somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

চণ্ডীদাস-রজকিনী প্রেমোপাখ্যান... (মিনি ভার্সন)।

০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চণ্ডীদাস-রজকিনী প্রেমোপাখ্যান... (মিনি ভার্সন)।

"প্রেমের মরা জলে ডোবে না...
চন্ডিদাস আর রজকিনী...
তারাই প্রেমের শিরোমণি গো...
ও সে বারো বছর বড়শি বাইলো
বারো বছর...
ও সে বারো বছর বড়শি বাইলো তবু
আদার দিলো না দরদী...
প্রেমের মরা জলে ডোবে না.."- আবদুল আলীমের গান।



ঘটনা হইলগিয়া, চণ্ডীদাস বারো বছর ধরে শুকনো(পানিশূন্য) পুকুরে ছিপ বড়শি পেতে বসে আছে কিন্তু বড়শিতে আদার দেয়নায়। অন্যদিকে বারো বছর ধরে রজকিনী পুকুর ঘাটে আসেন, কাপড় কাচেন, জল তোলেন, চণ্ডীদাসের দিকে ফিরেও তাকান না। চণ্ডীদাস বসে আছেন অসীম ধৈর্যে....এদিকে পুকুরের পানি শুকিয়ে মাটি চৌচির হয়ে গিয়েছে -সেদিকে চণ্ডিদাসের খেয়াল নাই...তার একটাই অপেক্ষা, কখন রজকিনী আসবে পুকুর ঘাটে- জল নিতে! এদিকে রজকিনীও পানিশূন্য পুকুরের জল নিতে আসে অদৃশ্য এক নেশায়... এক দিন রজকিনীর মনে দয়া হলো। কিংবা নিতান্তই কৌতূহলবশত জিজ্ঞাস করলেন, "মাছ দুই একটা পাইলা ঠাকুর?"
চণ্ডীদাস উত্তর দিলেন, 'দীর্ঘ বারো বছরে এইমাত্র ঠোকর দিল!'

চণ্ডীদাস আর রজকিনীর অমর প্রেমকাহিনীর কথা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। এই চণ্ডীদাস আর রজকিনীর প্রেমকাহিনী কোনো কিংবদন্তি নয়, এটি একটি সত্য ঘটনা যা শুরু হয়েছিল মাগুরা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রাম। চণ্ডীদাস-রজকিনীর স্মৃতিঘেরা ধোপাখালী গ্রামটা পাখ-পাখালির ডাকে ছায়া সুনিবিড় সত্যিকারের বাংলার গ্রাম এখনও বিদ্যমান।

চণ্ডীদাস আর রজকিনীর প্রেমের ইতিহাস নিয়ে রয়েছে বহু মিথ। চণ্ডীদাস ছিলেন বাসলীদেবী মন্দিরের পুরোহিত। সেই মন্দিরের দেবদাসী ছিলেন রামি ও ওরফে রজকিনী। মন্দির ঝাঁট দেয়, ঠাকুরের বাসন-কোসন মাজে, কাপড় ধোয়। এক দিন সন্ধ্যা বেলা মন্দিরে ভোগ নিতে এলে ঠাকুর প্রথমে তার বাহু আঁকড়ে ধরেন। পিতৃমাতৃহীনা নিম্নবর্ণের রামি তাতে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে আর্তনাদ করেন, 'কী করছেন, ঠাকুর!' ঠাকুর তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "আমি তোমার মাঝে রাধারূপ দর্শন করেছি"- বলেই প্রেমিক চণ্ডিদাস তাঁর প্রেমাকাংখি রজকিনীকে জড়িয়ে ধরেন।

বলাই বাহুল্য, দেবদাসী রজকিনীর তখন ঠাকুরের পায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার দশা। রজকিনী দৌড়ে পালালেন। আর কখনো ঠাকুরের সামনে আসে না। দূর থেকে কাজকর্ম সারেন। ওদিকে ঠাকুরের হয়ে গেছে বেহাল দশা। বসে বসে শুধু কীর্তন গান। প্রেমলীলার এক অসামান্য আখ্যান রচনা করলেন তিনি এবং মর্মস্পর্শী সুরে গাইলেন, ‘কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে/কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকূলে/আকুল শরীর মোর বেয়াকুল মন/বাঁশীর শবদেঁ মো আউলাইলোঁ রান্ধন।’

জনশ্রুতি আছে ১৪ শতকের শেষ ভাগের দিকের ঘটনা। চণ্ডীদাসের বাবা ছিলেন এ এলাকার একজন ছোটখাটো ব্রাহ্মণ জমিদার আর রজকিনী ছিল ধোপার মেয়ে। অপরূপা রজকিনীকে দেখে চণ্ডীদাস জাতপাত ভুলে তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু সমাজ তাদের এ প্রেম মেনে নেয় না। নানা অপবাদে জর্জরিত হয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা একদিন সব ছেড়ে পালিয়ে যায় ভারতের বাকুরা ছাতনা গ্রামে। সেখানেও সুখ না মিললে তারা বৃন্দাবনে চলে যান, তারপর তাদের কোনো খোঁজ আর পাওয়া যায়নি।

এই সেই চণ্ডীদাস যিনি বলেছিলেন, ‘কহে চণ্ডীদাস, শুনহ হে মানুষ ভাই, সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।’- একথা বলেছিলেন - রজকিনী নিচু জাতের বুয়া হলেও সে ঠাকুর চণ্ডীদাসের প্রেমিক মনে শুধুই একজন মানুষ!

তথ্যসূত্রঃ "চন্ডিদাস -রজকিনী প্রেম-মাধুর্য"
—দীপক গুহ


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারো বলছি দেশে জঙ্গী নেই উহা ছিল আম্লিগ ও ভারতের তৈরী

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮


আওয়ামী নস্টালজিয়ায় যারা অন্তরের ভিতর পুলকিত বোধ করে তাদের কাছে বাংলাদেশ মানেই হলো জঙ্গী, অকার্যকর অথবা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র। ৩৬ জুলাই পরবর্তী মহা-গণবিস্ফােরনকে কোনাভাবেই মানতে পারেনি তারা ভয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×