"বাথরুমে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত".......
"বাথরুমে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত কিম্বা মৃত্যু"- এমন সংবাদ প্রায়শই আমরা পত্রপত্রিকায় পড়ি, নিজের আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিত জনদের কাছে শুনি। যা এতোদিন পত্রিকায় পড়েছি, শুনেছি- তেমন দুর্ঘটনার শিকার আমি নিজেই হয়েছিলাম কয়েকদিন আগে ঢাকার বাইরে একটি হোটেলে। ভাগ্যিস আমার হোটেল রুম মেট তানজিম আহমেদ আমাকে দ্রুতই ধরে ফাস্ট এইড দিয়েছিলেন।
নানা কারণে মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলতে পারে। বুকে বা মাথায় আঘাত, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, শরীরে পানিশূন্যতা বা লবণশূন্যতা, রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস, হঠাৎ রক্তচাপ হ্রাস, হৃদ্রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে ঘাটতি, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, মৃগীরোগ ইত্যাদি কারণে মানুষ আচমকা জ্ঞান হারায়। ওষুধ বা অ্যালকোহলের প্রতিক্রিয়া, এমনকি খাবারের বিষক্রিয়াও হতে পারে কারণ।
একটা বেসরকারী টিভি চ্যানেলে 'আপনার ডাক্তার' নামে চিকিতসা বিষয়ক একটা অনুষ্ঠানে বাথরুমে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হওয়া নিয়ে দেশের নামকরা দুইজন চিকিতসকের একটা আলোচনা দেখলাম। দেশ সেরা দুইজন সম্মানীত চিকিতসক ছিলেন- মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাক্তার আবদুল্লাহ এবং নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এহসান মাহামুদ......
দুজন সুনামধন্য চিকিতসকের মতে 'বাথরুমে পড়ে যাওয়ার কারণগুলো' উল্লেখ করলেন- যা আমার কাছে অত্যন্ত বাস্তব সম্মত মনে হয়েছে। দুইজন বিখ্যাত চিকিতসকের মতেঃ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্ক লোকদের বাথরুমে পড়ে যাওয়ার সময়টা হয় রাতে কিম্বা খুব সকালে।
প্রথম কারণ- অসতর্কতা। বেশীরভাগ সময়ই আমাদের প্রস্বাবের চাপ বেশী নাহওয়া পর্যন্ত ঘুম থেকে জেগে প্রস্রাব করতে যাইনা। যখন প্রস্বাবের চাপ প্রবল হয় তখন আমরা ঘুম থেকে উঠেই বাথরুমে যাই। সাধারনত ঘুম থেকে ওঠার পর শারিরীক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ কম থাকে। তার উপর ঘুমের জন্য কিম্বা অযু করার জন্য তাড়াহুরা থাকে।
দ্বিতীয়তঃ মানুষ যখন ঘুমায় তখন জেগে থাকা কিম্বা কর্মব্যস্ততার সময় থেকে কম অক্সিজেন গ্রহণ করে। তার উপর বন্ধ রুমের অক্সিজেন কমে যাওয়ায় শারিরীক দূর্বলাতা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। বেড রুম এবং বাথরুমের দড়জা বন্ধ থাকায় রুমের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ঘুমের ব্যঘাত হবে বলে- অনেকেই রাতে বাথরুমের লাইট না জ্বালিয়েই বাথরুমে ঢোকে। আবার অনেকেই নিদ্রাহীনতায় মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বাথরুমে ঢোকে। ঐ অবস্থায় বাথরুমে ঢুকে শারিরীক ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যায়। যেহেতু পানির কলের যায়গা ভেজা কিম্বা স্যাতসেতে থাকে তাই পিছলে পড়ে যায়।
এমতাবস্থায় করণীয়ঃ ঘুম থেকে উঠেই ঝটপট বাথরুমে যাওয়া যাবেনা। ঘুম থেকে জেগে কিছুক্ষণ আড়মোড়া ভেংগে কাত হয়ে দুই হাতে ভড় করে উঠে বসতে হবে। লাইট জ্বালিয়ে আস্তে আস্তে বাথরুমে যেতে হবে।
এমন অবস্থায়, সেই মুহূর্তে আপনি কী করতে পারেন?
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাক্তার আবদুল্লাহ এবং নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এহসান মাহামুদ স্যারদের কয়েকটি পরামর্শঃ
* প্রথমে রোগীর চেতনা কতটুকু আছে বোঝার চেষ্টা করুন। জোরে ডাক দিয়ে দেখুন সাড়া দেয় কি না।
* নাকের কাছে হাত দিয়ে বা বুকের ওঠানামা দেখে বোঝার চেষ্টা করুন শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কি না।
* আক্রান্ত ব্যক্তিকে সোজা করে শুইয়ে দিন। বেশি নাড়াচড়া করবেন না বা স্থান বদলাবেন না। জ্ঞান না থাকলে একটু একদিকে কাত করে রাখুন, চিত বা উপুড় না করে। এতে মুখে জমা লালা গলায় আটকে যাবে না।
* ব্যবহৃত পোশাক ঢিলা করে দিন। পা দুটো একটু উঁচু করে দিন। মাথা পেছন দিকে কাত করে থুতনি উঁচু করে ধরুন।
* নিশ্বাস বন্ধ থাকলে মুখে মুখ লাগিয়ে জোরে বাতাস দিতে পারেন। দেখবেন বুক ওঠানামা করছে কি না। খিঁচুনি হতে থাকলে চেপে না ধরে খোলামেলা জায়গায় কাত করে শুইয়ে রাখুন।
* অচেতন ব্যক্তিকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না, এমনকি মুখে পানিও দেবেন না।
* ডায়াবেটিস আছে জানা থাকলে সম্ভব হলে রক্তে শর্করার মাত্রা মাপুন। অথবা না মেপেই মুখের ভেতর খানিকটা চিনি দিতে পারেন।
* রোগীর ব্লাড প্রেশার মেপে দেখা যেতে পারে। বিপি হাই হলে মাথা উঁচু করে অর্থাৎ দুটি বালিশ দিয়ে এবং বিপি লো হলে মাথা নিচের দিকে অর্থাৎ বালিশ ছাড়াই শুয়ে দিন এবং পায়ের দিক উঁচু করে দিন।
প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে স্থানান্তর করুন।
(যাহার/ যাহাদের জন্য প্রজোয্যঃ আমার এই পোস্টের শিরোনাম দেখে যারা খুশীতে আত্মহারা তারা ভেবেছিলেন- জুলভার্ন বাথরুমে পরে গিয়ে মারাত্মক আহত...তাদের জন্য আপসোস- আমি সুস্থ্য আছি, বেঁচে আছি)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




