
আরতি ডোগরা(Arti Dogra), উচ্চতায় মাত্র তিন ফুট সাত ইঞ্চি(3'-7")! তার কাজ, অধ্যবসায় ও সাফল্যের মাধ্যমে তিনি নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে হয়ে উঠেছেন পিছিয়ে পড়া নারীর রোল মডেল। বর্তমানে তিনি রাজস্থানের আজমীর জেলার ডিসি(ডেপুটি কমিশনার) পদে নিযুক্ত। ওনার জন্ম উত্তর খণ্ডের দেরাদুনে।
সমাজ আরতিকে বৈষম্যের চোখে দেখত, কিন্তু তাঁর বাবা-মা সবার উপরে নিজের সন্তানকে খুবই ভালবাসত, স্বপ্ন দেখতো। তাঁকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে এতটাই স্বাবলম্বী তারা বানিয়েছে যে, আজ গোটা সমাজ তাঁকে ভালোবাসার চোখে দেখে এবং তাঁকে সন্মান দেয়। আরতি নিজের কার্যকালে প্রশাসক হিসাবে বিভিন্ন উচ্চ পদে থেকে অনেক উল্লেখ যোগ্য কাজ করেছেন। আর তিনি কোন মানুষকেই অছ্যুত হিসেবে দেখেন না। ওনার কাছে সবাই সমান। ছোট বেলায় তাকে যে বঞ্চনা সহ্য করতে হয়েছে, সেই বঞ্চনার শিকার আর কাউকে হতে দেবেন না বলে পণ করেছেন।

আরতি ডোগরার বাবা রাজেন্দ্র ডোগরা সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল। মা কুমকুম ডোগরা স্কুল শিক্ষিকা। ১৯৭৯ সনে আরতির জন্মের পর কম্বাইন্ড মিলিটারী হসপিটালের ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন- বাচ্চার ভবিষ্যত শারীরিক খর্বতার বিষয়। যখন আরতি ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল, তখন শুরু হয় তাঁর প্রতি সামাজিক বঞ্চনা। নানা প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে আরতির বাবা-মা তাঁকে অন্যসব সাধারণ বাচ্চাদের সাথেই স্কুলে ভর্তি করেন। অনেক আপত্তি স্বত্বেও ওনারা পড়াশোনা নিয়ে কম্প্রোমাইজ করেননি। আরতি দেরাদুনের বেলহাম গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন এবং দিল্লীর লেডি শ্রীরাম কলেজ থেকে ইকোনমিক্সে গ্রাজুয়েশন করেন। এরপর Indian Administrative Service এর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তিনি। প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আরতি ২০০৬ সালে IAS (Indian Administrative Service) অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।

উচ্চতা কম হলেও, পেশাগত জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুদক্ষ প্রশাসক হিসাবে আরতি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। এমন নারী পরিবার বা সমাজের নয়, গোটা দেশের গর্ব। নিজের কর্ম গুনে তিনি যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, ছোটবেলার সেই নিন্দুকরা সেখানে তাকে শুধু সমীহ করতে পারেন , দূর থেকে রীতিমতো মাথা উঁচু করে দেখেন সেই খর্ব মেয়ের উচ্চতর সাফল্য।
(কোলকাতার আনন্দ বাজার পত্রিকার রিপোর্ট থেকে এই লেখাটা দুই বছর আগে ফেসবুকে লিখেছিলাম)
আজও আমাদের সমাজে কিছু অবিবেচক মেয়েদের বোঝা ভাবে। আর সেই মেয়ে যদি শারীরিক দিক থেকে অন্য সকলের মতো না হয়, তাহলে তো তাকে গোটা সমাজই অন্য নজরে দেখে। যেন বিয়ের বাজারে আকর্ষণীয় পাত্রী ছাড়া তার সফল হওয়ার আর কোন মূল্য বা উদ্দেশ্য থাকতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



