প্রেমিক হিটলার.....
অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করবেন না যে, কুখ্যাত নাৎসি বাহিনীর জনক এডলফ হিটলার তাঁর প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সংগীতের সমঝদার ছিলেন, ভালো ছবি আঁকতেন আর পাশাপাশি স্টেফিনি আইজাক নামে এক ইহুদি রমণীর গভীর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন। যার হাত লক্ষ লক্ষ ইহুদিসহ সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত সেই হিটলার তাঁর প্রথম জীবনে কোনও ইহুদি রমণীর কাছে হাঁটু গেড়ে প্রণয় ভিক্ষা করছেন তা ভাবতেও অবাক লাগে বৈকি! গ্রিনহিল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত, হিটলারের দীর্ঘ সময়ের বন্ধু অগস্ট কুবিজেকের স্মৃতিচারণমূলক ‘দি ইয়ং হিটলার আই নো’ গ্রন্থটির প্রতিটি পাতায় আশ্চর্যরকম এই তথ্যগুলো চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে।
লেখক অগস্ট কুবিজেক সম্পর্কে এখানে দুটো কথা আগেই বলে রাখা দরকার। ভিয়েনা একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ ভর্তি হতে গিয়ে হিটলার যখন ব্যর্থ হন, ঠিক তখনই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীতের ছাত্রী কুবিজেকের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। পাঠক ভাবুন, হিটলার যদি সেই সময় একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ ভর্তি হতে পারতেন তাহলে আজকের পৃথিবীর এই ইতিহাস হয়ত অন্যরকমভাবে লেখা হতো। বলাই বাহুল্য যে, শিল্পকলায় ভর্তি হতে না পারলেও কুবিজেকের সঙ্গে হিটলারের বন্ধুত্ব ছিল গভীর। কুবিজেক নিজেই বলেছেন সে কথা, ‘আমার জীবনের একমাত্র বন্ধু, সে হলো এডলফ।’
তবে শিল্পকলায় ব্যর্থ হলেও প্রেমিক হিসেবে হিটলার কখনও ব্যর্থ হতে চান নি। বন্ধু কুবিজেকের কাছে বিভিন্ন সময় প্রেমিকা স্টেফেনির সম্পর্কে হিটলারের মন্তব্য থেকেই এ প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯০৫ সালে বসন্তের শেষদিকে হিটলার এবং কুবিজেক যখন লিঁজের লান্ডস্ট্রেসে শহরে ভ্রমণে ব্যস্ত তখনই কুবিজেককে তিনি বললেন কথাটা-'তোমাকে একটা কথা জানাতে চাই। আমি স্টেফেনির প্রেমে পড়েছি। তার চোখগুলো মায়াবী, উজ্জ্বল আর আকর্ষণীয়। তার চোখের রং নীল, সোনালি চুলগুলো ঢেউয়ের মতো কাঁধের দুপাশে যেন আছড়ে পড়ছে, তার পোশাক, কথা-বার্তা আর চালচলন সবকিছু বলে দেয়, সে নিশ্চয়ই ভালো কোনও পরিবারের মেয়ে।’—সত্যিই তাই। এক উচ্চবিত্ত পরিবারেই স্টেফেনির জন্ম। বিধবা মা আর একমাত্র ভাইকে (ভিয়েনায় আইন শাস্রে পড়াশোনা করছে) নিয়ে ওরফার শহরে ছিল তাদের বসবাস। স্টেফিনির বন্ধু-বান্ধবদের প্রায় সবাই ছিল উচ্চপদস্থ আর্মি অফিসার। এই বিষয়টাকে হিটলার কখনওই ভালো চোখে দেখতে পারেন নি। বন্ধু কুবিজেকের কাছে এ নিয়ে তার নিত্য অভিযোগ, ‘এই মাথামোটা আর্মি লেফটানেন্টগুলো কিভাবে যে স্টিফেনির বন্ধু হতে পারে এই বিষয়টা আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারি না।’
ক্লাবে নাচ-গান একদম পছন্দ করতেন না হিটলার। বন্ধু কুবিজেককে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাতালদের চিৎকারে এখানে কোনও গান শোনা যায় না, ঠিকভাবে হাঁটাচলা করা যায় না। এই পার্টিতে আসা লোকগুলোর মগজ বলতে কি কিছু আছে? স্টিফেনি যদি কখনও আমার বউ হয় তখন এই বিষয়ে তাকে কঠোরভাবে নিষেধ করব।’
হিটলার যখন স্টেফিনির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন তার বয়স ছিল মাত্র ষোল। বয়স কম, মাথা গরম আবার প্রেমিকাকে হারাবার ভয়ে তিনি ছিলেন সবসময় আতংকিত। মানসিক অস্থিরতা ও টানাপোড়েনের এক পর্যায়ে হিটলার পরিকল্পনা করেছিলেন, তিনি তার প্রেমিকাকে কিডনাপ করবেন। পরিকল্পনাটা ছিল এইরকম, হিটলার স্টেফিনিকে কিডনাপ করবেন। আর কুবিজেক—স্টিফেনির মাকে হিটলারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে রাজি করাতে কথাবার্তা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু পরিকল্পনাটা ভেস্তে যায়। আর হিটলার বেছে নেন আত্মহত্যার এক অভিনব পথ। আত্মহত্যার পরিকল্পনা বিষয়ে হিটলার কুবিজেককে বলেন, ‘দানিয়ুব ব্রিজের ওপর থেকে আমি নদীতে ঝাঁপ দিব। আর হ্যাঁ, আমি একা নই, আমার সাথে স্টেফেনিও ঝাঁপ দিবে এবং আমরা দুজনেই একসাথে মরব। তারপর সব শেষ, সবকিছুর শেষ।’
প্রেম নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণেই হোক অথবা অন্য কারও প্রতি আসক্তি থেকেই হোক- হিটলারের সঙ্গে ধীরে ধীরে একটা দূরত্ব তৈরি করেন স্টেফেনি। দূরত্বের এক পর্যায়ে স্টিফেনি তারই বন্ধু এক আর্মি অফিসারকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ভিয়েনায় চলে যান। হিটলারের আত্মজীবনীকারদের অনেকেরই ধারণা, ইহুদি নারীর কাছ থেকে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় সেই তরুণ বয়স থেকেই হিটলার ইহুদি নিধনের এক কঠিন শপথ নিয়েছিলেন। অন্তত অগস্ট কুবিজেকের ‘দি ইয়ং হিটলার আই নো’ বইটিতে সে কথাই যেন বারবার উচ্চারিত হলো।
(চার বছর আগের লেখা)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




