বাগাড় মাছ, মহাশোল মাছ দেশের হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী থেকে চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাগাড় মাছ একদা আমাদের দেশের মিঠা পানির সব নদী, হাওর-বাঁওড়ে পাওয়া গেলেও এখন কদাচিৎ এই মাছ কিছু কিছু এলাকায় পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, মহাশোলও একটি বিলুপ্তপ্রায় মাছ। মহাশোল দেখতে অনেকটা মৃগেল মাছের মতো। তবে, এর আঁশগুলো আরও বড়। বাংলাদেশে মহাশোলের দুটি প্রজাতি আছে- সোনালি মহাশোল ও লাল-পাখনা মহাশোল। দুটি প্রজাতিই মহাবিপন্ন।
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কংস নদ ও সোমেশ্বরী নদী মহাশোলের আবাস। এই নদ-নদীর উৎসমুখ এখন প্রায় বন্ধ। শুকনো মৌসুমে নদী দুটি প্রায় শুকিয়ে যায়। বসবাস ও বংশবৃদ্ধির স্থান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ‘মহাশোল’ একপর্যায়ে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। সোমেশ্বরী ও কংস ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে দু-একবার সাঙ্গু নদ এবং মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায়ও ‘মহাশোল’ পাওয়া গেছে।
মাছ দুটি কমে যাওয়ায় প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইইউসিএন এটিকে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতি থেকে এই মাছ যেন হারিয়ে না যায়, সে জন্য বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২–এর তফসিল-২–এ মাছটিকে সংরক্ষিত করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী বাগাড় মাছ ধরা, মারা, ক্রয়-বিক্রয় কিংবা আমদানি-রপ্তানি দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে।
মাছ সংরক্ষণের জন্য এই আইনটি অত্যন্ত সময়োচিত। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র!
এই মাছগুলো দেশের হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী অন্যসব মাছের সাথে মিলেমিশে থাকে। জেলেরা জাল পেতে কিম্বা বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে। মাছ শিকারীরা জানেনা- তাদের জালে কি মাছ ধরা পড়বে। জাল পেতে জেলেরা কয়েক ঘন্টা পর জাল তুলে মাছ পায়, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে বাগাড়, মহাশোলও থাকতে পারে। এই সময়ের মধ্যে বেশীরভাগ মাছ মরে যায়। আবার বড়শিগাঁথা মাছও পানি থেকে তোলার পর মরে যায়। সেই মাছ বিক্রির অপরাধে প্রায়শই বিক্রেতাদের শাস্তি দেওয়ার খবর পত্রিকায় পড়ি।
এমতাবস্থায় মরা বাগাড় কিম্বা মহাশোল মাছ ফেলে দেওয়া কি যুক্তিযুক্ত হবে, নাকি বিক্রি করতে পারবে- সেই বিষয়টা খোলাসা হওয়া উচিৎ। আবার সেই মরা মাছ বিক্রির অপরাধে জেলে/দোকানীদের বিচারের আওতায় আনা কতটা যুক্তিসংগত হয়?
উল্লেখ্য, আমি উল্লিখিত মাছ খাওয়ার জন্যই এই বিষয় অবতারণা করছি। বরং বলতে দ্বিধা নাই- উক্ত দুটি মাছের একটাও খেতে পছন্দ করি না।
ছবিঃ প্রথম আলোর সৌজন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৫০