somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

Lost for words....

০৩ রা জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Lost for words....

ভৌগোলিক আয়তনে আমাদের দেশটা ছোট হলেও আমাদের দেশের অঞ্চলভিত্তিক ভাষার বিচিত্রিতা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। আমরা অনেকেই আমাদের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে ট্রল করি। ইদানিং আমাদের দেশের বস্তাপচা নাটক সিনেমায় আকছার এই ঘটনা ঘটাতে দেখি অর্ধশিক্ষিত পরিচালক ও শিল্পীদের মধ্যে। অথচ ঢাকা, বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, রংপুর ছাড়াও অনেক জেলায় নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি এবং আঞ্চলিক ভাষার বিশেষত্বের কারণেই তাদেরকে আলাদা করে চেনা যায়।

আঞ্চলিক ভাষাই মাতৃভাষা। তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়ার মত বেদনা আর কিছুতে নেই বোধহয়। মাতৃভাষার মর্যাদা তথা অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের দেশেই। এই ভাষার বিপর্যয় নিয়েই আমাদের পাসের দেশের রাজাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের ছবি "লস্ট ফর ওয়ার্ডস"।

ভারত-ভুটান সীমান্তের নিকটবর্তী একটি গ্রামের প্রায় ১৫৮৫ জন মানুষের বলা ভাষার নাম 'টোটো'। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী টোটোরা তাদের নিজস্ব টোটো ভাষায় কথা বলে। ইউনেস্কো টোটো ভাষাকে বিপদের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উত্তর বঙ্গের টোটো প্রজাতির ভাষা কী ভাবে অর্থনৈতিক চাপে দিনকে দিন হারাতে বসেছে....তাই নিয়েই এই তথ্যচিত্র "লস্ট ফর ওয়ার্ডস"।
এই তথ্যচিত্রে ফুটে উঠেছে উত্তরবঙ্গের অপূর্ব প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, টোটোদের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু দৃশ্য আর তাদের লোকগান। পাহাড় জঙ্গলের গায়ে ধাক্কা খেয়ে সে গান এসে আঘাত করে দর্শকের বুকের ভেতর! বহু পরিশ্রমে নির্মিত হয়েছে ছবিটি; এ-ও যেন ভবিষ্যতের একটুকরো ইতিহাস।

ডকুমেন্টারি ফ্লিম 'লস্ট ফর ওয়ার্ডস' টোটোদের অস্পষ্ট ভাষার উৎপত্তি অনুসন্ধান করে এবং টোটো ভাষাভাসীদের সংস্কৃতির উপর প্রতিফলিত করে নির্মিত। বৃটিশ শাসন অবসানের পর ছোট ণৃ-গোষ্ঠীদের এপর্যন্ত প্রায় ১৫০ টি ভাষা উপমহাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে।

বিবিসি বাংলা চ্যানেলে একটি ডকুমেন্টারি/ফিচার ফ্লিম হিসেবে আমি সিনেমাটি দুইবার দেখেছি। প্রথমবার সিনেমার মধ্যবর্তী অংশ থেকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তারপর অনেকদিন অপেক্ষা করেছি- পূণঃপ্রচার কবে হবে সেই আশায়। অবশেষে প্রায় তিন মাস পর পূণঃপ্রচারিত ফিচার ফ্লিমটি দেখার সুযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যেই গুগল ঘেটে Lost for words এর উপর অনেক তথ্যউপাত্য সংগ্রহ করেছি। আমার মতে এটা উপমহাদেশের এবং আমাদের দেশেরও উপজাতি সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। ভাষা হল অভিব্যক্তির অন্যতম মৌলিক নির্দেশক, পরিচয়ের মানদন্ড। মানুষ সেই প্রয়োজনেই চালিত হয়, সে গুহাশিল্প বা সিম্ফনি বা দর্শন বা বিজ্ঞানের আকারেই হোক। আজ এই মৌলিক পরিচয় এই বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। যথারীতি এর পেছনের মূল ফ্যাক্টর হচ্ছে অর্থনীতি। পরিচালক এই সমগ্র সংগ্রামের নথিভুক্ত করার একটি অসামান্য কাজ করেছেন। তথাকথিত আধুনিক সভ্যতা আর ভূমির মানুষ, আদিবাসীদের অস্তিত্বের সংগ্রাম অসাধারণ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।

টোটো লোকেদের জীবন ও ভাষা নিয়ে তাঁর কাজ আগামী প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্র প্রমাণ হিসেবে থাকবে।
ছবির শুরুতেই বলা হয়েছে- 'ধনিরাম টোটো প্রথম টোটো উপন্যাস রচনা করেন। এই ভাষায় কোন বর্ণমালা ছিল না। ধনিরাম টোটো "টোটো বর্ণমালা আবিষ্কার করেন ২০১৪ সালে"। তিনি ফোনেটিক্স, ভাষাতত্ত এবং প্যালেওগ্রাফি সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন।'
একদল মানুষ যখন এমন ভাষায় কথা বলে যার বর্ণমালা নেই, তখন ধনিরাম বলে, "একমাত্র তারাই বুঝবে এটা কতটা কঠিন হতে পারে। মানুষ গুলো বাঁচবে কি করে? দার্শনিকরা কি জানেন না যে ইংরেজি শিখলেও তরুণ প্রজন্মের চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না। টোটো এদের চাকরি খুঁজে দেবে কিনা জানিনা, তবে বেঁচে থাকারই ব্যাপার।"

ছবির পরিচালক ব্যাখ্যা করেন, এই চলচ্চিত্রটি টোটো ভাষার উপর নির্মিত হলেও ভাষাটি আমাদের বৈচিত্রের একটি উপস্থাপনা। এগুলো আমাদের জীবনের উদাহরণ এবং বিশ্বায়ন বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তিব্বত থেকে আগত একটি ছোট্ট গ্রামের কিছু মানুষের মুখের ভাষা বিলুপ্ত করা।
জীবন জিবিকা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে, এদের কেউ কেউ মূল ভূমি ছেড়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হয়। এই ভাষা একটি সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ভাষাকে ক্ষুব্ধ করার হাত থেকে বিরত রাখতে ধনিরাম টোটো, সত্যজিৎ টোটো, এবং বিপ্লব নায়ক যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। মাতৃভাষাকে রক্ষা করার সংগ্রামকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য এই চলচিত্রটি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×