বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যার....
আমরা যারা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের 'বই পড়া আন্দোলন' এর সাথে জড়িত ছিলাম তাদের কাছে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যার হলেন আদর্শ দার্শনিক। তিনি বক্তব্য রাখতেন বিভিন্ন বিষয়ে। অনেক সময়ই গ্রাম বাংলার প্রবাদ নিয়ে ব্যাখ্যা দিতেন, খনার বচণের ব্যাখ্যা দিতেন। বক্তব্য দিতেন অনির্দিষ্ট সময় নিয়ে। এমনও দেখেছি- টানা দুই ঘন্টা বক্তব্য পিনপতন নীরবতায় দর্শক শ্রোতারা শুনছেন, অনেকেই তাঁর বক্তব্য নোট করে নিচ্ছেন। মোদ্দা কথা বেশীরভাগ শ্রোতাদের মতো আমিও তাঁর বক্তব্য গ্রোগাসে গিলতাম.....প্রসংগক্রমে তাঁর বক্তব্য বিভিন্ন যায়গায় ব্যবহার/ প্রয়োগ করি। অনেক বছর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যাওয়া হয়না, তবে স্যারের অনেক বক্তব্য মন-মস্তিস্ক এবং হৃদয়ে স্থায়ী আবাস হয়ে আছে। অনেক বছর আগে তিনি বিভিন্ন সময় ন্যায়নীতি উপদেশ মূলক বক্তৃতায় যা বলেছিলেন তা হুবহু মনে না থাকলেও বিষয়বস্তু ভুলিনি। যেহেতু স্মৃতি নির্ভর করে লিখছি তাই অনেকটাই এলোমেলো হলেও মূল বক্তব্য আমার মতো করে প্রকাশ করছিঃ-
* অপাত্রে দান করবে না। দুর্জনের উপকার করবেনা। মূর্খকে উপদেশ দিতে যাবেনা। অবাধ্য লোককে কিছু করতে বলা নিরর্থক। জড় প্রকৃতির লোককে সৎ বুদ্ধি দান নিষ্ফল। যে নদী প্রবল স্রোতস্বিনী একমাত্র সেই নদীকে বাঁধ দিয়েই জল বিদ্যুৎ তৈরী করা যায়। লোহাকেই ইস্পাতে পরিণত করা যায়, কিন্তু সোনাকে নয়।
* ভীরুর মধ্যে যদি সাহস না থাকে তাহলে তার হাতে শত অস্ত্র তুলে দিলেও সে ব্যবহার করতে পারবেনা। কারো মধ্যে যদি মূল্যবোধ না জন্মায় তাহলে তাকে ন্যায় নীতি ধর্ম কথা বলা নিরর্থক।
* শূন্য থেকে কিছুই নব জন্ম নিতে পারেনা। জন্ম সূত্রে জেনেটিক উত্তরাধিকার না নিয়ে জন্মালে অথবা সদ গুরুর সান্নিধ্যে এসে আত্ম সচেতনতা লাভ না করলে বৃষ্টির ধারার মত জ্ঞান কারো ওপর বর্ষিত হলেও তা মানুষ মুছে ফেলে।
* একমাত্র বদলে যেতে ইচ্ছুক মানুষ ছাড়া কোনো মানুষকে বদলানো যায়না। আপনি ইচ্ছা করলে কাউকে ক্ষমতায়িত করতে পারবেন না, যদিনা তার মধ্যে পরিবর্তনের ইচ্ছা জাগে। তৈল ধারনক্ষম প্রদীপেই তেল দিতে হয়ে। মাটিতে তেল দিয়ে লাভ হয়না। সমুদ্রই বৃষ্টির পানি অক্লেশে ধারণ করতে পারে। খানা ডোবায় সে পানি উপছে পড়ে চারিদিকের রাস্তা ঘাট ডুবিয়ে দেয়।
* প্রকৃতির রাজ্যে একই মাটি পানি বাতাস পেয়েও ভিন্ন ভিন্ন বৃক্ষ হয় কেন? কেন সব বৃক্ষ ফল দেয়না? ফল দিলেও সমান সুস্বাদু হয়না কেন সব ফল? রাষ্ট্র সবাইকে স্বাক্ষর করা শিখাতে পারে, কিন্তু শিক্ষিত নিজেকে হতে হয়। অপাবিদ্যা সবাই লাভ করতে পারে, কিন্তু পরাবিদ্যা গুরুর কাছে লাভ করতে হয়।
* প্রতিভা সৃষ্টিকর্তার দান। তা সবার মধ্যেই কম বেশী আছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কাউকে যোগ্য করে পাঠান না। যোগ্যতা অর্জন করতে হয় । সবার আগে যোগ্য হয়ে উঠতে হয় আত্ম জ্ঞানের জন্য।
* একজন ক্ষৌরকর্মী, আমরা যারা প্রচলিত ভাবে নাপিত বলি। পেশাদারী কাজের সময় একজন ক্ষৌরকর্মী যদি রাজার কান ধরে কানের পাশের চুল কিম্বা কানের লোম পরিস্কার করে বলে- "আমি রাজার কান মলে দিয়েছি" সেটা নিতান্তই বাঁদর সুলভ কাজ বৈ অন্যকিছু না। সেই বাঁদর সুলভ স্বভাবের এক শ্রেণীর মানুষ আমাদের সমাজে আছে- যারা বিদ্যান, জ্ঞানী-গুণী মানুষের নামে নিন্দা করে, অসম্মান জনক মন্তব্য করে নিজেকে প্রচারণায় রাখতে পছন্দ করে- তারা মূলত ক্ষৌরকর্মীও নয়, স্রেফ নাপিত!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


