সিনেমা যখন বই হয়....
ছোটবেলায় শুনতাম সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, "হলে কি বই চলছে?"
ছেলে বেলায় আমাদের বিভিন্ন শহরে যেসব সিনেমা হল ছিল, তখন প্রতিদিন সকালে মাইকিং করে সিনেমার বিজ্ঞাপন করতো কিম্বা খর্বাকৃতির একাধিক লোক পিঠে পোষ্টার ঝুলিয়ে চোঙে মুখ লাগিয়ে সুর করে বলতো, "বলাকা সিনেমা হলের রুপালী পর্দায় রাজ্জাক সুজাতা অভিনীত বাংলা ছবি, 'এতোটুকু আশা'। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় ও রাত্রি সাড়ে আটটায়"। কিম্বা নাজ সিনেমায় ইংলিশ মুভি ..... বিজ্ঞাপনে সিনেমা বললেও অনেক সাধারণ মানুষ 'বই' বলতো - তারা চলচ্চিত্র বা ছবি/ সিনেমা না বলে, বই ই বলতো। কোলকাতার সর্বস্তরের জনগণ এখনো সিনেমাকে বই বলে!
সিনেমা কে বই বলার চল বহুকালের। আশেপাশের মানুষজন যখন বাংলা সিনেমাকে বই বলতো, খানিকটা বিরক্ত হতাম। কিছু জনকে চেষ্টা করে বই বলা থেকে আটকাতে পেরেছিলাম বটে কিন্তু সবাই কে বলতে পারিনি। পরে ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলাম বই এর মতো চোখের সামনে সিনেমা কখনো কখনো জীবন্ত হয়ে ওঠে। আর যখন বই এর সব জীবন্ত চরিত্রদের মতো কাল্পনিক হলেও তারা আর পর্দা আর কল্পনার জগতে থাকেনা, তখনই সিনেমা বই এর মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে। যাকে একবার নয়, বার বার পড়তে ইচ্ছে করে।
সহজ করে বলতে গেল- সবাক সিনেমা থেকে পরীক্ষামূলক সিনেমাগুলি ছাড়াও, সিনেমা কিন্তু মূলত নানারকম বই থেকে প্রভাবিত করেছিল। মানে ইলিয়াড, ওডিসি, মহাভারত, গীতা বা অন্যানিও পৌরাণিক কাহিনী এবং শেক্সপিয়র বেশিরভাগই। এমনকি এখনো ১০০ বছরের সিনেমা ইতিহাস এবং পাঠ্য বইয়ের রূপান্তর এর সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি জনপ্রিয় সিনেমাতে। আবার তখন দর্শকদের কাছে সিনেমা যেহেতু ছিলো বইয়ের ভার্চুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন, তাই সেই সময়ে 'বই দেখা' টার্মটা প্রচলন হয়।
বই কেন বলতো, তা তখন ভাবিনি।
এখন ভাবছি এবং অনুমান করছি, বইয়ের গল্পে চলচ্চিত্র নির্মান হ'তো - সাধারণে তো বই পড়তে পারতো না, বই দেখতো। গ্রাম দেশে কি এখনও বই বলে, মনে হয় না। হয়তো সিনেমা বলে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



