৌকাঠে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ বইটি পড়েন। হয়ত বয়সের চপল-চঞ্চল স্বভাবের কারণে সে বয়সে সেভাবে বুঝতে পারেন না উপন্যাসটির মূলভাব। তবে অনেককেই জানি, ‘শেষের কবিতা’ পড়ার পর ভীষণ আচ্ছন্ন হয়ে যান। এমনও হয়েছে যে, মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছেন অমিত রায় নামের চরিত্রটিকে। তার কথা বলার ঢং, কাব্য গাঁথুনি, কবিতা পাঠ, তার প্রগলভতা সবকিছুই ছিল বিশ্বায়নের প্রযুক্তি-পূর্ববর্তী পটভূমিতে ৬০ কিংবা ৭০ অথবা ৮০ দশকের একজন বাঙালি মেয়েকে প্রেমে আকৃষ্ট করার জন্য পরিশীলিত পন্থা।

রডোডেনড্রনের উল্লেখ আর আধুনিক উপস্থাপনার কথাও তরুণ-যুবকেরা শিখেছে ‘শেষের কবিতা’ থেকেই: “পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি/আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।”

আবার এমন অনেককেই নিজের অভিজ্ঞতায় চিনি বা জানি, অমিত-লাবণ্যের প্রেমময় অমর কবিতাখানি তাদেরকে এতটাই মুগ্ধ করে ফেলেছিল যে, বইটি পড়ার পাশাপাশি কবিতাটি পুরো মুখস্থ করেছিলেন। আমিও মুখস্থ করেছিলাম এবং সুযোগ পেলেই ক্যাম্পাস জীবনে বন্ধুমহলে আবৃত্তি করে চমকে দিতাম সবাইকে:
“পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি,
আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।
রঙিন নিমেষ ধুলার দুলাল
পরানে ছড়ায় আবীর গুলাল,
ওড়না ওড়ায় বর্ষার মেঘে
দিগঙ্গনার নৃত্য,
হঠাৎ-আলোর ঝলকানি লেগে
ঝলমল করে চিত্ত।
নাই আমাদের কনকচাঁপার কুঞ্জ,
বনবীথিকায় কীর্ণ বকুলপুঞ্জ।
হঠাৎ কখন সন্ধ্যাবেলায়
নামহারা ফুল গন্ধ এলায়,
প্রভাতবেলায় হেলাভরে করে
অরুণকিরণে তুচ্ছ
উদ্ধত যত শাখার শিখরে
রডোডেনড্রন গুচ্ছ।”


আর কি চাই?
একটি ফুলের জন্য রবীন্দ্রনাথের অপূর্ব কবিতাটির মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রেমময়-সম্মাননার স্পষ্টতর স্বাক্ষরই যথেষ্ট।
রডোডেনড্রন ‘শেষের কবিতা’র পরশে কেবল ফুলই থাকে না, হয়ে যায় প্রেমের প্রতীতি। ডাক দেয় দূর পাহাড়ের। হাতছানিতে যেতে বলে শিলং পাহাড়ে। যেখানে প্রেমের প্রত্যয় নিয়ে আছে অমিত কিংবা লাবণ্য।

রডোডেনড্রন পাহাড়ী এলাকায় বেশী জন্মে, তবে সমতল ভূমিতেও অনেক দেখা যায়। ঢাকা শহরে রডোডেনড্রন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক যায়গায়। বোটানিক্যাল গার্ডেনে রডোডেনড্রন এর একটা আলাদা জোন আছে। সংসদ ভবনের পূর্ব পাশে, পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে যেখানে সবুর খানের কবর, জিয়া উদ্যানে অনেকগুলো রডোডেনড্রন আছে। ঢাকা সেনানিবাস গলফ কোর্স, বনানী গোরস্তানের গেইটে, এবং আরও একটু দক্ষিণ দিকে এগিয়ে বনানী পীরের মাজার সংলগ্নও কয়েকটি রডোডেনড্রন আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:১৫
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর।"

লিখেছেন এমএলজি, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৩০

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর।" বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় এ কাজটি করা হয়নি বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

বিষয়টি সত্য কিনা তা তদন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কেমন ছিলেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কেমন ছিলেন?

ইয়াতিমদের সাথে ইফতার অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া, ছবি https://www.risingbd.com/ থেকে সংগৃহিত।

তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রীও তিনি। তাকেই তার বৈধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বছরশেষের ভাবনা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৮


এসএসসি পাস করে তখন একাদশ শ্রেণিতে উঠেছি। সেই সময়ে, এখন গাজায় যেমন ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন বসনিয়া নামে ইউরোপের ছোট একটা দেশে এরকম এক গণহত্যা চলছিল। গাজার গণহত্যার সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উৎসর্গ : জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP)

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৮



খিচুড়ি

হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল “হাঁসজারু” কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে—“বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।”
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা—
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×