সফল ক্যারিয়ার গঠনে ইংরেজি.....
মাতৃ ভাষার জন্য বাংলা আর ভালো ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ইংরেজিশিক্ষার বিকল্প নাই। যদিও ইংরেজী আমাদের মাতৃভাষা নয়, তথাপি আপ্তবাক্য এটাই, সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ বা দ্বিতীয় নন্দিত ভাষা হিসেবে ইংরেজি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যুক্তিযুক্ত কারণেই আমরা বাংলা শেখার পক্ষপাতী; ইংরেজী নয়। এখানে সে কোণ্ঠাসা। তবে, হাল ফিলে ইংরেজী ভাষার গুরুত্ব অনুধাবন করে একে আবার চাঙ্গা করে রোশনাই দেয়ার তাগিদে দেশের সমস্ত বিদ্যাপীঠে শনৈঃ শনৈঃ চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু ভালো ইংরেজী জানা শিক্ষক পাওয়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভালো ইংরেজি জানা শিক্ষক নাই বলেই ইংরেজি শিক্ষায় দক্ষ ছাত্র খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর!
ছোট্ট একটা প্রত্যক্ষ্য ঘটনা বলি, আমার অফিসের জন্য দুইজন এক্সিকিউটিভ নেওয়ার জন্য বিডি জবস থেকে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে পাঁচ জনকে বাছাই করেছিলাম- যারা সবাই অনার্স এবং মাস্টার্স পাশ। দুইজন এমবিএ করা। এদের স্বাভাবিক ইংরেজি চর্চা যাচাই করতে গতএক সপ্তাহের দৈনন্দিন কার্যক্রম লিখতে বলা হয়েছিলো। পাঁচজনের মধ্যে চারজনই ইংরেজিতে সাত দিনের নাম লিখতে বানান ভুল করেছে- আর কিছু না-ই বলি!
ভবিষ্যৎ জীবন দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে উচ্চ শিক্ষা- বিদেশ গমন-বিদেশীদের সাথে কমন ভাষার যোগাযোগ স্থাপন- বিদেশী দূতাবাসে চাকরি-ট্যুরিস্ট গাইড ইত্যাদি ছাড়াও খোদ দেশের পড়াশোনা চালাতে এবং চাকুরী জীবনে ক্যারিয়ার গঠনে এর উচ্চমার্গের দ্যুতির প্রয়োজনীয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না সেকথা বলাই বাহুল্য। বিদেশে পড়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে IELTS-TOEFL-SAT-GRE-GMAT পরীক্ষায় একজন ছাত্রকে মোটিভেটেড হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় উৎরে সাফল্যের দরোজায় হানা দিতে হয়। এরজন্য ইংরেজী জ্ঞান রসদ জোগাবে। কারণ এখানে অত্যন্ত কঠিনভাবে English skill তলিয়ে দেখা হয়। কোন স্তাবকপূর্ণ বাগড়ম্বড়তা কাজে আসবে না।
দেশে ভালো সরকারী চাকরি পেতে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ফার্স্ট অফিসার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এক্সিকিউটিভ প্রার্থীর যোগ্যতা ভালো ইংরেজী দখলের ওপর নির্ভর করে। এমনকি একজন সেলসম্যান বা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীর রিসিপশনিষ্ট হতেও ইংরেজীর দক্ষতা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। চাকরির ক্ষেত্রে আক্রার বাজারে 'The candidate must have strong command both is spoken and writen English' হামেশাই চোখে পড়ে। ইংরেজী শিক্ষার ছুড়িতে শাণ দিয়ে যারা এতে অগ্রগামী হতে পারেন চাকরি নামক মহার্ঘ্য বস্তুটি সোনার পাথর বাটি হয়ে তাদের হাতেই ধরা দেয়। কাজেই শিক্ষা জীবনের শুরুতে একে হেলাফেলা করলেও জীবনের উন্নতির ধাপে ধাপে উপর ওঠার ক্রান্তিলগ্নে সিঁড়ি হিসেবে ইংরেজীকে উপেক্ষা করা তো নয়ই, বরং এটাকেই বেশী আঁকড়ে ধরতে হয়।
আমাদের দেশের বিসিএস লিখিত এবং ভাইভার প্রশ্নগুলো অনেকসময় ইংরেজীতে করতে হয়। একজন ভালো ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজীতে দখল কম থাকার কারণে তার পৌনঃপুনিক চেষ্টা ক্রমাগত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ করে টেকনিক্যাল সাবজেক্টের বইগুলো ইংরেজীর উন্মুক্ত দরোজায় হোলি খেলতে পারে। বাংলা অনেকটা বদ্ধজলায় আটকে থাকার অবস্থায় দাঁড়ায়। এমফিল পিএইচডির থিসিস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক লেকচার ইংরেজিতে হয়। এই টানাপোড়েনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ইংরেজীর বিকল্প নেই। ইউরোপিয়ান দেশ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় পড়াশোনা বা চাকরি কোনটাই আপৎকালীন এই সময় ইংরেজী জ্ঞান ছাড়া পার করা সম্ভব নয়। কম্পিউটার প্রযুক্তির আকাশছোঁয়া উন্নতিতে সিভিল সমাজ ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বরাজনীতি-অর্থনীতি-ব্যবসায় বাণিজ্য-বিজ্ঞান-বিনোদন-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কারেন্ট খবর কোথায় নেই ইংরেজী। আন্তর্জাতিক ই মিডিয়া থেকে বিশ্বের তাবৎ অতি সম্প্রতিক ঘটনাবলী BBC-CNN-VOA এর সংবাদে খেয়াল রাখতে ইংরেজীর জুড়ি নেই। C.V বা রেজ্যুমে তৈরির জন্য অবশ্যই আন্তর্জাতিক ঘোষিত নীতির আওতায় ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করে প্রার্থীতার যাবতীয় পরিচয় পেশ করে সূক্ষ্ম প্রয়াসে ফিনিশিং দিয়ে এর সৌকর্য বিকাশ করে নিজেকে একজন যোগ্যতর আদর্শ প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেন।
ইংরেজী শিক্ষা শুধু কোর্স করে নয়। নিয়মিত শাটলট্যুর করে ইংরেজী বই ম্যাগাজিন সংবাদপত্র পড়তে হবে ডিকশনারির সাহায্যে। এছাড়াও ক্যাম্পেইন করতে হবে ইংরেজী মুভি দেখায়- লাইব্রেরীতে পড়া ইন্টারনেটে ব্রাউজ, গ্রামারের নিয়মগুলো খতিয়ে দেখায়। ইত্যাদি ইত্যাদিতে একান্ত সদিচ্ছা এবং পরিশীলিত চর্চার মাধ্যমে এই আরোধ্য বৈতরণী ভালোভাবেই পারি দেয়া সম্ভব। কাজেই আমাদের সন্তানদের তথা নতুন প্রজন্মের উচিত হবে মাতৃভাষা শুদ্ধ ভাবে শেখার পাশাপাশি অবশ্যই ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




