রক্ষণশীল ইরানে একজন প্রতিবাদী অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি....
রক্ষণশীল ইরানের অনেক কিছুই আমার অপছন্দের হলেও আমি ইরানী সিনেমার ভক্ত। ইরানীর সিনেমা বিশ্ব সিনেমা জগতে অনেক বড়ো ভূমিকা রাখছে, যেমনটি ইদানীং কোরিয়ান সিনেমাও খুব ভালো করছে। ইরানী ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রীতে আমার অনেক জন বিখ্যাত পরিচালক এবং অভিনেতা- অভিনেত্রী আছেন যারা সিনেমা প্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন। ইরানী আইন শৃংখলা বাহিনী ‘মিথ্যা তথ্য’ প্রচারের অভিযোগে ১৭/১২/২০২২ ইং তারিখ আটক ইরানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি। ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইরানজুড়ে চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে এই বিক্ষোভকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ তারানেহ আলিদুস্তির নামে। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার জানায়, নিজের করা দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো নথি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশ আলিদুস্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।

আদর্শবান কবি, সাহিত্যিক, লেখক শিল্পীরা কখনও রক্তচক্ষুর কাছে, লোভের কাছে, স্বৈরাচারী স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার সাথে মাথা নত করেন না। তাঁরা বলেন, করেন- করাটা, বলাটাই তাঁদের আদর্শিক কাজ। ধোপদুরস্থ জামাকাপড় পরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাততালি পাবার লোভে নয়, তাঁরা নিজস্ব দায়িত্ববোধ থেকে বলেন এবং করেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, ক্ষমতার বিরুদ্ধে, অথবা প্রচলিত সব রকম বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। প্রকৃত কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিল্পীরা এভাবেই লিখে এবং বলে গেছেন বারবার। কেউ শুনেছে, কেউ শোনেনি। রাষ্ট্র কবেই বা শিল্পীর কথামত সিদ্ধান্ত নিয়েছে? যদিও এখনকার রাজাদের ‘ওই জায়গাগুলো’ থাকে না, তাই “রাজা তোর কাপড় কোথায়?”--- এই কথা জিজ্ঞেস করে এইসব রাজাদের লজ্জিত করা যায় না।

বিশ্ববাসী জানেন, পুলিশ হেফাজতে মাশা আমিনি নামের এক নারীর মৃত্যুর জেরে অনেক দিন ধরেই ইরানে চলছে বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ থেকে আটক মোহসেন শেখারি নামে এক আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড দেয় ইরান সরকার। আর এই মৃত্যুদণ্ড নিয়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন তারানেহ আলিদুস্তি নামের প্রখ্যাত ইরানী অভিনেত্রী। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য এটি লজ্জা। এত রক্তপাত দেখেও তারা চুপ করে আছে।
৩৮ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা। এর আগেও ইরান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আটক হয়েছিলেন তারানেহ আলিদুস্তি। ২০১৮ সালে পুলিশ এক নারীকে লাঞ্ছিত করলে টুইট করে প্রতিবাদ করেন এই অভিনেত্রী। প্রতিবাদের শাস্তিস্বরূপ ২০২০ সালে পাঁচ মাস জেলে কাটাতে হয়েছে তাঁকে।

আসলে আমি এখানে সিনেমার রিভিউ লিখছি না, তবুও প্রসংগত বলছি- পরিচালক আসগর ফরহাদির অস্কার পাওয়া সিনেমা- দ্যা সেলসম্যান। অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি অভিনীত দ্যা সেলসম্যান সিনেমাটি আমি দেখেছিলাম। আর্থার মিলারের ‘দ্য ডেথ অফ আ সেল্সম্যান’ নিয়ে নাটকও হয়েছে ইরান ছাড়াও অনেক দেশে। সিনেমার ঘটনাটি এমনঃ-এক দম্পতি নতুন ফ্লাটে উঠেছে। সেখানেই ঘটে ভয়াবহ দূর্ঘটনা। সিনেমার চরিত্র রানার (তারানেহ আলিদুস্তি) উপর অজানা অচেনা কেউ হামলা করে। প্রতিবেশীদের থেকে জানা যায় তাদের ফ্লাটে এর আগে একজন দেহব্যবসায়ী মহিলা থাকতেন। সন্দেহ করা হয় সেই মহিলার কোন কাস্টমারই রানার উপরে হামলা করেছে। একসময় ধরা পরে অপরাধী। ধরা পড়ার পর অপরাধীর কি শাস্তি প্রাপ্য সেটা নিয়েও চলে একধরণের সাইকোলজিক্যাল টানাপোড়ান। শাহাব হোসেইনি এমাদ চরিত্রে তার আকর্ষক, ব্রুডিং অভিনয়ের জন্য কানে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন। তারানেহ আলিদুস্তিও একটি যন্ত্রণাদগ্ধ চরিত্রে অসাধারন সুন্দর অভিনয় করেছেন- যা দর্শক হৃদয়ে যন্ত্রণার প্রতীক হয়ে থাকবে।
আসগার ফারহাদির যেকোনো সিনেমার শেষেই উঠে আসে মানবিকতা। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়। নিতান্তই রহস্যজনক ভাবে সিনেমার কাহিনী শুরু হলেও শেষ অবধি অন্যদিকেই চলে যায়।
ছবিঃ স্যোশাল মিডিয়ার সৌজন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


