একটা জনমত জরিপ....
নিজ উদ্যোগে একটা জরিপ কাজে গত কয়েক দিন বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষদের সাথে কথা বলেছি। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান থাকলেও নিরপেক্ষ মতামত জানতে, বুঝতে নিজেকে শতভাগ নিরপেক্ষ রেখেছিলাম। কিন্তু যাদের সাথে কথা বলেছি তাদের অনেকেই রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না হলেও সবাই রাজনৈতিক সচেতন (আমাদের দেশের সবাই রাজনীতির সাথে জড়িত না হলেও অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন- তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নাই)।
যাই হোক, আমি যে ৩২ জন মানুষের সাথে কথা বলেছি তাদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী সমর্থক তারা প্রায় সবাই একবাক্যে জামায়াতের পক্ষে কথা বলেছে এবং সরাসরি বিএনপির বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সমর্থক হয়েও তারা কেন জামায়াতের পক্ষে তার উত্তরে বলেছে- "বিএনপি ঠেকাতে"!
"বিএন ঠেকাতে হবে কেন?"- এর জবাবে বলেছে- 'সময় সুযোগ মতো জামায়াতকে সহজেই উৎখাত করা যাবে- যা বিএনপিকে করা যাবেনা।"
যারা জামায়াতের নেতা কর্মী সমর্থক তারা নিজেদের পক্ষেই বলবে তা স্বাভাবিকতা এবং নিজ দলের প্রার্থীকেই ভোট দিবে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, অনেকেই জামায়াতের সাংগঠনিক বিষয়ে প্রসংশা করলেও তাদের মধ্যে মাত্র দুইজন জামায়াতে ভোট দিবে।
ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে একেবারেই নিরুৎসাহিত এবং অবজ্ঞা করে উড়িয়ে দিয়েছেন বেশীরভাগ মানুষ। ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে অনেক শিক্ষিত এবং খেটে খাওয়া মানুষের মূল্যায়ন হচ্ছে- "ওরা তো ছাত্রলীগ আর ছাত্র শিবিরের লোক। ওরাইতো গত ১৫/১৬ বছর চাঁদাবাজি, মারামারি করেছে। ওরা আওয়ামী-জামাতের দোসর। ওরা রাস্তায় শ্লোগান দিতে পারে, মব সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে ওদের গ্রহণ যোগ্যতা নাই বা ঠাঁই পাবেনা"।
আবার বিএনপি নামধারী কিম্বা একদা বিএনপি পরিবারের নেতা কর্মী সমর্থক সদস্য ছিলেন তাদের বড়ো একটা অংশই ছাত্রদের নতুন দলের প্রতি অত্যন্ত নমনীয় এবং বিএনপির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে। এই শ্রেণীর প্রায় সবাই ২০০৭ সাল থেকেই বিএনপি তে তাদের অবস্থান হারিয়েছে বিভিন্ন অপকর্মের জন্য। এরা গত পনেরো ষোল বছর নিজেদের সেফ জোনে রেখে ফেসবুকে বিএনপি সমর্থকদের ধোকা দিয়ে সদ্য পলাতক সরকারেরই সুবিধাভোগী ছিলেন। এখন সরাসরি জামায়াতের পক্ষে না বলে ছাত্রদের নতুন দলের পক্ষে বলে।
যারা আওয়ামী-জামায়াতী নন কিন্তু বিএনপির প্রতি দুর্বল তারা বিএনপি নেতৃত্বের অথর্বতার কথা বলেছেন, হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বিএনপির ব্যার্থতার মূল কারণ উল্লেখ করেছেন- বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যে সমন্বয়হীনতা। দেশ বিদেশে বিএনপি বিরুদ্ধ অপ-প্রচারণার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারা। শারীরিক চলত শক্তিহীন নেতারা বিএনপির বোঝা। মধ্য স্তরের সব নেতাদের মধ্যে নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবা। তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মূল্যায়ন না করা। বিএনপি রাজনীতিতে সময়ের চাহিদার সাথে একাত্ম হতে পারেনি, জনগণের স্পেশালি তরুণদের মনোভাব বুঝতে পারছেনা, অথচ ভোটের রাজনীতিতে তরুণদের ভূমিকা অনেক বড়ো সেই তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে না পারা। সব চাইতে বড়ো অভিযোগ, যুগযুগ ধরে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রশাসন, আওয়ামী-ইন্ডিয়া সাড়াশি আক্রমণের পরেও তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাদের সহানুভূতিশীল, নমনীয় আচরণ এবং দোদুল্যমানতা মেনে নিতে পারছেনা!"
বিএনপির প্রতি নমনীয় সাধারণ মানুষের প্রায় সবারই মতামত- ' বিএনপি যদি ভেবে থাকে খালি মাঠে গোল দিবে তাহলে মস্ত বড়ো ভুল করবে। জনাব তারেক রহমানের উচিৎ দ্রুত সময়ে দেশে ফিরে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা এবং দেশ্যব্যাপী কর্মী সমর্থকদের সাথে মাঠে নামা। বিএনপির উচিৎ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদের মনোভাবকে সম্মান জানিয়ে আওয়ামী-ইন্ডিয়া বিরোধিতায় একাত্মতা প্রকাশ করা এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কারে সহযোগিতা করা। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের বিষয়ে এখনই যোগ্য প্রার্থীদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া এবং একই সাথে প্রতিটি আসনে আগে থেকেই বিকল্প প্রার্থী ঠিক করে রাখা। '
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:২৫