মিষ্টি সুখ........
প্রচলিত আছে- "যারা মিষ্টি ভালোবাসে, তাদের মনটাও মিষ্টির মতো মিঠে হয়"। প্রবাদের সত্য মিথ্যা মিলিয়ে দেখার সময় পাইনা- মিষ্টি, স্পেশালি রসগোল্লা পেলে।
মিষ্টির প্রতি এই আনকন্ডিশনাল লাভ কোথা থেকে শুরু হলো বলাটা মুশকিল। ছেলেবেলায় হালখাতা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দোকানে যেয়ে এবং বিভিন্ন দোকান থেকে বাড়িতে পাঠানো রসগোল্লা খেয়ে খেয়ে আমি যে সেই রসগোল্লার প্রেমে পরলাম- তা থেকে আর বের হতে পারলাম না। রসগোল্লা, দানাদার, পান্তুয়া, সীতাভোগ, মিহিদানা, ল্যাংচা, রসমালাই, ক্ষীর কদম, মতিচুর, জিলাপী ছাড়াও আরো হরেক রকম মিষ্টির জগতে যতো ঢুকতে শুরু করলাম তত আরো বেশি করে মিষ্টি খেকো হয়ে গেলাম। মিষ্টি খাওয়া রোগের গভীরতা দিনে দিনে বাড়তে লাগলো। আগে দিনে ৪/৫ টা মিষ্টি খেলে সেটা কখনো কখনো ৮/১০ টাও হয়ে যেতো। আবার সনাতন বন্ধুদের পুজো পার্বণ, বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নেই, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মিষ্টিপ্রেম আমার ঢাকা ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পরলো। কর্মসূত্রে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যখন যেখানে যাই, প্রথমেই খোঁজ নেই- কোথায় ভালো মিষ্টি পাওয়া যায়......

যারা মিষ্টি খায় তাদের আলাদা সুবিধে আছে, বাড়িতে অনেকেই যে মিষ্টি গুলো খায়না, শেষ অবধি সেগুলো অনায়াসেই আমার পাতে চলে আসে। নিকট আত্মীয় স্বজন, বন্ধুদের বাড়িতে মিষ্টি খেতে খেতে চক্ষু লজ্জায়
"আর খেতে পারবো না"- বললে আরো এক্সট্রা পাওয়ার সম্ভবনাও প্রবল।
- "আরে আরে পারবি না কেনো-এই বয়েসেইতো খাবি"- বলে আরও কয়েকটা বেশী পেতাম।
কিন্তু বয়স বাড়ে, রিসেশন আসে বাজারে। ইনফ্লেশন এর যুগে খুব সাধারণ মানের এক পিস মিষ্টির দাম আট আনা, ১ টাকা, ২টাকা থেকে সোজা ১০/১২ টাকা পেরিয়ে এখন ৩৫/৪০/৫০/৬০/১০০ টাকা হয়ে যায়। দোকানে দোকানে কম্পিটিশন বাড়ে, অন্যদিকে মিষ্টির সাইজ ছোট হয়ে যাচ্ছে। ম্যাঙ্গো, লিচু, আপেল, পেয়ারা, ডার্ক, হোয়াইট, এমনকি পোড়া চকোলেট, স্ট্রবেরি, ব্লু বেরি সব কিছু দিয়ে মিষ্টি বানানো শুরু হলো। মিষ্টির এহেন ফিউশন যে আমি উপভোগ করতে শুরু করলাম না, তা নয়। বরং মিষ্টির যেকোনো ফর্ম, শেপ এ আগের মতই দেওয়ানা হতে থাকলাম।

এখন আর আগের মতো মিষ্টি খেতে পারিনা। একদিন ৪/৫ টা খেলে সারা দিনে আর খাইনা। তারপরও নিয়ম ভেংগে খাওয়া হয়। এই যেমন গতকাল বড়ো ছেলে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থেকে পানতোয়া (চিনির রসে ভেজানো ঘিয়ে ভাজা রসগোল্লা জাতীয় মিষ্টি ), ছানার আমেত্তি আর দৈ নিয়ে এসেছে- সত্যি বলছি, এতো সুস্বাদু মিষ্টি অনেক দিন পর খেলাম!
অনেক দিন আগে জিলাপীর পোস্ট দিয়ে জিলিপির ছবির নিচে ক্যাপশন লিখেছিলাম- স্লিম ট্রিম! এই জীবন জিলিপি হয়ে যাক।
আমার জীবন স্লিম ট্রিম হবে কিনা জানিনা, কিন্তু মিষ্টি প্রেম আজীবন এক্সট্রা লার্জই থাকবে।
(মিষ্টি নিয়ে এটা সম্ভবত ব্লগে আমার চার নম্বর পোস্ট!)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


