বিশ্বাস- অবিশ্বাস এবং বাস্তবতা....
খেজুরের রস.......
মহানগরী ঢাকায় মর্নিং ওয়াকের জন্য ধানমণ্ডি লেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, গুলশান, বারিধারা, উত্তরায় বিভিন্ন নামে অনেক গ্রুপ আছে- যারা ছোট ছোট গ্রুপে হাটাহাটি করে ছুটির দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ে কিছুক্ষণের জন্য গ্রুপভিত্তিক একত্রিত হয়। আমি দুইটা গ্রুপের সদস্য হিসাবে সুবিধা মতো কোনো দিন ধানমণ্ডি লেকে, কোনো দিন সংসদ ভবনের যাই। আজ সকালে গিয়েছিলাম ধানমণ্ডি এলাকায়। মধ্যবয়সী এক লোক তিন হাড়ি খেজুরের রস নিয়ে যাচ্ছে- কাছাকাছি এক ফ্ল্যাটে। যে ফ্ল্যাটে খেজুরের রস নিয়ে যাচ্ছে- সেই ফ্ল্যাটের মালিকও আমাদের মর্নিং ওয়াক ক্লাবের মেম্বার। জিজ্ঞেশ করে জানলাম প্রতি হাড়ি রসের দাম- ৫০০ টাকা (এক হাড়িতে সাড়ে তিন লিটার রস)।
যারা খেজুর গাছ কেটে রস বের করে তাদের 'গাছি' বলে। এই গাছির বাড়ি কেরানীগঞ্জ থানার হজরতপুর। এই লোক লেকে হাটতে আসা ব্যক্তিদের কাছে প্রতি গ্লাস ১০০/- বিক্রি করে। আবার আগে থেকেই কেউ অর্ডার করলে পরিমাণ মতো সরবরাহ করেন। তিনি জানিয়েছেন- 'তার নিজের খেজুর গাছ নাই, অন্যের গাছ কেটে অর্ধেক রস গাছের মালিককে দিতে হয়। মোহম্মদপুর বেড়িবাঁধ পেরিয়ে বুড়িগঙ্গার ওপারে হজরতপুর, বছিলা/ আটি এলাকা থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে প্রতি হাড়ি খেজুরের খাটি রস কমপক্ষে ৫০০ টাকা বিক্রি করে। খুচরাও বিক্রি করে। সাথেই গ্লাস, ছাকনী আছে। অনেকেই প্রতি গ্লাস ১০০ টাকায় কিনে খায়।' খেজুরের রস/ গুড়ের জন্য বিখ্যাত যশোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গায় এক হাড়ি খেজুরের রসের দাম ৩০০/-! গাছি জানালেন-"তিন হাড়ি (প্রায় দশ লিটার) ভালো রসে সর্বোচ্চ দেড় কেজি থেকে সর্বোচ্চ দুই কেজি গুড হয়। ভেজাল না দিলে এক হাড়ি গুড় তৈরী করে ১২০০ টাকার কমে বিক্রি করা সম্ভব না।"
খেজুরের গুড়.....
ছোট ছেলে খেজুর গুড় কিনে ধরা খেয়েছে তাই 'বিশিষ্ট অভিজ্ঞ ক্রেতা' হিসেবে আমাকেই গুড় কিনতে কাওরান বাজার গুড়ের মার্কেট যেতে হয়। কিন্তু গুড় কিনতে গিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নাই। সব দোকানীই 'আসল গুড়'এর গ্যারান্টি দেয়। "ভেজাল ছাড়া যয়শৈর্যাডা আসল খাজুর গুড় নিতে হইলে এক দাম ৬০০/- কেজি।" ফরিদপুইর্যাডা ৪৫০/-, মানিকগইঞ্জা হাজারী গুড় ১৫০০/-, মেহেরপুইর্যাডা ৫৫০/-...."! এইডা অইলো পাবনাইয়া জিরানী গুড়- এইডার কেজি একদাম আস্টোশ্যো টাকা।"
নানাবিধ- "গ্যারান্টি /একিন(বিশ্বাস) রাখেন/ব্যবসা কইরা খাই- চুরি করতে আইনায়/আপনেরে ঠগাইয়া বড়োলোক অইয়া যামুনা/আল্লায় যেনো হারাম কামাই না খাওয়ায়/আপ্নেরে ঠগাইয়া আল্লাহর কাছে কি জবাব দিয়াম"- ইত্যাদি ইত্যাদি ডায়লগ শুনে অবশেষে 'একিন রাইক্কা' "যয়শৈর্যাডা আসল খাজুর গুড় ৬০০/- কেজি" হিসেবে দুই কেজি গুড় কিনেছি। আসলে খেজুর গুড়ের নামে চিনি দিয়ে বানানো গুড়! ঠকা তো ঠকাই, কাজেই নিজের ঠকা নিয়ে বিস্তারিত বলার কিছু নাই।
আরও একটুঃ ফেসবুকে একজন বন্ধু ছিলেন, রাজশাহীর লোক। মূল পেশা- শিক্ষকতা। নানাবিধ সোশ্যাল ওয়ার্কে জড়িত, যেমন- শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণ, বানভাসি, রোহিঙ্গা, বন্যার্তদের সাহায্য সহযোগিতা ইত্যাদির অর্গানাইজ করেন। 'নিজস্ব বাগানের" আম, লিচু ছাড়াও "নিজ তত্বাবধানে তৈরী" খাটি গুড়, নিজস্ব খামারের" ঘি বিক্রি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। অনেক সৃজনশীল ইভেন্টে সক্রিয়। তাঁর থেকে কয়েকবার আম, লিচু, গুড় কিনেছি এবং নিতান্তই তাঁর অনুরোধে আম, লিচুর রিভিউ দিয়েছি। যেটা ভালো, সেটা হাইলাইটস করেছি। খারাপ হলে চুপ থেকেছি। তাঁর 'নিজস্ব তত্বাবধানে তৈরী খাটি খেজুরের গুড়' এবং 'নিজস্ব খামারের গরুর দুধের ঘি' মোটেই ভালো হয়নি, তেমন একটা রিভিউ দেওয়ার পর আমাকে ব্লক করে দিয়েছে!
সতর্ক সংকেতঃ অনলাইনে বিক্রেতাদের লোভনীয় বিজ্ঞাপনের খপ্পরে পরে ভেজাল পণ্য কিনলেও সত্য রিভিউ দিয়ে ব্লক খাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:১৮