'লাইফ ইজ বিউটিফুল'...
Roberto Benigni এর গল্প এবং পরিচালনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন নাজি বন্দী শিবিরের একটি পরিবারের বন্দী জীবন নিয়ে অসাধারণ সুন্দর যুদ্ধ এবং কমেডি ধাঁচের মুভি। সুখ যেমন চিরকাল থাকে না তেমনি দুঃখও চিরকাল থাকে না, এই সিনেমা দেখলে তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা যায়। আমার খুব প্রিয় একটা মুভি।
গল্পের সারাংশঃ- গল্পের নায়ক গুইডু ও তার প্রেমিকা ডোরার প্রেম ও বিবাহ বন্ধন এর ঘটনা দিয়ে ঘটনার শুরু, যাতে মিশে আছে হাস্যরসাত্নক ভাবনা। এর পরের অংশে গুইডু ও ডোরার একমাত্র ছেলে জোসুয়ার সাথে তার বাবার মিথ্যে সাজানো গল্পের এক নির্মম ঘটনা। খুব অল্পে বলতে গেলে এতটুকুই ঘটনা। কিন্তু মুভিটা দেখার পর বোঝা যাবে জীবন কতটা নির্মম হতে পারে, যুদ্ধ কতটা আঘাত করে মানুষকে। নাজি সেনাবাহিনী যখন গুইডু ও তার শিশু ছেলে জোসুয়াকে কনসেনট্রেসন ক্যাম্পে চালান করে, গুইডো তার ছেলেকে সেই বীভৎসতা বুঝতে না দেওয়ার জন্য অদ্ভুত এক গল্প ফাঁদে।
বাবা তার ছেলেকে বোঝায়- এই ক্যাম্প, যুদ্ধক্ষেত্র সমস্তটাই একটা খেলা। এই খেলায় জিততে হলে তাকে কয়েকটা টাস্ক করতে হবে। যেমন- মায়ের জন্য কাঁদা যাবে না, খিদে পেলে চিৎকার করা যাবে না- করলেই পয়েন্ট কাটা যাবে, তাহলেই আর মিলবে না পুরস্কার হিসেবে ট্যাঙ্কটি।
বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যেও গুইডো তার এই গল্পটি চালিয়ে যায়। এমনকি একটি বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে থাকা তার ছেলের সামনে দিয়ে যখন তাকে জার্মানরা নিয়ে যায় গুলি করবার জন্য, তখনও সে তার অভিনয় চালিয়ে যায়- যাতে তার ছেলে বুঝতে না পারে আসলে কি ঘটছে। নিজে বাস্তবের গুলিতে এফোঁড় ওফোঁড় হতে হতেও ছেলের জন্য জিইয়ে রাখে রূপকথা।
আমরা প্রতিদিন যখন খবরের কাগজ খুলছি, খবরের চ্যানেল দেখছি, রাস্তায় হাঁটছি তখন কি মনে হচ্ছে না, আমরা অদৃশ্য এক কনসেনট্রেসন ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি- যেখানে আমাদের পাশ দিয়েই একের পর এক লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ওই লোকগুলো। ওদের মুখগুলো চেনা যাচ্ছে না, কেমন ঝাপসা। কিন্তু বয়ে নিয়ে যাওয়া লাশগুলো কেমন যেন চেনা চেনা, কেমন যেন আমার বন্ধু, আমার ভাইয়ের মতো দেখতে। ওই বীভৎস থেঁতলে যাওয়া শরীরগুলো থেকে দূরে পালাতে চাইছি, কিন্তু পালাতে পারছি না কেন? চ্যানেল পাল্টে ঢুকে যেতে চাইছি বিনোদনের রঙিন দুনিয়ায়, কিন্তু পাল্টাতে পারছি না কেন? আমার হাতে রক্তের দাগ কেন, আমি তো কাউকে মারিনি। ওই ঝাপসা মুখগুলো একটু যেন স্পষ্ট দেখাচ্ছে। মুখগুলো আমার মতোই না? হ্যাঁ, তাইই তো। ওই তো আমিই আমার বন্ধুর, আমার ভাইয়ের লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর আমরা কেমন ভান করছি সবকিছু কি সুন্দর, কি স্বাভাবিক হয়ে আছে, ঠিক যেন রূপকথা।
সময় হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার, ওই মিথ্যে রূপকথাকে আঁকড়ে ধরে থাকবো নাকি ওই সব মুখগুলো থেকে আমার চেহারার মুখোশটা টেনে ছিঁড়ে ফেলব? আপনার স্বজনদের রক্তের দাগ নিজের হাত থেকে মুছেই শান্ত থাকবো নাকি আমার নামধারী হত্যাকারীগুলোকে প্রকাশ্যে চিহ্নিত করবো আমার শত্রু হিসেবে?
নাজীদের হাতে নির্যাতিত, নিপিড়ীত গুইডো চায়নি তার ছেলে এক আতঙ্কের ছবি বুকে নিয়ে বড় হোক, বেঁচে থাকুক একরাশ ঘৃণার উত্তরাধিকার নিয়ে।
আমরা যারা আওয়ামী জাহেলিয়াতের হাতে অকারণ নির্যাতিত-নিপিড়ীত তারা জীবদ্দশায় ভুলতে পারবো না- এদের নিষ্ঠুরতার কথা। আমাদের কাছে 'Life is beautiful' নয় বরং Life is PAIN, Life is STRUGGLE! তাই আমি এবং আমরা চাই- এখনো পৃথিবীর মুখ না দেখা আমাদের প্রজন্মের জন্য রূপকথার পৃথিবী না হোক, একটা আতঙ্ক-বিহীন বাংলাদেশ দিতে চাই, যেখানে তার বাবা একটা জীবন্ত লাশ হয়ে যাওয়া নির্বাক নাগরিক হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:১০