somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন রকম খাবার এনে খাওয়াতেন। আমি যখন ক্লাস থ্রি কিম্বা ফোরে পড়ি তখন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের 'বড়ো দিন' উৎসব উপলক্ষে মামার সাথে হোটেল শেরাটনে গিয়ে প্রথম 'বোতলজাত পানি' দেখি। মামা বলেছিলেন - এই বোতল বন্দী পানি ফ্রান্স থেকে আমদানি করা, নামটা সঠিক মনে নেই তবে যতদূর মনে পরে সেই পানি 'এলি'/'এভিয়ান' ব্রান্ডের। স্বাধীনতার পর বোতলবন্দী পানির প্রচলন কিছুটা বাড়লেও তাও ছিলো বিদেশ থেকে আমদানি করা- যা ধনাঢ্যরা পান করতো। প্রসঙ্গত আমি সেই বোতলজাত পানির গল্প করেছিলাম আমাদের গৃহশিক্ষক বিশ্বেস্বর মন্ডল স্যারের সাথে....বড়ো চাচার বাল্যবন্ধু এবং সহপাঠী বিশ্বেস্বর মন্ডল স্যারকে আমারা 'কাকু' ডাকতাম। তিনি শুধু আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারের কাজীনদের গৃহশিক্ষকই ছিলেননা, আমাদের অভিভাবকসম পরম সুহৃদ স্বজন ছিলেন।

বিশ্বেস্বর মন্ডল কাকু সেই বৃটিশ আমলে মেট্রিক পাশ করে পুরনো ঢাকার নবকুমার ইন্সটিটিউশনে শিক্ষকতা শুরু করেন। অন্যদিকে গৃহশিক্ষকতা এবং আমাদের পরিবারের সুহৃদ হিসেব তিনি আমাদের ইংরেজি বাংলা অংক সবই পড়াতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন দার্শনিক টাইপের মানুষ। আমার কাছে বোতলজাত পানির কথা শুনে বললেন, 'অদূর ভবিষ্যতে ওই রকম বোতলবন্দী পানি পয়সা দিয়ে সাধারণ মানুষেরও কিনেই তৃষ্ণা নিবারন করতে হবে!' এই কথা শুনে আমরা সবাই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। ছোট চাচা অট্টহাসি হেসে বলেছিলেন- 'পাগলের প্রলাপ! পানির দেশের মানুষ পানি কিনে খাবে!'



মাত্র ৪০/৫০ বছর পর আজকে প্যাকেজড মিনারেল/ ড্রিংকিং পানির চাহিদা নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন সবাই। আপনি আমি আমরা বোতলের পানি শুধু খা-ই না, পানির বোতল কেনার আগে পানিতে কি কি মিশ্রণ আছে সেটাও ভালো করে পড়ে দেখে কিনি। এখন একজন দিনমজুর-রিকশাওয়ালাও হোটেল রেস্টুরেন্টে বোতলের পানি নাহলেও ফিল্টারের পানি দুই টাকায় এক গ্লাস কিনে খায়।

এখন যদি আমি বলি আরও ৫০ বছর পরে বাতাস কিনতে হবে- কি বলবেন আপনারা?
'পাগলের প্রলাপ'- তাইতো?

আমরা, যারা বয়সে ৬০ এর কোটা পেরিয়ে এসেছি, তারা ওই দিনটা দেখার সুযোগ পাবোনা; কিন্তু এটাই বাস্তব। অদূর ভবিষ্যতে বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি এমন জায়গায় পৌঁছবে সবাইকে ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে হবে- অক্সিজেন ব্যাগ, যার পোষাকী নাম হবে ''ওটু ব্যাগ' বা 'অক্সিজেনেটেড এয়ার ব্যাগ'। এখন যেমন হয় সোনার চোরাচালান, তখন হবে বিশুদ্ধ পানি আর অক্সিজেনের চোরা চালান। গাড়ীগুলো হবে শুধু এসি নয়, অক্সিজেনেটেড এসি কার। বাড়ি, অফিস, মল, বিনোদন হলগুলোতে থাকবে সেন্ট্রালি অক্সিজেন জেনারেটিং সিস্টেম/ প্ল্যান্ট। কিন্তু এসব কাদের জন্য? আর হ্যা, 'মেডিক্যাল অক্সিজেন ব্যাগ' বহু বছর যাবতই ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও একটু এগিয়ে যাই- ধরুন এই শতকের শেষ দিকটা, যখন পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে তের বিলিয়ন (গতকালই পত্রিকায় পড়েছি এখন ৭.৬ বিলিয়ন+ প্রতি ১৫ বছরে ১ বিলিয়ন বাড়ছে- সেই হিসাবে এই শতাব্দীতেই পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ৮০০ কোটি)। অথচ প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রেখে পৃথিবীর জন- ধারন ক্ষমতা তো মাত্র ৯ থেকে ১০ বিলিয়ন।
তখন?

তখন খাদ্যের জোগান কমে এমন একটা পর্যায়ে পৌছবে যখন রসিয়ে রসিয়ে চর্ব্ব চোষ্য রান্না করে খাওয়ার দিন শেষ হবে। কারন তখনতো পৃথিবীতে সবুজের চিহ্নই থাকবেনা, থাকবেনা কোন বন্য পশু পাখি। গবাদি পশুও থাকবেনা জলাভাবের ও সবুজাভাবের কারনে। দু একটা যুদ্ধ হবে শুধুমাত্র পানীয়জলের দখল পাওয়ার জন্য। তবু মানুষ বেঁচে থাকবে- খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কিনতে হবে 'ফুড্ পিল্' - গবেষনাগারে তৈরী শারিরীক চাহিদা পুরনের জন্য তৈরী কৃত্রিম খাদ্য-ট্যাবলেট!

এটাও 'পাগলের প্রলাপ'- তাইনা?
কিন্তু যদি শেষের সে ভয়ংকর দিন আসে, কারা পারবে ওসব কিনতে?

এর পরেও মানব সভ্যতা(?) টিকে যাবে বিজ্ঞান- প্রযুক্তির হাত ধরে। তৈরী হবে মহাশূন্যে কৃত্রিম পৃথিবী।অন্য গ্রহে বসতি স্থাপন হবে। ৫০০০ বছর পরে উষ্ণায়নের জেরে যখন ভূ-মন্ডলের সমস্ত জমা বরফ গলে মহাপ্লাবনে ডুবে যাবে পৃথিবীর সব স্থলভাগ, তখন তৈরী হবে ভাসমান কৃত্রিম পৃথিবী- যেখানে মানুষ বেঁচে থাকবে। হাঁ, একমাত্র মানুষই থাকবে- আর কেউ না।কিন্তু এত লোককেতো কৃত্রিম পৃথিবীতে স্থান দেওয়া যাবেনা, তাহলে কারা হবে সেই ভাগ্যবান?
এটা নির্দ্ধারনের জন্য হবে বিশ্বযুদ্ধ। জোর যার, মুল্লুক তার। বাকিরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে চিরতরে। গরীব, মধ্যবিত্ত দেশগুলোতো বিশ্বের বোঝা- কি দরকার ওদের বেঁচে থাকার?

এটাও পাগলেরই প্রলাপ!
আরে বাবা, এখন থেকে এত ভাবার কি দরকার? আমার, পরের আরো পাঁচশো টা জেনারেশন তো ওই দিনটা দেখার জন্য বেঁচে থাকবেনা, তাহলে?

খাও দাও নিশ্চিন্তে ঘুমোও। বংশবিস্তার চলুক। চলুক অরন্য ধ্বংস, বন্য পশু-পাখি নিধন, কংক্রীটের আর প্লাস্টিকের চাদরে ঢেকে ফেলি মৃত্তিকা। আকাশ-বাতাস- নদীনালা দুষিত করে চলি, নদীর স্বাভাবিক গতি রোধ করে তৈরী হোক বড়বড় ড্যাম।উন্নয়নের দোহাই দিয়ে জলাভূমি ভরাট করে উঠুক বহুতল আবাসান আর অফিস ভবন। পৃথিবীর গর্ভ খুঁড়ে- ছিঁড়ে লুটে নিই আকরিক। আপনার পয়সা আছে, তাই পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্যের বস্ত্রের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের অধিকার আপনার আছে। নিজের পয়সা দিয়ে কিনছেন, কারো বাপের পয়সায় নয়- কাজেই ধ্বংস করার ক্ষমতা ঠেকাবে কে!

আমার এই কথা শুনে হয়তো অনেকেই বলবেন-"কবে কি হবে সেসব মাথায় ঢুকিয়ে সুখ-নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন কেন? পাগল কোথাকার"

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খালেদার ১টি প্ল্যান ছিলো, মহা-ডাকাতের ১টি প্ল্যান আছে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২৩



২০১৪ সালের ভোটের আগে খালাদা বলেছিলো যে, তার কাছে ১টা প্ল্যান আছে, যা ১ বছরের মাঝে বেকার সমস্যা ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করে দিবে। তিনি প্ল্যানটি প্রকাশ করেননি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোর কথা তুই লিখে সত‍্যতা প্রমান কর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১



ব্লগ মনে হয় কারো কারো বাপ দাদার জমিদারি হয়ে গেছে। সব পোস্ট দালাল , রাজাকার, জঙ্গিদের অথবা লালবদরদের স্বপক্ষে হোতে হবে। সত‍্যের আগমনে মিথ্যা বিস্মৃতির অবসান হয় ।আদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×