গুরুপূর্ণিমা কি.......
গুরু পূর্ণিমা কি, কেন পালিত হয়?
জীবনে গুরু বা আচার্যের স্থান কি এবং কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
গুরুপূর্ণিমা সনাতন হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুসারে পালিত একটি গুরুমূলক উৎসব, যাতে শিবের রূপে জগতের সমস্ত আচার্য দের "গুরু পূজা" সম্পন্ন করা হয়।
প্রাচীন আর্য সমাজে শিক্ষক বা গুরুর স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল‚ বোঝা যায় যখন ছাত্র-শিক্ষক বা গুরু-শিষ্য পরম্পরাকে সম্মানিত করতে একটি দিন উৎসর্গ করা হয়। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় অন্য কোনও সম্পর্ক এতটা গুরুত্ব পেয়েছে কি না সন্দেহ। গুরু বা শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই পালিত হয়ে আসছে গুরুপূর্ণিমা। আজ‚ শিক্ষক দিবসের আড়ালে অনেকটাই ম্রিয়মাণ এই তিথি। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা‚ যাকে বলা হয় ‘গুরুপূর্ণিমা‘।
সংস্কৃতে ‘গূ‘ শব্দের অর্থ হল অন্ধকার। গুরু শব্দের মানে হল যিনি অন্ধকার দূর করেন। শিক্ষক বা গুরু আমাদের মনের সব সংশয়‚ সন্দেহ‚ অন্ধকার‚ জিজ্ঞাসা দূর করেন। নতুন পথের দিশা দেখান। তমসা থেকে জ্যোতির্ময়ের পথে চালিত করেন গুরু।
হিন্দিতে একটা প্রবচন আছে‚
‘গুরু গোবিন্দ দুয়ো খাড়ে‚ কাকে লাগু পায় / বালিহারি গুরু আপনে যিন গোবিন্দ দিয়ো বতায়ে’।
অর্থাৎ‚ এমন একটা পরিস্থিতি‚ যখন গুরু এবং গোবিন্দ বা ঈশ্বর দুজনেই সামনে দাঁড়িয়ে আছেন‚ আমি কাকে প্রথম পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করব? তার পরের লাইনেই আছে সমাধান। যদি ঈশ্বর এবং গুরু দুজনে সামনে থাকেন‚ আগে গুরুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবে, কৃতজ্ঞতা জানাবে। কারণ তিনিই আমাদের ঈশ্বরকে চেনান।
বৌদ্ধ ধর্মেও গুরুপূর্ণিমার গুরুত্ব অসীম। বলা হয়‚ বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় প্রথম উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। আবার হিন্দু পুরাণে আছে শিবের মাহাত্ম্য। মহাদেব হলেন আদি গুরু। তাঁর প্রথম শিষ্য হলেন সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি- অত্রি‚ বশিষ্ঠ‚ পুলহ‚ অঙ্গীরা‚ পুলস্থ্য‚ মরীচি এবং ক্রতু (নাম নিয়ে মতভেদ আছে)। আদিযোগী শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন। তিনি এদিন ওই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই‚ এই তিথি হল গুরুপূর্ণিমা।
ভারতের অনেক জায়গায় গুরুপূর্ণিমাকে মহাঋষি বেদব্যাসের জন্মতিথি হিসেবেও মানা হয়, যদিও তিনি ছিলেন ঋষি পরাশর এবং মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর জারজ সন্তান। জন্মের পরে তাঁকে পরিত্যাগ করেন জন্মদাত্রী সত্যবতী। এই অবৈধ সন্তানই মহাঋষিতে পরিণত হন। সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করেন চতুর্বেদের ১৮ টি পুরাণ। এছাড়াও রচনা করেন মহাভারত এবং শ্রীমদ্ভগবৎ। বলা হয়‚ আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই জন্ম হয়েছিল ব্যাসের।
প্রাচীন সভ্যতার মূলে থাকত চন্দ্র সূর্যের অবস্থান। তাই‚ পূর্ণিমা অমাবস্যাকে ঘিরে আবর্তিত হত বিভিন্ন পালা পার্বণ। গুরু পূর্ণিমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে প্রবর্তনের পিছনে যে কারণই থাক না কেন‚ এর উদ্দেশ্য আচার্যকে সম্মান প্রদান করা।
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের এই তিথির আদর্শ শ্লোক হলঃ
‘গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু‚ গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ
গুরুরেব পরং ব্রহ্মম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ‘-
অর্থাৎ জীবনে গুরুই হলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর । তিনিই আমাদের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের জ্ঞান বা পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন।
(আমাদের একজন প্রতিবেশী আছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী, উচ্চশিক্ষিত পরিবার এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত। এই পরিবার বেশ ঘটা করে গুরু পূর্ণিমা পালন করেন। দুই দিন আগে গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিবেশীদের বাসায় বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি দিয়েছেন। সেই প্রতিবেশি দাদার কাছেই গুরু পূর্ণিমা সম্পর্কে জেনেছি এবং গুগল ঘেটে কিছু তথ্যসূত্র যোগাড় করে আমি আমার মতো করে লিখেছি)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




