দুই আনার জমিদার, ভাব দেখায় ষোলো আনা!
আমাদের বিল্ডিংয়ে একজন ফ্ল্যাট মালিক আছেন যিনি মাঝারি সাইজের আমলা.....ক্ষমতার দম্ভে আর অহংকারে সবাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে হরহামেশাই। আমার ছাদ বাগান নিয়েও কটাক্ষ করে। "৩০/৪০ টাকা দামের ২/৩ কেজি শীম/বরবটির জন্য সারা বছর ছাদে পরে থাকেন!"- এমন কথা প্রায়শই বলে তৃপ্তি পায়।
আমাদের ছাদ বাগানে নানান প্রজাতির ফুল ছাড়াও মৌসুমি শাকসব্জীর মধ্যে শীম, বরবটি, করল্লা, ঢেঁড়শ, দুন্ধল, ঝিংগা, পুঁইশাক, লাউ শাক, লেটুস পাতা, কুমড়া, কুমড়াশাক, কলমি শাক, কচু শাক, বেগুন, টমেটো, কাচা মরিচ, পেয়ারা, লেবু, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি অল্প পরিমাণে হয়- যা রাসায়নিক সার মুক্ত বিশুদ্ধ শাক-স্বব্জী, ফল বিল্ডিং এর সবাই মিলে কম করে হলেও খেতে পারি।
আমার আব্বা বলতেন, 'ভালো জিনিস সবাইকে নিয়ে খেতে হয়'....! নিজেরা খেয়ে পরিমাণে অল্প হলেও প্রতিবেশীদের দিতে পারি- এ এক অপার আনন্দ! ফসল ফলানোর আনন্দ টাকা দিয়ে কেনা যায়না- সেকথা কে বোঝাবে ওই অর্বাচীন আমলাকে।
আসলে আমার ছাগ বাগানে কথা জানান দিতেই এই পোস্ট লিখিনি। হিংসা এবং ক্ষমতার দম্ভে কেউ কেউ কতোটা উন্মাদ হতে পারে তার একটা উদাহরণ দিতেই এই পোস্টঃ-
বিকেলে আমি যখন লিফটে নিচে নেমেছি....তখন আমাদের বিল্ডিংয়ের একজন ফ্ল্যাট ওনার স্ত্রীকে নিয়ে বাসায় ফিরতে লিফটে ওঠেন। লিফটে ঢুকেই দুইজন চীৎকার করে কেয়ার টেকারকে ডেকে বলে- "লিফটের ভিতরে গোবরের দুর্গন্ধে ঢোকা যাচ্ছেনা... লিফটে গোবর তুলেছে কে? তোমরা কিসের ডিউটি করো- সবগুলাকে বিদায় করে দেবো....."!
কেয়ার টেকার দৌঁড়ে এসে বিনয়ের সাথে বলে, "স্যার, লিফটে কেউ গোবর তোলেনায়...."- আমরা সবাই ডিউটিতেই ছিলাম...."।
আমলা সাহেব হুংকার দিয়ে বললেন, "তোমরা সবাই ফাঁকিবাজি করো, ঠিকমতো ডিউটি করোনা- গতরে চর্বি জমেছে... চর্বি কমানোর ব্যবস্থা করতেছি"! আমলা গিন্নী আর একধাপ এগিয়ে কেয়ার টেকারকে আংগুল উঁচিয়ে হুংকার দিলেন- "এটা আমার বাবার যায়গা, কেউ যদি ভেবে থাকে ফ্ল্যাট কিনেই জমিদার হয়ে গিয়েছে- তাহলে মস্তবড়ো ভুল করবে। আমার সহ্যের সীমা কেউ অতিক্রম করলে ভালো হবেনা- সবাইকে জানিয়ে দাও"!
আমি তখনও ব্যপারটা বুঝতে পারিনি, মাঝারি মানের আমলা এবং তার স্ত্রী কেন এভাবে চিৎকার এবং তাফালিং করলেন(যদিও এভাবে তারা প্রায়শই করেন)! আমি আমার কাজে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর যখন বাসায় ফিরে আসি তখন কেয়ার টেকারকে জিজ্ঞেস করি- 'কেউ কি দুর্গন্ধযুক্ত কোনো কিছু লিফটে তুলেছে? আমিতো কোনো গন্ধ পাচ্ছিনা....'!
কেয়ার টেকার বললো, "স্যার আপনি ছাদ বাগানের জন্য গোবর -মাটি আনিয়ে ছিলেন..., যা ----(আমলা) স্যার বাইরে যাবার সময় দেখেছেন... স্যার মনে করেছেন সেগুলো লিফটে করে ছাদে তুলেছে। আমরাতো সেগুলো লিফটে তুলিনি, সিড়ি দিয়েই সব বস্তা ছাদে তোলা হয়েছে"।
শেষের ঘটনা এখন বর্ননা করছিঃ- আমলা/ আমলা স্ত্রীর চিতকারের পর এবং কেয়ার টেকারের কাছে বিস্তারিত শুনে আমি সিসি টিভির ভিডিও রেকর্ড চেক করে দেখেছি। ছাদ বাগানের গাছে জৈব সার দেওয়ার জন্য আমি সাভার থেকে কয়েক বস্তা শুকনো গোবর সার, সরিষার খৈল এবং মাটি আনিয়ে ছিলাম। দুপুর দেড়টার সময় মিনি ট্রাকে করে যখন সার, মাটি ট্রাক থেকে দুইজন লেবার আন লোড করে বাড়ির সামনে রাখছিলো তখন ক্ষমতাবান আমলা তার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। তিনি সিকিউরিটি গার্ডদের কিছু জিজ্ঞেস করেন তারপর তার স্ত্রী নাক চেপে দৌড়ে গাড়িতে উঠে চলে যান....পেছনে আমলা সাহেব।
পুনশ্চঃ আমাদের বর্তমান ফ্ল্যাট ভবনটি ২০০০ সনে নির্মিত। ভবন নির্মাণের আগে যিনি ভবনের জমির মালিক ছিলেন তিনি ডেভেলপার এর সাথে ৫০%-৫০% শেয়ারে ১৬টি ফ্ল্যাটের আবাসিক বিল্ডিং করিয়ে দুইটি ফ্ল্যাট রেখে দেন। নিজের ভাগের বাকী ছয়টি ফ্ল্যাট এককালীন ছয় কোটি টাকায় ডেভেলপারের কাছেই বিক্রি করে দেন। ডেভেলপারের ভাগের ৮টি ফ্ল্যাট এবং একদা ভুমি মালিকের ৬টি ফ্ল্যাট আমরা আটজন ক্রেতা কিনে নেই এবং যারযার ফ্ল্যাটে নিজেরা থাকি এবং অবশিষ্ট ফ্ল্যাট ভাড়া দেই।
'একদা ভূমি মালিক'র মেয়ের গৃহশিক্ষক ছিলেন আলোচ্য আমলা। বৈবাহিক সূত্রে তিনি স্ত্রীর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটা ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। আর আমলা সাহেবের স্ত্রী হচ্ছেন খণ্ডিত জমিদার। ১৬ ভাগের দুই ভাগ জমিদার হয়েও আগের সেই জমিদারী ভাব এখনো যায় নায়। নিজেকে এখনো ষোলো আনা জমিদার ভেবে ড্রাইভার, সিকিউরিটি গার্ড, ক্লিনারদের ডেকে নিষ্ফল আস্ফালন আর হুংকার দেন- "এই বিল্ডিয়ের জমির মালিক আমার বাবা"!
উল্লেখ্য যে, "দেশের সব বড়ো বড় পুলিশ- র্যাব অফিসার, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় আওয়ামী নেতারা আমলা গিন্নীর আত্মীয়"- যা শুনতে শুনতে আমাদের তাচ্ছিল্যতা বেড়ে গিয়েছে (বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি'র সকল মন্ত্রী এমপি রা তাদের আত্মীয় ছিলেন)।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



