দুঃখ কষ্ট যশ খ্যাতির আর এক নাম চার্লি চ্যাপলিন...
চার্লি চ্যাপলিন। পৃথিবীর চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন মহান হৃদয়ের মানুষ আর আসেননি। স্বয়ং সত্যজিত রায়ের মতে- "পৃথিবীর চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি চার্লি চ্যাপলিন"।
অথচ বুকের ভেতর কি গভীর বেদনা নিয়ে মানুষটি হাসিয়ে গেলেন সারাজীবন!
গতকাল নির্ঘুম গভীর পর্যন্ত আবারও চার্লির জীবনী পড়ছিলাম। আমার জীবনে সবচেয়ে বেশীবার পঠিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর জীবনী। আবার চার্লির মত কিছু প্রিয় মানুষের জীবনীও বারবার পড়ি। তখন ভাবি, এ জীবনে কত বিখ্যাত মানুষ কত দুঃখ পেয়েছেন! অথচ আমরা শুধু নিজেদের দুঃখকেই সবসময় বড় করে দেখি।
চার্লির জীবনের কত উক্তিই তো সে কথা বারবার স্মরণ করে দিয়েছে আমাদের। তা পড়ে মন আমার ব্যথায় ভরে ওঠে। তখন আমার তারাশঙ্করের বিখ্যাত উপন্যাস "কবি" র সেই উক্তি/গান মনে পড়ে...
"এই খেদ রয়ে গেল মনে, ভালবেসে মিটিল না আশ... হায়! জীবন এত ছোট কেনে"!
জীবন নিয়ে এত ভালো দর্শনের কথা খুব কমই পড়েছি।তাই চার্লির কথা কোন তত্ত্ব কথা নয়, শুধু ভালেবাসার কথা। জীবনের কথা।
চার্লি চ্যাপলিনের (১৮৮৯- ১৯৭৭) জীবনটাই ধরা যাক না। শৈশব থেকে চরম দারিদ্র। বাবা ছেড়ে চলে গেছেন।
অসুস্থ মা ই তাঁর জীবনের একমাত্র আশ্রয়। মানসিক রোগী।
মাত্র নয় বছর থেকে চার্লি নানা কর্মশালায় কাজ করেছেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে কমেডি অভিনয় দিয়ে মঞ্চে অভিনয় শুরু।
সব পেটের দায়!
তারপর নজরে পড়ে গেলেন সিনেমা জগতের দিকপালদের। প্রতিভা আর ফুলের সৌরভ কি কখনও কি লুকিয়ে রাখা যায়? তাই হল চার্লির জীবনে।
হলিউড বরণ করে নিল এই প্রতিভাবান শিল্পীকে।
চার্লি হয়ে উঠলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, প্রযোজক, নির্দেশক, গীতিকার, সুরকার। সব! সব!
তাঁর অভিনয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে রইল, দ্য কিড, দ্য গোল্ড রাশ, সিটি লাইটস, দ্য সার্কাস, মডার্ন টাইমসের মত কত, কত সিনেমা! সেলুলয়েডের ফিতায় আঁকলেন ব্যঙ্গ বিদ্রুপ আর কৌতুকের আড়ালে সমাজের নানা অবিচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ।
তিনবার আকাদেমি পুরস্কার ছাড়াও চলচ্চিত্রের এমন কোন সম্মান নেই যা তাঁর ঝুলিতে নেই। কিন্তু আদপে চার্লি ছিলেন একজন গভীর মানবতাবাদী। তাই হিটলারের স্বৈরাচারী কাজের বিরুদ্ধেে গর্জে উঠে সৃষ্টি করলেন, সেই জগতবিখ্যাত সিনেমা "দ্য গ্রেট ডিক্টেটর"। চার্লির গায়ে স্ট্যাম্প মেরে দিল সাম্রাজ্যবাদী শিবির... চার্লি কমুনিস্ট!
চার্লি সারাজীবন অনেক অর্থের মালিক হয়েছিলেন।
মাকে খুব ভালবাসতেন। মায়ের জন্য একটা গোটা দ্বীপ কিনে দিয়েছিলেন। সেখানে ছিল সব ব্যবস্থা। জীবনের শেষ কটা দিন যদি মাকে একটু ভালো রাখা যায়! সেই ভালোবাসা যেন চিরন্তন মানুষের প্রতি ভালোবাসা হয়ে ছড়িয়ে গেল ভুবন জুড়ে।
এত মানুষের ভালবেসে পেয়েও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সুখের ছিল না। প্রায়ই রাতে চার্লি গাড়ি করে একা একা সারা রাত রাস্তায় ঘুরতেন। কোথাও ফাঁকা রাস্তার পাশে ঘাসের ওপর শুয়ে পড়তেন...আর বলতেন "এই তো আমি! তোমাদের চার্লি! বেশ আছি!"
তাইতো চার্লির জীবনের কথা মনে হলে আমার কবির গানের কথাই মনে পড়ে... চার্লির জীবন যেন কবির সেই গানের মত..."যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা তোমায় জানাতাম, কে যে আমায় কাঁদায় আমি কি জানি তার নাম।"
জীবন এইরকমই...
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




