ব্লগ, ব্লগিং এবং ফাত্রামি .........
ব্লগিঙের সাথে আমাদের (বিশেষ করে আমার) প্রাক পরিচয় ২০০০ সনের দিকে। তখন ইংরেজি ভাষার ইয়াহু ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করি। ২০০০ সনে চট্টগ্রামের কতিপয় প্রবাসী 'সমুদ্র গ্রুপ' নামে লেখালেখির একটা ডিজিটাল সোস্যাল নেটওয়ার্ক/ প্লাটফর্ম তৈরী করে ইংরেজিতে ব্লগিং করে। আমি সেই গ্রুপের মেম্বার হই ২০০২ সনে।
আসুন এবার জেনে নেই ব্লগ কি?
ব্লগ শব্দটি ইংরেজি Blog এর বাংলা প্রতিশব্দ, যা এক ধরণের অনলাইন জার্নাল। ইংরেজি Blog শব্দের অর্থে Oxford Dictionary তে বলা হয়েছে- Blog is a personal record that somebody puts on their website giving an account of their activities and opinions and discussing places on the Internet they have visited. যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার বলার হয়। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন। ব্লগ ফ্রিলান্স সাংবাদিকতার একটা মাধ্যম হয়ে উঠছে। অনেক ব্লগ আছে যা, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গঠিত হয়ে থাকে। সেখানে শুধুমাত্র সেই একটি বিষয়ের উপরই আলোচনা, মন্তব্য করা হয়ে থাকে। তবে সব ব্লগই মূলত লেখায় আকীর্ণ, কিছু কিছু আবার জোর দেয় শিল্প (Art blog), ছবি (Photo blog), ভিডিও (Video blog), সঙ্গীত (Mp3 blog) আর অডিওর (Podcasting), আরও আছে মজার মজার খাবার নিয়ে ফুড ব্লগ। আরেকটি হলো Microblogging, যা কেবল ছোট-খাট পোস্ট বা লেখা নিয়ে তৈরি।
Bruce Ableson নামক এক ব্যক্তি ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে 'ওপেন ডায়েরি' নামক একটি ব্লগ খোলেন এবং রাতারাতি তার ব্লগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। হাজার হাজার ব্লগার তার ব্লগের সাথে যুক্ত হন এবং এটিই সর্বপ্রথম ব্লগ কমিউনিটি যেখানে, অন্যান্য ব্লগারদের লেখায় মন্তব্য করার সুযোগ দেয়া হয়।
২০০৫ সালে আবির্ভাব হয় সামহোয়্যারইন ব্লগের। বাংলা ভাষায় প্রথম ব্লগ সাইট। শুরুতেই দেশ বিদেশে ব্যাপকভাবে সারা ফেলে সব শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষের মধ্যে। তখনও আমি বাংলা টাইপ করতে পারতাম না। তবুও একটা আইডি রেজিস্ট্রেশন করে প্রথম দিকে ইংরেজিতে লিখতাম। কিন্তু ইংরেজিতে লেখায় ব্যপক টিজিং এবং ট্রলের শিকার হয়ে বাংলিশ অর্থাৎ ইংরেজি হরফে বাংলা শব্দে ব্লগ লিখতে শুরু করি। কিছু দিনের মধ্যেই সামু ব্লগের বিখ্যাত ব্লগার মানবী এবং সামু ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা জানা আপুর প্রেরণা ও সহায়তায় আমিও বাংলা টাইপে দক্ষতা অর্জন করে বাংলা ভাষায় ব্লগিং শুরু করি যা অনেক বাধাবিপত্তির পরেও চলছে.....
সামু ব্লগের সাফল্যে কয়েক বছরের মধ্যে শুধু বাংলা ভাষায়ই কয়েকশ ব্লগিং সাইট বিশ্বব্যাপী দেখা যায়। যদিও সর্বচ্চ জনপ্রিয় হয় সামহোয়ার ইন ব্লগ। তারপর সচলায়তন, আমার বর্ণমালা, আমার ব্লগসহ আরও কয়েকটি। অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে এখনো টিকে আছে সামহোয়্যারইন ব্লগ। আমরা ভালোবেসে সামহোয়্যারইন ব্লগকে সামু নামে ডাকি।
ব্লগিং কারা করেন- প্রশ্নের সহজ উত্তর অবশ্যই শিক্ষিত লোকেরা। যেহেতু সোস্যাল মিডিয়া তথা ব্লগ, ফেসবুকে লেখালেখির কারণেই অনেকগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলায় ফেঁসেছি তাই আমার নিকট আত্মীয় স্বজনরা ব্লগ ঘাটাঘাটি করে দেখতে পান- বেশীরভাগ ব্লগারদের বিদ্বঘুটে অশ্লীল অরুচিকর নামের আইডি!
কিছু ব্লগারদের আইডি/নিক'র উদাহরণঃ পাজি পোলা, মৈথুনানন্দ, পন্ডিত চোদনা শংকর, খাইছি তোরে, ধর ঘেডি দে মাডি, খালি ব্যান খাই, পিরীতির নাম কাডালের আঠা, পুলার নাম লিপিস্টিক খান, ছেড়ে দে শয়তান, আজীব পোলা, দুলাভাই, আমার শালী লণ্ডনে, ডিজিটাল পোংটা, ডিজিটাল হাসি, ভেজা বিলাই, জাকারবার্গের চেলা, স্টিভ জবস আমার শালা, ভাদাইম্যা, বদনা দে নয়তো উষ্টাদিমু, বিজলী এখন ঢাকায়, ধর সাইকেল কমাইয়া আসি, বদমাশ, অধমের নাম বলদা ছেলে- এসব নাম কারোর কাছে হাস্যরসের হলেও একজন শিক্ষিত রুচিশীল মানুষের কাছে দৈন্যতা বৈ অন্যকিছু নয়। সব শেষে সামু ব্লগে আবির্ভুত হয়েছে- ওয়াজ বাবা, সোনাওয়ালা গাজী এবং 'বীর শ্রেষ্ঠ গাজীউর রহমান'! ভাবা যায়, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান, মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের উপাধী "বীর শ্রেষ্ঠ" নিয়েই কি নির্মম রসিকতা! কী ভয়ংকর ইতরামী! আমি নিশ্চিত বীর শ্রেষ্ঠদের অসম্মান করতেই কোনো রাজাকার/রাজাকার সন্তানের এহেন অসভ্যতামী! মুক্তিযুদ্ধে একজন শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি অবাক হই, যখন দেখি- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জিবীত সামহোয়্যারইন ব্লগ মডারেটর এমন নামের একটা আইডিকে এক্সেস দেয়! তবে সোনাওয়ালা গাজী আইডি ব্যন করা হয়েছে - সেজন্য ব্লগ মডারেশন প্যানেলকে ধন্যবাদ।
তবে স্বীকার করতে দ্বিধা নাই যে, অনেক ব্লগারই তাদের ছদ্ম নামের ব্লগ আইডি অত্যন্ত রুচিশীল, কাব্যিক অর্থবহ - যা দেখলেই মনটা ভাল হয়ে যায়।
এবার ব্লগীয় নতুন পরিভাষা হিসেবে কিছু শব্দের উদাহরণঃ গদাম (পশ্চাৎ দেশে লাথি ঝাড়া), পাকি (পাকিস্তান সমর্থক), বিম্পি (বিএনপি), আম্লিগ/হাম্বা (আওয়ামিলীগ), ভাদা (ভারতীয় দালাল), পাদা (পাকি দালাল) ভাকুর (ভারতীয় কুকুর), ছাগু/জাশি (জামাত শিবির), টেকি (প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নাম), খিকচ (চাপা হাসির বহিঃপ্রকাশ), ধইন্যা (ধন্যবাদ), ল্যাঞ্জা বাইর হওয়া (বিতর্কে হেরে যাওয়া), কুত্তালীগ (ছাত্রলীগ), লুলামী করা (মেয়েঘেষা কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া), ছাইয়া (ছেলে হয়ে মেয়ের ভান করা), তেনা পেঁচানো (অযথা তর্ক করা), পিছলানো (পাশ কাটিয়ে চলা) ইত্যাদি। যা বাংলা ভাষাশৈলীর বিকৃতি ছাড়া আর কিছুই না।
কিন্তু আমরা যারা ব্লগার আমাদের কাছে এগুলোকে নিছক হাসির খোরাক বলেই মনে হয় এবং আমাদের মাতৃভাষার আংশিক রূপান্তর এর মাধ্যমে কিছু শব্দ যেমনঃ শিরাম/সেরাম (সেরকম), চ্রম (চরম), মুঞ্চায় (মন চায়), ভাল্লাগ্লো(ভালো লাগলো), পিছলানো (কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া), তেব্র (তীব্র), পিচলামি (ইসলামি), মালানি (হিন্দুয়ানী), জসিলা (জটিল)- ইত্যাদি।
ব্লগের ক্ষেত্রে সবথেকে মজার বিশয় হচ্ছে- বিদেশি শব্দকে নিজের মতো করে ব্যবহার করা। এতে অনেক বেশি মজাও পাওয়া যায় পাশাপাশি একটু গুরুগম্ভীর ভাবটাও কাটানো যায়। যেমন বিদেশি শব্দ প্লাচাইলাম (ইতিবাচক রেটিং বা ভোট দেয়া), ব্যান (নিষিদ্ধ), ব্লগান (ব্লগিং করা), পোস্টান/পুস্টানো (লেখা দেয়া), ইউজান (ব্যবহার), হেল্পান (সহযোগিতা করেন), স্লিপান (ঘুমানো), ইটাচ্ছি (খাচ্ছি), কম্পু (কম্পিউটার), ল্যাপু (ল্যাপটপ) ইত্যাদির ব্যবহার নিতান্ত বেরসিককেও হাসাতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে বাংলা বাক্য ও শব্দের নতুন রূপ। হাহাপগে (হাসতে হাসতে পড়ে গেলাম), হাহালুখুগে (হাসতে হাসতে লুঙ্গি খুলে গেল), চ্রম (চরম), খ্রাপ(খারাপ), পুত্তম(প্রথম), তেব্র(তীব্র), বেয়াপক/বেফুক(ব্যপক), মজাক লইলাম (খুশি হলাম), পালাদিমুচা (পাছায় লাথি দিতে মন চায়), আবুআ (আয় বুকে আয়)- এসব নিয়ে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
লেখার কলেবর আর বৃদ্ধি না করে ব্লগ মডারেশন প্যানেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- নতুন করে অরুচিকর নামের আইডি'র রেজিস্ট্রেশন না দেওয়া এবং ইতিপূর্বে ঐ ধরনের নামের আইডি গুলোর নাম পরিবর্তনের সুযোগ দিয়ে কিছু করার থাকলে করবেন।
(কিছু তথ্য গুগল থেকে নেওয়া)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




