অপ্রিয় সত্য কথা ....
লেখাটা পড়ে অনেকেই বিরক্ত হতে পারেন, লিখতেই যেখানে আমার অস্বস্তি হচ্ছে- সেখানে বিরক্ত এবং অস্বস্তি দুটোই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতাকে অস্বীকার কারার সুযোগ নাই।
মুক্তিযুদ্ধের আট মাসের বেশী সময় আমি মুক্তিযুদ্ধের নয় নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর হেড কোয়ার্টার সদর দপ্তরে ছিলাম। আমার কাজ ছিলো- সদর দপ্তরে আগত রিক্রুট মুক্তিযোদ্ধাদের এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এবং ছকবাধা কিছু তথ্য তালিকাভুক্ত করা। এছাড়াও আমার সৌভাগ্য, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের নির্দেশে সদর দপ্তরের পাশাপাশি মঠবাড়িয়া, কাঠালিয়া, রাজাপুর, বেতাগী, বাকেরগঞ্জ থানার প্রত্যন্ত এলাকায় অসংখ্য বার যেতে হয়েছে। কৌশলগত কারণে নয় নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর হেড কোয়ার্টার সদর দপ্তর বর্তমান বরগুনা জেলার বামনা থানাধীন বুকাবুনিয়া, চালতা বুনিয়া, সিংড়াবুনিয়া এবং মঠাবাডিয়া থানাধীন দাউদখালী, মিরুখালী ইউনিয়ন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। নতুন রিক্রুট মুক্তি যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো ইন্ডিয়া, আবার ইন্ডিয়া থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এসে এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা চলে যেতেন। উল্লেখিত এলাকায় সব সময় গড়ে এক হাজারের বেশী মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করতেন। যেহেতু বেশীরভাগ সময়ই আমি মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করতাম- তাই তাদের সম্পর্কে একটা ধারণা আমার তৈরী হয়েছিলো.........
পায়ে হাটা এবং নৌকা যোগাযোগ ছাড়া অন্যকোন যাতায়াতের মাধ্যমহীন বিচ্ছিন্ন অজপাড়াগাঁ এলাকায় এতো মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন এবং খাওয়া দাওয়া ছাড়াও নুন্যতম কাপড় চোপড়ের যোগান দেওয়া ছিলো এক মহাযজ্ঞ। বামনা এবং মঠবাড়িয়া থানা সংখ্যালঘু হিন্দু অধ্যসিত এলাকা হলেও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। অথচ, এমন কোনো মুসলমান পরিবার ছিলো না, যে পরিবারের সক্ষম একজন কিম্বা একাধিক সদস্য কোনো না কোনো ভাবে মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। হিন্দুধর্মাবলম্বী কিশোর যুবক এবং বয়স্করা মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে তারা চুটিয়ে ব্যবসা করেছে....হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সহ সকল প্রকার প্রয়োজনীয় পণ্য সাপ্লাই দিয়ে। এরা টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকায় করে সীমান্ত এলাকা পাড়ি দিয়ে ইন্ডিয়া পৌঁছে দিতেন এবং নিয়ে আসতেন- সেটাও কম ঝুঁকিপূর্ণ ছিলোনা।
বর্তমান ঝালকাঠি জেলার সদরের বাসন্ডা ইউনিয়নে ৩০% এবং স্বরুপকাঠী থানাধীন আটঘর কুড়িআনা এলাকায় ৮০% জনসংখ্যাই হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও সেখানকার হিন্দুদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ১০ ভাগের বেশী ছিলো না। বাকেরগঞ্জ থানায় হিন্দু এবং খৃষ্টান ধর্মালম্বীদের সংখ্যা ৩০% হলেও হিন্দুদের মধ্যে ৫% মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও আমার জানা মতে খৃষ্টানদের মধ্যে কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি। আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারের সাথে এবং ব্যক্তিগত ভাবে আমার অসংখ্য সনাতনধর্মী এবং খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী পরিবারের মধ্যে দুইজন সনাতনধর্মী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং দুইজন শহীদ হয়েছেন।
এই পর্যবেক্ষণ একান্তই আমার নিজের হলেও, সততা থাকলে অনেকেই স্বীকার করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


