somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

দুঃখবিলাস.....

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুঃখবিলাস.....

ঢাকা থেকে সাভার-বিরুলিয়া গিয়েছিলাম একটা রেন্টাল কারে... যেতে যেতে ড্রাইভার হাসানের সঙ্গে আলাপ৷ তরুণ৷ কত বয়স হবে? বছর পঁচিশ কিম্বা আটাশ৷ তাঁর গাড়িতে তখন গান চলছে- ‘দুঃখ আমাকে দুঃখী করেনি, করেছে রাজার রাজা’৷

তারপর- 'যে ক্ষতি আমি নিয়ে ছিলাম মেনে সেই ক্ষতি পূরণ করতে কেন এলে কি খেলা তুমি নতুন করে যাবে.......'

'কী ব্যাপার? আপনি এই বয়সে এত দুঃখের গান শোনেন কেন?'- উত্তরে ড্রাইভার হাসান যা বলে, তা শুনে চমকে যাই!
'‘মানুষ মাত্রই দুঃখী। -"এই জীবনের বেশিটাই দুঃখ/তবু একটু সময়ের জন্য/ যদি দুঃখ ভোলাতে পারে কোনও গান/ সে গান আমার হবে ধন্য"- এটাও একটা গানের লিরিকস।

খোঁজ নিয়ে জানলাম, এফএমের গান নয়৷ পেন ড্রাইভে লোড করে এনেছে এ সব গান৷ নিজের পছন্দ করা৷ গান ভালোবাসে৷ গান বাছাই করার জন্যই কম্পিউটার শিখেছিল৷ অশ্রান্ত গান শুনে যায়৷ তাঁর গাড়িতে একটা গান থামতে আর একটা গান বেজে ওঠে......

আমার মতো একজন ভালো শ্রোতা পেয়ে হাসান বলে- ‘স্যার, দুঃখ না থাকলে স্বপ্ন দেখা যায় না৷ দুঃখ থাকলেই লোকে স্বপ্ন দেখে’

–মানে?

হাসান ফার্স্ট গিয়ারে হাতটা নামিয়ে পিছু তাকায়, ‘দুঃখ আছে বলেই তো স্বপ্ন৷ স্যার, বি এ পাস করে একটা চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি- চাকরি পাইনি। গরীবের ছেলে, গ্রামে ছোটখাট ব্যাবসা করার জন্য হাজার দশেক টাকার পুঁজিও যোগাড় করতে পারিনি। মালিকের গাড়ি চালাই৷ আমি তেল চুরি করিনা, কিন্তু মালিক ভাবে আমি তেল চুরি করি! দুঃখ আর জেদ আছে বলেই আশা, একদিন আমার নিজের একটা ট্যাক্সি হবে৷’

কথাটা বুকে খুব বাজে৷ ‘দুঃখ না থাকলে তো স্বপ্ন দেখা যায় না৷ দুঃখ থাকলেই লোকে স্বপ্ন দেখে৷’- অপ্রামাণ্য-প্রমাণ নেই কথাটার৷ কিন্তু আগে তো ভাবিনি কোনওদিন....ভাবতে ভাবতে মনে হয়, 'দুঃখবিলাসী' হয়ে গেলাম! আমার বন্ধু দেবনাথ আমায় বিদ্রুপে ডুবিয়ে দিত, ‘তুমি বড্ড দুঃখবিলাসী৷ কথায় কথায় শুধু দুঃখ৷’! দুঃখ পেলেও লোকেরা তাহলে স্বপ্ন দেখতে পারে!

সাভারের বিরুলিয়ায় কাজ সেরে হাসানকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে এবার ঢাকার পথে...

জ্যাম ঠেলে ঠেলে গাড়িতে যেতে যেতে আমি আমার প্রিয় দুঃখের গানগুলোর কথা ভাবতে থাকি৷ নাম ভুলে যাওয়া একটা নার্সিংহোমের সামনে মোবাইল হাতে উত্তেজিত গর্বোজ্জ্বল তরুণ৷ তার কী দুঃখ?

হেমায়েতপুর বাজারের সামনে অটো ড্রাইভারের সঙ্গে ঝগড়ায় নিমজ্জিত মধ্যবয়স্ক- তাঁর কী দুঃখ?

বাজারের মুখে সব্জির স্ত্তপ সাজিয়ে গ্রামীণ ক্লিষ্ট বৃদ্ধ লোকটা- তাঁর কী দুঃখ?

ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদের সামনে বহু বছর যাবত এক বৃদ্ধ আর বৃদ্ধাকে ভিক্ষে করতে দেখি- তাঁদের কী দুঃখ?

ভাবতে ভাবতে মনে হয়, আবার দুঃখবিলাসী হয়ে গেলাম!

বিকেল গড়িয়ে আসে। আকাশে উড়ছে বেশ কিছু ঘুড়ি৷ যে কিশোররা একনিষ্ঠ অনন্যমনা হয়ে ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন ঘুড়ি ওড়ায়, তাদেরও কি মনে রয়েছে কোনও দুঃখ? ওরাতো আরও স্বপ্ন দেখবে বেশি করে৷ ওদের তো দুঃখ কম, স্বপ্ন বেশি হওয়া উচিত৷ এখানে তো দুঃখের সঙ্গে স্বপ্নের সম্পর্ক তৈরি হয় না৷

সামনের সিটে বসা হাসানকে প্রশ্ন করি৷ শুনে মিটিমিটি হাসে৷ যেন কোনও দেবদূত, উত্তর মুখে লেগে আছে৷ হাসান বলে, ‘ওই বাচ্চাদেরও দুঃখ আছে৷ থাকতেই হবে৷ দেখুন না, ঘুড়ি কাটা গেলে কেমন কাঁচুমাচু হয়ে বসে থাকে৷ ওদেরতো আরও বেশি দুঃখ৷’

দুঃখ কোথায় নেই?

কত ঘুড়ি উড়ছে আকাশে৷ উড়তে উড়তে একটা কেটে যায়৷ নামতে থাকে নীচে৷ স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ার মতো৷ অনন্ত আকাশে হারিয়ে যাচ্ছে দুঃখের ঘুড়ি৷

চেনা লোক গুলো অচেনা হয়ে গেছে। তাই;
চেনা পথ ছেড়ে অচেনা পথ ধরি
চেনা মানুষ দেখলেই দূরে ছুটে পালাই....


I don't understand you... I can't explain my pains...U Can't Translate Everything......সত্যিই, সব কিছুর অনুবাদ হয় না। সুর, স্থাপত্য, ভাষ্কর্য, নৃত্য- এসবের উপলব্ধি পার্থিব অস্তিত্বে এক। এদের ভাষা নেই, তাই ভাষার অনুবাদের গণ্ডিও নেই। এসবের আছে দৃশ্যানুবাদ আছে শ্রবণানুবাদ(দৃশ্যানুবাদ ও শ্রবণানুবাদ শব্দ দুইটা আমি নিজে নিজেই বানিয়েছি- আশা করি বাংলা ভাষায় পণ্ডিত কেউ ভুল ধরবেন না)।

কিন্তু কষ্ট সুখ ভালোবাসা এর কী ব্যাখ্যা আছে- কেউ বলতে পারবেন?

আমি যন্ত্রণা জমিয়ে রাখি সুখদিনে সঁপে দেব ভেবে।
মাঝে ভুল হলে শুরু হয় অসুখের আনাগোনা। ফিরে পাওয়া অতঃপর হয় না জন্মদাগে। শূন্যতার ঈশানকোণে পূর্ণতায় হেঁটে যাওয়া পথটাকে দেখি।

আমাকে সে জানে আমার থেকে কিছু বেশি…

এই যাঃ! মনে আবার যে উপচে উঠল দুঃখের কাশফুল!

আমাদের গ্রামের বাড়িতে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুটো দীর্ঘ তালগাছ৷ খুব পাশাপাশি৷ সুখী দম্পতির মতো৷ চোখাচোখি৷ তাঁদেরই হয়তো শুধু দুঃখ নেই৷ স্বপ্নও নেই৷ একটা জায়গায় স্থানুবৎ হয়ে দাঁড়িয়ে দুই বেচারা৷ একাকী দুইজন৷ আমাকে একজন বলেছিলেন- "তোমার বাড়ির সামনে আমার জন্য দুটো তালগাছ লাগিও...."- আমি সাভার বিরুলিয়া এলাকায় আমার জমিতে তার জন্য দুটো তালগাছ লাগিয়েছিলাম- সেই তালগাছ এখন বেশ বড় হয়েছে। কিন্তু সেই কথা রাখেনি.....
বৌদ্ধত্বের কামনায় তুমি তোমার যৌবন ছেড়ে চলে গিয়েছিলে....
আমি তোমার ক্ষিদের সামনে তুলে ধরলাম পরমান্ন,
তুমি শিশু হয়ে গেলে...
তারপরে বাকি যা, সেসব ছেলেখেলা.........


হাসানের গাড়ি থেকে এবার নামার পালা৷ শুনি কোনও নতুন গান বাজছে গাড়িতে, ‘দুঃখ আমার, তোমায় আমি যে ভালোবেসেছি/স্বপ্ন তুমি, সত্যি আমি/এক হতে চেয়েছি৷’
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৭


গত মে মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফটোকার্ডে দেখানো হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাম্বার পরবর্তী অধ‍্যায় ,নাকি ১০% বদল হবে‼️অমি খোয়াব ভবনে ঘুমিয়ে , হাওয়া ভবনের আতঙ্কে আতঙ্কিত॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৮



খালেদা জিয়ার অসুস্থতার নাটক ছিল তারেক জিয়ার দেশে ফেরার রাজনৈতিক ট্রাম্পকার্ড। কথায় আছে,' দুষ্টু লোকের মিষ্টি ভাষা '। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দূর্নীতিবাজ ও মাফিয়া গডফাদার তারেক রহমানের দেশে ফেরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদার ১টি প্ল্যান ছিলো, মহা-ডাকাতের ১টি প্ল্যান আছে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২৩



২০১৪ সালের ভোটের আগে খালাদা বলেছিলো যে, তার কাছে ১টা প্ল্যান আছে, যা ১ বছরের মাঝে বেকার সমস্যা ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করে দিবে। তিনি প্ল্যানটি প্রকাশ করেননি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×