কালচারাল জেনোসাইড.......
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা এখনও আমরা ধরতে পারিনি। তাই আসলেই সমাজে কি চলছে তাও ঠাওর করতে পারছি না। প্রকৃত সত্যকে হত্যা করে একমাত্র নিজের বয়ানই 'সত্য' -এই ধারণা যে গোষ্ঠী লালন করে, তাদের হাতে কলম, কী বোর্ড থাকলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, স্যোশাল মিডিয়ার বাইরে বর্তমানে যে বিষয়টি মূল সমস্যা আকারে হাজির হয়েছে তা হলো- কালচারাল জেনোসাইড। হ্যা ঠিক শুনছেন, এখন কালচারাল জেনোসাইড চলছে।
এই জেনোসাইডে অংশগ্রহণ করেছে, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবিরা এবং স্যোশাল মিডিয়ার স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠ ব্লগার নামক এক শ্রেণীর কীট। এই স্রোত জারি করেছে- এই কালচারাল ফ্রন্টের লোকজনই। এটা এতো বিস্তৃত পরিসর যে অনেক মুখোশধারী এই জেনোসাইডেরই গুন্ডা। বিরোধীতাটা এরা করেন এই অবস্থাকে তাদের গুন্ডামী আরও পোক্ত করতে। মহল্লার টং দোকানে রঙ চা খাওয়া আড্ডাবাজ লোকজন আবার এদের মাথায় তুলে নাচেও।
যাহোক, এই কালচারাল জেনোসাইডের প্রভাবেই, এখানে চোরদের বড় গলা শুনতে পাওয়া যায়। প্রকৃত অর্থে যারা চিন্তা করেন, ভিন্নমত ধারণ করেন, তাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিষ্ঠিত কালচারাল গুন্ডাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এরা প্রবল বেগে এই জেনোসাইড চালিয়ে যাচ্ছে। কালচারাল জেনোসাইডকে পুরো বুঝতে হলে একটু ক্রিটিক্যালি পড়তে হবে। চিন্তা করতে হবে।
সহজে কালচারাল জেনোসাইড বলতে বুঝতে পারেন, যখন একটামাত্র মতাদর্শগত অবস্থানের আলোকে সাহিত্য, ঐতিহ্য, মনন ও সংষ্কৃতিকে বিবেচেনা করা হয় এবং সেই ধারাকেই একমাত্র সত্যি বিবেচনা করে বাকিদের সমাজ থেকে ইলিমিনেট করে দেয়া হয় সেই অবস্থাকে বলা যায় কালচারাল জেনোসেইড।
এটাকে ধরাশায়ী করার জন্য শুধু মাত্র রাজনৈতিক বা রেটরিক্যাল বিরোধীতা করে কোন ফল পাওয়া যাবে না। ফটকা বুদ্ধিজীবিতাও কোন কাজে আসবে না। দরকার আরও উন্নত চিন্তা ও মতাদর্শের আলোকে থিওরিটিক্যাল ভায়োলেন্স। এটা করার প্রথম শর্ত হলো বুদ্ধিবৃত্তিক সততা। যা আমাদের দেশে প্রায় শুণ্য। ফলে সরকার বিরোধী বয়ান দিয়ে, ফেবু-ব্লগে লিখে বাজার গরম করা গেলেও ইস্যু শেষ হলে সেই বুদ্ধিজীবিতাও শেষ হয়ে যায়। কারণ এই বিপ্লবীরা ও এই কবি-সাহিত্যিকরাও মূলত কাচারাল ফ্যাসিস্ট। তাদের চিন্তার ভিতর দিয়ে দেশের জন্য কোন সম্ভবনার পথ পরিস্কার হবে না। সেই সব কবির কল্পণায় আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্নের চেয়ে বেশি স্থান পায় ব্যক্তিগত আবেগের বিকার। মর্ডান সেল্ফের ইতরামিকে আবেগময় ও লিবিডাল ইগোর আলোকে লিখিত কবিতা বা গদ্যকে এরা মনে করে মহান সাহিত্য। মহৎ জীবনের ধারণা ও যাপন ছাড়া মহৎ সাহিত্য হয় না। সেই জীবনে যাপনের জন্য করতে হয় বিশাল সংগ্রাম। নিজের সাথে নিজের লড়াইটা শেষ করে নিতে হয়। তা না করার ফলে এইসব ননসেন্স রাইটারে দেশের সংস্কৃতি আজ কলুষিত। এইসব 'মানষিক ফহিন্নী' লেখক, কবিরা গোটা সহিত্যকেই দরিদ্র করে রেখেছে। কিন্তু এটাকেই তারা প্রচার করছে মহান সৃষ্টি হিসেবে। মূর্খতার অহংকার এই জাতির ঐতিহ্য!
ফলে কালচারাল জেনোসাইডের ভেতর যে প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এবং এদের মধ্যে যারা সৃজনশীল চর্চাতে আসছে এরা অন্য যে কোন প্রজন্মের চেয়ে আরও বেশি খচ্চর হিসেবে আর্ভিভূত হচ্ছে। এবং এইসব ইতরামিকেই মনে করছে স্মার্টনেস। এটাই ট্রেন্ডি। ফলে এই কালচারাল জেনোসাইডের বিরুদ্ধে থিওরিটিক্যাল ভায়োলেন্স ছাড়া মুক্তির পথ তৈরি হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নাই। এবং এটা করার জন্য আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তিক সততায় ১০০ ভাগ খাঁটি হতে হবে। পপুলিস্ট, ইগোসেন্ট্রিক ফটকাবাজিতে মজে গেলে হবে না। হতে হবে মেডিটেটিভ। তা না হলে নারসিসিস্টদের দিয়ে কাজের কাজ হবে না। এটার জন্য লম্বা সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। না হলে, এই কালচরাল জোনেসাইড দিন দিন জাতিকে ভিখারির অধম বানিয়ে ছাড়বে। তখন সাধারণ জনতা ও গোলামরা এই নৈরাজ্যর আদর্শকেই বরণ করে নেবে। আর গু নিয়েও করবে গর্ব- দম্ভ ভরে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
(চার বছর আগের লেখা, সামান্য এডিট করে সময়োপযোগী করেছি)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


