মাথাপিছু ২৫৯১ ডলার আয় এবং অভাব....
পান্থপথে টিসিবি'র ট্রাক সেল প্রজেক্টের একটা ট্রাকে কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হয়। একই চিত্র ফার্মগেট আনন্দ সিনেমার কাছেও। কয়েক দিন আগে সকাল ১০ টায় যখন ঐ পথে যাচ্ছিলাম তখন একটু সস্তায় পণ্য কেনার জন্য প্রতিটা ট্রাকের পিছনে অন্তত তিন শতাধিক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে। যাদের দেখে সবাইকে নিম্ন বিত্তের মনে হয়নি বরং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের বয়স্ক নারী পুরুষ মনে হয়েছে। আগে দেখা যেত, টিসিবির ট্রাকসেল থেকে পণ্য কিনতে লাইনে দাড়ানো বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। আর এখন মধ্যবিত্ত থেকে মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের লোকজনও সুযোগ পেলে টিসিবির পণ্য কিনছেন। সংকোচবোধ থেকে মুখ ঢেকে একটু সাশ্রয়ী মূল্যে তেল, ডাল, চিনি ক্রয় করতে গেছে। আবার সচ্ছল পরিবারের কেউ কেউ বাসার কাজের বুয়াকে দিয়েও পণ্য সংগ্রহ করছেন।

তিন ঘন্টা পর যখন আবার ঐপথে ফিরছিলাম তখনও শতশত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে সামান্য কম দামে কিছু পণ্য কেনার জন্য! খোঁজ নিয়ে জানলাম ইতোমধ্যে এক ট্রাক পণ্য সেল করা হয়েছে, আরও এক ট্রাক পণ্য সেল চলছে... । এখনো যত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তাদের জন্য আরও পাঁচ ট্রাক পণ্য দরকার। কিন্তু এই এলাকার জন্য সপ্তাহের পাঁচ দিনে প্রতিদিন বরাদ্দ মাত্র দুই ট্রাক পণ্য! লাইনে দাঁড়ানো লোকদের মধ্যে মাত্র এক চতূরাংশকে দিতেই দুই ট্রাক পণ্য শেষ।
"আমরা সিংগাপুর, কানাডা, মালেশিয়া কেও ছাড়িয়ে গিয়েছি", "আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ, অমুক বেঁচে থাকলে এতোদিনে আমরা উন্নত দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে স্থান পেতাম", "জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে আমরা ভারত পাকিস্তান নেপালকে ছাড়িয়ে গিয়েছি"- তার প্রমাণ- পাঁচ-দশ টাকা কমে এক কেজি আলু পেঁয়াজ কেনার জন্য দিনমান রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা!

এবার আসুন, কিভাবে প্রমাণিত হবে আমাদের মাথাপিছু ২৫৯১ ডলার আয় হচ্ছে। যখন পত্রিকায় পড়বেন হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম দানের বিল পরিশোধ করতে নিজের সন্তানকেই বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে হয়। যখন শুনবেন ঋণ জর্জরিত ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করতে নাপেরে আত্মহত্যা করেছে। যখন একটি পরিবার এক লিটার ভোজ্য তেল কিনতে অসমর্থ হয়ে ২০ টাকার তেল কিনে পলিথিন ব্যাগে করে বাড়ি ফেরে। যখন দেখবেন সাধারণ মানুষ চিকিৎসার অভাবে ধুকেধুকে মারা যাচ্ছে তখন ক্ষমতাসীন মন্ত্রী এমপি আমলারা ট্যাক্সের টাকায় সর্দিকাশির চিকিৎসার জন্য মাসে মাসে সিংগাপুর, লন্ডন আমেরিকা যায় এবং মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, দুবাই, লন্ডন আমেরিকা, কানাডায় প্রাসাদ বানায়......
.....এরা পুকুর কাটা শিখতে, খিচুড়ি রান্না শিখতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে যায়..… এরা একটা বালিশের কাভার, জানালার পর্দা কেনার পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে… এরা পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে বেশি মুল্যে নিম্নমানের রাস্তা, ফ্লাইওভার তৈরি করে…. আম জনতার মৌলিক চাহিদা- অন্ন বস্র খাদ্যের চাহিদা না মিটিয়ে দরকার না হলেও হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে আকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়......
কতো বাবা-মা আছেন বৃষ্টি ভিজে, রোদে পুড়ে লাইন দিয়ে ৫/১০ টাকা কমে টিসিবি'র পণ্য কিনে সংসারে একটু আর্থিক সাশ্রয় করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর নিষ্কর্মা ছেলে টং দোকানে দিনভর আড্ডায় একটার পর একটা বেনসন ফুকছে...মাসে হাজার টাকার মোবাইল ইন্টারনেট বিল দিয়ে ফেসবুকে ফাত্রামি করছে!
সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



