somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

অর্জুন সুভদ্রার বিয়ে পর্ব.....

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
অর্জুন সুভদ্রার বিয়ে পর্ব.....



অর্জুন বার বছরের জন্য ব্রহ্মচর্য পালন করতে গিয়ে তিনটা বিয়ে করে এলেন! এ কেমন ব্রহ্মচর্য?
অর্জুনের সবথেকে প্রিয় ভার্যা সুভদ্রা। ভদ্রা বিবাহ-কারণে সত্যভামার মহাচিন্তা শুরু হল। কৃষ্ণের মত জেনে অর্জুন যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা নিলেন সুভদ্রাকে বিবাহের…..অন্যদিকে বলরাম হস্তিনায় দূত প্রেরণ করে দুর্যোধনে বিবাহের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। দুর্যোধন আনন্দে বরবেশে দ্বারকায় গমন করলো। যুধিষ্ঠির এই সংবাদে আশ্চর্য হলেও ভীমকে সাথে যেতে আজ্ঞা দিলেন…কৃষ্ণের কথা মত অর্জুন সরস্বতীর তীর থেকে সুভদ্রাকে হরণ করলেন। যদুবীররা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল … সুভদ্রা অর্জুনের সারথি হলেন…

দ্রৌপদী জানতে পেরেছেন অর্জুন কৃষ্ণভগিনী সুভদ্রাকে হরণ করে বিবাহ করেছেন! রাগে, দুঃখে এবং সর্বোপরি অপমানে স্তম্ভিত তিনি পড়ে রইলেন ইন্দ্রপ্রস্থে তাঁর সুবিশাল কক্ষে একা।

কৃষ্ণের বোন সুভদ্রা। কৃষ্ণের অনুমতি ছাড়া সুভদ্রাহরণ অর্জুনের পক্ষে অসম্ভব! তবে কি কৃষ্ণই এর মূল হোতা! দ্রৌপদীর সমস্ত মন আচ্ছন্ন করে শুধু একটিই
প্রশ্ন.... কেন এমন করলেন কৃষ্ণ? আদরের বোন কে তৃতীয় পাণ্ডবের মতো বীরশ্রেষ্ঠর হাতে তুলে দিতে নাকি তাঁর কৃষ্ণাকে অর্জুনের কাছ থেকে আরো খানিক দূরে সরিয়ে রাখতে!

দ্রৌপদী যখন এই ভাবনার ঘোরে আচ্ছন্ন ঠিক তখনই অর্জুন এসে দাঁড়ালেন তাঁর সামনে । উদভ্রান্ত বেশে , অবিন্যস্ত কেশে , রক্তলোচনা দ্রৌপদী তাঁর অগ্নিদৃষ্টি রাখলেন তৃতীয় পাণ্ডবের আনত দৃষ্টিতে। অর্জুন বুঝলেন দ্রৌপদী এখন সর্বগ্রাসী অগ্নিকে অন্তরে ধারণ করে আছেন। সেই উত্তাপ আগ্নেয়গিরি নিঃসৃত লাভার মতো ছিটকে এসে জ্বালিয়ে দিচ্ছে অর্জুনের দেহ মন। মুখে কোনো প্রশ্ন না করলেও দ্রৌপদীর শত শত প্রশ্ন বিষাক্ত তীরের মতো ছুটে গিয়ে বিদ্ধ করছে অর্জুনকে। অর্জুন নতজানু হয়ে বসে তাঁর কুণ্ঠিত দৃষ্টি রাখলেন কৃষ্ণার চোখে। দেখলেন তাঁর অগ্নিদৃষ্টি ঘিরে কালো ছাইয়ের মতো জমে আছে একসময়ের যত্নে আঁকা কাজল যার অনেকখানি চোখের জলের সঙ্গে ধুয়ে নেমেছে শীর্ণ ক্লান্ত নদীর মতো ক্রোধের উত্তাপে রাঙা কপোল দুটি ছুঁয়ে। কপালে মুছে যাওয়া সিন্দুরের লাল আভায় গোধূলির অন্ধকার। সিথিতে মিলিয়ে থাকা একখণ্ড হীরের অলংকার ধ্রুবতারার মতো নিশ্চুপ।

অর্জুন ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললেন, "যে নারী অগ্নিযোনি সম্ভূতা, তেজময়ী, অনন্ত সৌন্দর্য ও অপার জ্ঞানের অধিকারী তাঁকে আমার জীবনে পেয়ে ধন্য আমি কৃষ্ণা! যেদিন তুমি আমার গলায় জয়মাল্য পরিয়েছিলে আমি তোমার অগ্নিকে আমার অন্তরে ধারণ করেছিলাম, কিন্তু দ্রৌপদী, সেই অগ্নি আমায় শুধু দগ্ধ করেছে, রিক্ত করেছে.... শান্তি দেয় নি একবিন্দু! যে নারী অগ্নিস্বরূপা, জগৎবন্দিতা, সেই নারী কখনো একজনের হতে পারে না। সে নারী প্রেয়সী হন না, দেবী আসনে বন্দিতা হন! তাঁকে শ্রদ্ধা করা যায়, সম্ভ্রম করা যায়, ভয় করা যায় কিন্তু কোলের কাছে টেনে দুই হাতের আলিঙ্গনে আদর করা যায় না। বক্ষলগ্না করে রাখা যায় না আজন্মকাল। পুরুষ চায় মুগ্ধা নারী, যে প্রতিমুহূর্তে তার প্রেমিককে দেখে মুগ্ধ হবে, বিস্মিত হবে, গর্বিত হবে! তার দু চোখ ভরে থাকবে অপার প্রেম আর হৃদয় ভরা সুধাভাণ্ড যা দিনের শেষে সব ক্লান্তিকে একনিমেষে ঝরিয়ে দেবে। তোমার পদ্মের মতো দুই চোখ আমায় উন্মাদ করে কৃষ্ণা কিন্তু তার মধ্যে দিবারাত্র যে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ঝলসে ওঠে তা আমায় ক্লান্ত করে দেয়! তোমার এই প্রচন্ড অস্তিত্বের কাছে নিজেকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়! আমার শক্তি, আমার বীরত্বের কীর্তি তোমার সামনে ম্লান হয়ে যায়। তার থেকে দূরত্বেই আমার নিষ্কৃতি ...আমার শান্তি!
সুভদ্রা কোনোদিন দ্রৌপদী হতে পারবে না, সেটাই আমার সান্তনা! এই মুগ্ধা কিশোরীর ওই না পারাই তার দিকে আমায় টেনেছে। সেখানেই সে জিতেছে!"

দ্রৌপদী প্রস্তরিভূত হয়ে শুনছিলেন অর্জুনের কথা। ইচ্ছে হচ্ছিলো আগুনের পাখির মতো তাঁর নেমে আসা রক্তাম্বর আঁচল উড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন অর্জুনের বুকে। তাঁর আলক্ত নখে বীর বক্ষ ছিন্নভিন্ন করে হৃদপিণ্ডের কাছে গিয়ে খুঁজে দেখেন কোথায় তাঁর বাস! অর্জুনের হৃদয়ের ঠিক কোন অংশে থাকেন পাঞ্চালী! এ কি বলছেন পার্থ! যে দ্রৌপদীর মহিমা, রূপের খ্যাতি, গুণের স্তব ভারতবর্ষের মানুষদের মুখে মুখে গান হয়ে গল্প হয়ে ফেরে, যাঁকে জয় করতে আসমুদ্র হিমাচল উন্মাদ হয়ে উঠেছিলো, সেই দ্রৌপদীর এমন পরাজয়! তাও এক বালিকার কাছে!

দ্রৌপদী ধীরে ধীরে ক্লান্ত পায়ে অর্জুনের কাছে এসে বসে দুই হাতে বীরের অশ্রুসিক্ত মুখ তুলে ধরে বুঁজে আসা স্বরে প্রশ্ন করলেন, "আমি তবে কার পার্থ?"

অর্জুন দ্রৌপদীর এই প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পেলেন না। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন তারপর অপরাধীর মতো ফিরে গেলেন সুভদ্রার ঘরে।

দ্রৌপদী বসে রইলেন একা নিভে আসা জ্বলন্ত অঙ্গারের মতো। হঠাত্‍ সমস্ত রাগ ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা ঠেলে উঠে এক তীব্র চিত্কার বেরিয়ে এলো তাঁর অন্তর থেকে....
"আমি তবে কার....?"

আবার সেই বাঁশির সুর ....সেই কস্তুরী মৃগনাভির গন্ধ! কৃষ্ণা লুটিয়ে পড়া আঁচল বুকের কাছে টেনে অন্ধকারে তাকালেন।

বাঁশির সুর ভেদ করে চিরচেনা সেই কণ্ঠস্বর ....
'ওঠো কৃষ্ণা। নিজেকে সংযত করো। আয়নার সামনে গিয়ে তাকিয়ে দেখো মহাকাব্যের সেই নায়িকাকে যার হাত ধরে এক নতুন ইতিহাস রচনা করবেন মহাকাল! কৃষ্ণা, জানো না তুমি কার? তুমি যে সর্বকালের! অসীমের! তুমি অগ্নির। আর যে নারী অনন্তের ধন সে যে কৃষ্ণের! তাই তুমি আমার.... শুধুই আমার।

উপসর্গঃ রক্ত বর্নাদের যে সব সময়ই একা থাকতে হয় তা হয়ত সেই যুগ থেকেই প্রমানিত আর অর্জুনের মত বীর ও হয়ত দ্রৌপদীর হতে পারেনা... এ যেন এই সময়ের গল্প...একই সাথে পুরুষ কখনওই যেকোনো ক্ষেত্রেই নারীকে হোক শারীরিক, মানসিক কিম্বা বিছানায় শক্তিশালী দেখতে চায়না, অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রেই নারীকে দূর্বল হিসেবে পেতে চায়।

(মহাভারত আমার অন্যতম প্রিয় উপখ্যান। মহাভারত পড়েছি, তা থেকে ভালো লাগা অনেক বিষয় স্যোশাল মিডিয়ায় গত একযুগে অনেক অন্তত ১৫/১৬ টা পর্ব লিখেছি। ইদানীং স্টার ভারত(Star Bharat) চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো দেখছি। সম্প্রতি ইউটিউবে অর্জুন সুভদ্রার বিয়ে গীতিনাট্য দেখে এই লেখা। ছবিটা নিয়েছি ইউটিউব ভিডিও থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৩১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিরাতাম মুসতাকিমের হিদায়াত হলো ফিকাহ, কোরআন ও হাদিস হলো এর সহায়ক

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:০৮



সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×