somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

ভালোবাসা দিবসে হারিয়ে গিয়েছে জয়নাল দীপালি সাহার আত্মত্যাগ….

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোবাসা দিবসে হারিয়ে গিয়েছে জয়নাল দীপালি সাহার আত্মত্যাগ….

১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ এরশাদ সামরিক শাসন জাড়ি করার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ মুখর হয়েছিল।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের ২১ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশে কুদরত -ই- খোদা শিক্ষানীতির বিপরীতে স্বৈরাচারী এরশাদের নির্দেশে আবির্ভূত হল মজিদ খান শিক্ষানীতি। মজিদ খানের প্রস্তাবিত শিক্ষা নীতির ছোট্ট একটাই নীতিই বলি- 'আপনি যতই দূর্বল ছাত্র হন- সমস্যা নাই, আপনি যদি টাকা ঢালতে পারেন তবে আপনি যতই ফেল করুন, আপনি উচ্চ শিক্ষা পাবেন। আপনার টাকা নাই, আপনার শিক্ষা পাওয়ার অধিকার নাই। শিক্ষার মাপকাঠি মেধা নয়, অর্থ।'

এই নীতির বিপক্ষে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন সহ সকল ছাত্র সংগঠন এক হয়ে যায় ১৯৮২ এর ১৭ সেপ্টেম্বর। দিনটি ছিল ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনের ২০ বছর পূর্তি। ২১ তারিখেই গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। জানুয়ারিতে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন আরো বেগ পায়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী দেওয়া হয়।
ভালোবাসা দিবস পালনের ‘মহা’ গুরুত্ব আমার বলা অপ্রয়োজন। কারণ হাজার হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ভালবাসা দিবসের ‘গুরুত্ব’ কে আলোকিত করতে সহস্র শ্লোগানের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে প্রতি বছরই। এই দিনে ফুল থেকে শুরু করে কার্ড, চকলেট, ডায়মন্ড, প্লাটিনাম মার্কেটিং দিনকে দিন অসাধারণত্ব পেয়েই চলছে। হয়তো ভবিষ্যতে ফুল, চকলেট, ডায়মন্ড, প্লাটিনামের
মতোই ইউরোনিয়াম, চাঁদের মাটিও বিক্রি হবে যা মৌসুমি ভালোবাসা ক্রেতা বিক্রেতাদের পছন্দের গিফট হবে। এইদিনকে ঘিরে নাটক, কনসার্ট এর ধুম নতুন কিছু নয়। এই দিন যেহেতু এত আয়োজনপূর্ণ সেহেতু ভালাবাসা দিবস ছাড়া ভালোবাসার যথার্থ প্রকাশ অসম্ভব- আমরা তা ধরেই নিতে পারি।

১৯৯৩ সালের দিকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে। সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুরু করেন। এ নিয়ে অনেক ধরনের মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত শফিক রেহমানের চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে মূলত দৈনিক প্রথম আলো এবং যায়যায়দিন পত্রিকার ব্যপক প্রচারে। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে শফিক রেহমান আমাদের দেশে ‘ভালোবাসা’ দিবস হিসেবে পরিচিত করানোর আগে দিনটি ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ’ দিবস হিসেবেই পালিত হত।

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাঙলাদেশের মাটি লাল হয়েছিল জয়নাল এবং শিশু দীপালি সাহার রক্তে- এ ইতিহাস আমাদের জানা সত্ত্বেও আরেকবার স্মরণ করতে কোন ক্ষতি নাই।

এখনো আমার স্মৃতিতে দগদগে- ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারি করা হলে সকল রাজনৈতিক দল এবং তাদের কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে। নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তৎকালীন ছাত্র সমাজ বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথম থেকেই সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে আসে। ৮ নভেম্বর ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে তার পরদিন মধুর ক্যান্টিনে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। ১১ দফার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের’ অন্যতম প্রধান দাবী ছিল এরশাদ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রী ড.আব্দুল মজিদ খান কর্তৃক ১৯৮২ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর প্রণীত শিক্ষানীতি বাতিল করার।

এরশাদ এবং তার শিক্ষানীতির বিরোধিতা জোড়াল হয়ে ওঠে ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়ে ওই দিন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ঢাকার বুকে নেমে পড়ে। বিশাল এক মিছিল সচিবালয়ের অভিমুখী যাত্রা করে স্মারকলিপি পেশ করার উদ্দেশ্যে। মিছিলটি পুলিশের দ্বারা বাধা-প্রাপ্ত হয় হাইকোর্ট-মোড়ে। পুলিশের বসানো কাঁটাতারের বেড়ার উপর উঠে পড়ে অনেক ছাত্র। জ্বালাময়ী সব শ্লোগানে কেপে ওঠে পুরো এলাকা। হঠাৎ করেই মিছিলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সেই সাথে নিরস্ত্র ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস আর গুলি ছোড়ে পুলিশ। গুলির আঘাতে প্রাণ হারায় জয়নাল। আহত হয় জাফর, আইয়ুব, কাঞ্চনসহ আরো অনেকে। শিশু একাডেমীতে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে জীবন হারায় ছয় বছরের শিশু দীপালি সাহা।বতখন ছিল কেবল রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিটিভি। সেই বিটিভির খবরেই স্বীকার করা হয় ১০ জনের মৃত্যুর কথা, ১৩১০ জনকে এই এলাকা থেকে গ্রেফতারের কথা।

দীপালি সাহা, জয়নালদের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এর পরের বছর মানে ১৯৮৪ সাল থেকে মোটামুটি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হতো ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভালবাসা দিবস’ বাংলাদেশে প্রচলিত হওয়ার পর থেকে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ইতিহাস অনেকটাই ঢাকা পড়ে যায়।

‘ভালবাসা দিবস’ যার খুশি সে পালন কিংবা অ-পালন করতেই পারে তবে ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি যারা জীবন দিয়েছিলেন তাঁদের স্মরণ করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের প্রতি আমরা সম্মান জানাতে পারি।।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৪৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×