বৃদ্ধাশ্রম এবং ইচ্ছামৃত্যু...
এই দুটো বিষয়ে আমার গভীর আগ্রহ আছে। যদিও বৃদ্ধাশ্রমের একটা নেগেটিভ ইমেজ আমাদের সমাজে আছে- খারাপ ছেলে, ছেলের বউ কিম্বা মেয়ে- জামাই বুড়ো মানুষটাকে বাড়িতে থাকতে দিল না! নাতি নাতনীগুলো পর্যন্ত বুড়োর একটু দেখাশোনা করতে পারল না! এইরকম প্রি কনসিভড মানসিকতার বাইরে যাঁরা ভাবনা চিন্তা করেন তাঁদের জন্য বলা। বৃদ্ধাশ্রমের কনসেপ্ট খুব খারাপ না। ফুললি ফেসিলেটেটেড।
অবশ্যই বুড়ো হলে ছেলেপুলের সঙ্গে থাকা ভালো। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম খারাপ কী? সমবয়সী বুড়োবুড়ি মিলে থাকা। নিয়ম কানুন, ডাক্তার বদ্যি, ইবাদত বন্দেগী, বেড়ানো, পড়াশোনা, লেখালেখি সব থাকলো। আবার নিজের মত থাকাও গেলো। বুড়ো বলে কেউ আপনার খুঁত ধরবেনা। আপনি আপনার মতো, সবাই সবার মতো। অবশ্য আশ্রমটা ঠিকঠাক হতে হবে। নিজেরা একটু আনন্দে বাঁচা। আর পরের প্রজন্মকে তাদের মত ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
জানি, বৃদ্ধাশ্রম শুনে অনেকেই আমাকে নিষ্ঠুর ভাবছেন। বৃদ্ধাশ্রম ভালো আশ্রয়, শুনে কেউ কেউ দুঃখ পেলেন। আশংকিত হয়েছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এটা নিষ্ঠুরতা নয়। বাস্তব খুব কঠিন। বৃদ্ধাশ্রম মানে বাবা মাকে অবহেলা করা নয়। তাঁদের জন্য সুব্যবস্থা।
সন্তানদের যতই কাজকর্ম, ব্যস্ততা থাকুক- বুড়ো বাপ মা'র সেবা করা যায়.... কিন্তু যাঁরা অপারগ তাঁরা বিকল্প ভাবলে ক্ষতি কী? বিশেষ করে সাহচর্য। এমন অনেক পরিবার দেখি, বৃদ্ধ মানুষটি চলে গেলে বাঁচেন! দায়ে পড়া সেবা গ্রহণের চেয়ে ভদ্রস্থ বৃদ্ধাবাস ভালো। তারপর অল্প জায়গাতে কয়েকজন মিলে ঠাষাঠাষি করে থাকলে অসুবিধে তো হবারই কথা।
টিভি নাটক সিনেমায় দেখি- বাড়িতে বৃদ্ধ দাদা দাদী কিম্বা মা বাবা থাকেন। সন্তানেরা, নাতি নাতনিরা যারযার কাজে বাইরে যাবার আগে 'কিছু লাগবে কি না?' হাসিমুখে খোঁজ নিচ্ছে। বাড়ি ফিরেই জিজ্ঞেস করছে- 'কোনো সমস্যা নেইতো? ওষুধপত্র ঠিকঠাক খেয়েছোতো?'...বাস্তবতা হচ্ছে -এসব নাটক সিনেমার চমক। বাস্তব বিপরীত। সব মানুষেরই বয়স কম হোক বা বেশি হোক, সবার অধিকার আছে নিজের মত বাঁচার। তাই বৃদ্ধাবাস একটি ভালো চয়েস।
আর ইচ্ছামৃত্যু?
স্বেচ্ছামৃত্যুর কথাতে যাঁরা আঁতকে উঠলেন তাঁদের বলি, কুড়ি বছর আপনার প্রিয়জন বিছানায় পড়ে। তিনি স্বেচ্ছা মৃত্যু চাইলে দোষ? বছরের পর বছর কোমায়- তার ভার বৈবে কে? মানুষ যতদিন শারীরিকভাবে সক্ষম, ততদিন সে স্বাবলম্বী। আর অন্যের মুখ চেয়ে বেঁচে থাকা , আজ আর কেউই চান না। তাই স্বেচ্ছা মৃত্যুর মত সুন্দর কিছু নেই।
যদি মনে করি শরীর আর নিচ্ছে না, আর কিছু করার নেই, বিছানায় শুয়ে অন্যের এবং নিজের বিপদ বাড়ানোর চেয়ে ইচ্ছামৃত্যু শ্রেয়। আমার কাছে এটাই ভালো। অনেক বছর বাঁচার পর একটি আরাধ্য মৃত্যু।স্বেচ্ছামৃত্যু। কম্পালশন তো না! যদি ধর্মীয় বিধিনিষেধ না থাকতো তাহলে রোগে শোকে মানুষের মৃত্যু খুব কম হতো।
আমার মতে বৃদ্ধাশ্রম একটি ভালো কনসেপ্ট। সেখানে সম্মানের সাথে, আনন্দের সাথে বাঁচা ভালো। জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো থাকতে হোলে সত্যিকার অর্থে বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার কোন বিকল্প নাই। তবে এজন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা জরুরি। সহায় সম্পত্তি সবকিছু ছেলে-মেয়েদের দান করে ফ্রী বৃদ্ধনিবাসে থাকতে যাওয়ার চিন্তা করাটা ঠিক না। তবে কোরআন শরীফে বাবা-মা'র প্রতি সন্তানদের কর্তব্যের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। এ ব্যাপারেও তাদেরকে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন... ‘আর তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। যদি পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তুমি তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটি পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না বরং তাদের সঙ্গে বিনম্রভাবে সম্মানসূচক কথা বল। আর তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা মমতাপূর্ণ আচরণের সঙ্গে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত কর। আর দোয়া কর, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি রহমতের বর্ষণ করুন, যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন। (সূরা: বনী ঈসরাইল, আয়াত নং- ২৩-২৪)
Euthanasia বা স্বেচ্ছামৃত্যু প্রথম আইনগত ভাবে স্বীকৃতি পায় নেদারল্যান্ডে। কষ্ট পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকার চেয়ে এই মৃত্যু অনেক ভালো।
(এই লেখা কাউকে বৃদ্ধাশ্রমের জন্য কিম্বা ইচ্ছামৃত্যুর জন্য কাউকে অনুপ্রানিত করার জন্য নয়, নিতান্তই নিজের ভাবনা শেয়ার করা)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




