প্রসঙ্গঃ লেখালেখি......
আমি এমন কিছু লিখতে পারিনা, যা পড়ে কেউ মহাজ্ঞানী হয়ে যাবেন কিম্বা পরিক্ষায় অধিক নম্বর পাবেন! আমি ছাইপাঁশ যা- কিছু লিখি তা নিয়ে আমার তৃপ্তি কিম্বা অতৃপ্তি নাই। লেখা ভালো কিম্বা মন্দ হলো তা নিয়েও তেমন বিকারগস্ত নই। প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখি- এটাই আমার ভালো লাগা। আমি মনে করি- লেখা একটা সুঅভ্যাস। সবসময় সেটা মহৎ ও স্মরণীয় কিছু নাও হতে পারে। তবুও লেখার চেষ্টাটা খুব জরুরি।
দীর্ঘদিন কিছু না লিখলে মেধায়, মননে একটা সাময়িক বন্ধ্যাত্ব আসতে পারে। শব্দের উপরে নিয়ন্ত্রণও কিছুটা শিথিল হতে পারে। এটা আমার ক্ষেত্রে হয়- অন্যদের কথা বলতে পারব না।
পড়েই জেনেছি- সমরেশ বসু, হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বনফুল, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর প্রমুখ লেখকেরা রোজই নির্দিষ্ট সময়ে লেখার টেবিলে বসতেন। অবশ্য এটা গদ্য লেখকদের জন্য বেশী প্রোযজ্য। কিন্তু কবিতা বড্ড বেয়াড়া, অভিমানী, দাম্ভিক, খামখেয়ালি, উদাসীন ও জন্ম-স্বাধীন- লিখতে বসলেই কবিতা লেখা যায় না। কবিতার জগতের মানুষ মাত্রই জানেন, প্রথম দুটি একটি লাইন মাথায় না এলে লিখতে বসাই যায় না। সাদা খাতায় অনর্থক কাটাকুটির খেলা চলে। সেই প্রথম দুতিনটি লাইন কখন আসবে কেউ জানে না। কবিও নয়। পথে যেতে যেতে, শাওয়ার করতে করতে, কোনও গান শুনতে শুনতে, অথবা নির্ঘুম রাতেও কবিতা আসতে পারে।
দীর্ঘ দিন লেখা না এলে কী যে অসহায় লাগে, ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। কিন্তু সেটাকে প্রশ্রয় দিলে বা ভয় পেলে কিংবা হতাশায় মরতে থাকলে না-লেখার দৈত্য আপনাকে গিলে ফেলবে। যাঁরা প্রতিদিন অনর্গল গোটা গোটা কবিতা লিখে ফেলেন তাঁদের দৈবী অথবা দানবিক প্রতিভাকে দূর থেকে সালাম জানাই।
এদেশে বা বিদেশে যাঁরা খুব কম লেখেন এবং প্রতিটি লেখাই যাঁদের স্বতন্ত্র ম্যাগনাম ওপাস, তাঁরা ওই না লেখার মুহূর্তগুলিতেও গভীরভাবে অলিখিত লিখন-স্বপ্নে মগ্ন থাকেন। লেখার সবুজ-সম্পদ সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন। সম্ভাব্য সৃষ্টি-কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৃতি, মানুষ, ইতিহাস ও পুরাতত্ত্বের সঙ্গে পানি ও বাতাসের মতো মিশে থাকেন। অর্থাৎ যখন তাঁরা লিখছেন না, তখনই লেখার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত হয়ে থাকেন। সেটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না।
চিলির অতিশয় জনপ্রিয় কবি নিকানোর পাররার জীবনীগ্রন্থ পড়ে জেনেছিলাম- তিনি যখন কবিতা লিখতেন না তখন তিনি লিখে রাখতেন- তাঁর নাতিপুতিদের মুখের কথা, তাঁর বাড়ি পরিষ্কার করতে আসেন যে মহিলা রোসিতা আবেন্দানো, তার কথা। এমনকি রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো অচেনা মানুষের কথা, কোনও দৃশ্য বা মুহূর্তের কথা তিনি টুকে রাখতেন নোটবুকে। তারপর অবসর মতো সেগুলোকে নিজের মত করে রূপান্তরিত করতেন কবিতায়।
আসল কথাটা হল, লিখুন বা না লিখুন, সব সময়ই আপনাকে লেখার ভাবনার মধ্যে ডুবে থাকতে হবে এবং পড়তে হবে। প্রচুর পড়তে হবে। একজন ভালো পাঠক না হলে একজন ভালো লেখক হওয়া যায় না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


