somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

চেঙ্গিস: বার্থ অভ অ্যান এম্পায়ার......

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চেঙ্গিস: বার্থ অভ অ্যান এম্পায়ার

বাংগালী চরিত্রের অন্যতম স্বভাব হচ্ছে- আমরা কারোর উপর রেগে গেলেই তার চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করি....আমরা যতই কারোর চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করিনা কেনো- আসলে আমরা আমাদের কত পুরুষ সম্পর্কে জানি? বড়ো জোর- তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত...তারপর? জানি না। জানার সুযোগও কম। কিন্তু আমি, আপনি, আমরা জানিই না আপনার আমার, আমাদের ধমনিতে বইছে শত শত বছর আগের কোনো রাজার রক্ত। অবাক হওয়ার কিছুই নেই। বিজ্ঞানী ও নৃতাত্ত্বিকেরা কিন্তু এমন কথাই বলছেন।

২০০৩ সালে নৃতাত্ত্বিকদের এক গবেষণায় পৃথিবীতে এখন প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে চেঙ্গিস খানের ডিএনএ আছে! আরেক গবেষণায় জিন গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, শুধু চেঙ্গিসের ডিএনএ–ই নয়, আরও বেশ কয়েকজন নৃপতির ডিএনএ এখনো অনেকের মধ্যে বিদ্যমান। এ বিষয়ে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিকস- এ গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি হয়েছে যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম ট্রাস্ট স্যাঞ্জার ইনস্টিটিউটের জিন বিশেষজ্ঞ ক্রিস টায়লার–স্মিথের নেতৃত্বে। এই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রসায়নে দুবার নোবেল পুরস্কার পাওয়া ব্রিটিশ জৈব রসায়নবিদ ফ্রেডেরিক স্যাঞ্জার। তিনি প্রথমবার নোবেল পেয়েছিলেন প্রোটিনের কাঠামো নিয়ে গবেষণা করে এবং দ্বিতীয়বার পেয়েছিলেন ডিএনএ সিকোয়েন্স গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে।

ডিএনএ সিকোয়েন্সিং পদ্ধতি অনুসরণ করে পূর্বপুরুষের ইতিহাস জানা যায় ডিএনএ সিকোয়েন্সিং পদ্ধতি অনুসরণ করে। বিজ্ঞানীরা এশিয়ার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের Y ক্রোমোজম পরীক্ষা করে এসব তথ্য পেয়েছেন। তাঁরা ২০ জনের মধ্যে এমন ১১টি Y ক্রোমোজম সিকোয়েন্স পেয়েছেন, যা আরও বেশি লোক বহন করছে। ১১টি সিকোয়েন্সের মধ্যে একটি মঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিস খানের। তার মানে চেঙ্গিস ছাড়া আরও কমপক্ষে ১০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির ডিএনএ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে আছে।

বিজ্ঞানবিষয়ক ব্রিটিশ জার্নাল নেচার নিউজ–এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসংখ্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকত। এর ফলে তাঁদের সন্তানের সংখ্যাও ছিল অনেক। এর ফলেই তাঁদের বংশধরেরা বর্তমান সময় পর্যন্ত টিকে আছে।

এই চেঙ্গিসের জীবনেও প্রেম ছিলো।
ভাবছেন, 'চেঙ্গিস খান ' এর মতো মানুষের জীবনেও প্রেম! এতো পাথরে ফুল ফোটার মতো!

চেঙ্গিস খান।
যার নাম শুনলেই ভয়ে শিউড়ে উঠেন অনেকে। পরাজিত জাতিদের কাছে তিনি ছিলেন এক মুর্তিমান আতংক। এই মঙ্গোল সম্রাট ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম অপরাজিত যোদ্ধা। যিনি এককভাবে জয় করেছিলেন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অঞ্চল এবং যিনি ৪ কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। ধ্বংস, হত্যা, চাতুর্য, ক্ষমতা লিপ্সা এবং রণকুশলতার এক অভূতপূর্ব মিশেলে গড়া চেঙ্গিস খান বা তিমুজিনের জীবন। এই দুধর্ষ সমর নায়কের জীবনে প্রেম ছিল, বীররসের সাথে ছিল প্রেমরস।

চেঙ্গিসের জীবনের হাজার হাজার নারীর সঙ্গ এলেও বোর্তে ছিল তার প্রথম ও শেষ ভালবাসা। অসংখ্য সন্তানের পিতা হওয়া সত্ত্বেও শুধু বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চার ছেলেকেই উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করেছিলেন তিনি। বোর্তে আর তেমুজিনের এই ভালবাসা ইতিহাসে বেঁচে আছে অনন্য হয়ে। বেঁচে আছে বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চেঙ্গিসের চার ছেলের নাম জোচি, তুলুই, ওদেগিই, চুঘতাই খানের মাধ্যমে।

মাত্র নয় বছর বয়সে তার পিতা মোঙ্গল রীতি অনুযায়ী তার জন্য টুকটুকে সুন্দরী বউ ঠিক করেন- নাম বোর্তে। পাশ্ববর্তী ওংগিরাত গোত্রের রাজকুমারী ছিলেন তিনি। তৎকালীন রীতি অনুযায়ী কণের বয়স ষোলো না হওয়া পর্যন্ত বউ থাকবে বাপের বাড়ি। যে দিন তার বয়স ১৬ বছর পূর্ণ হবে সে দিন ঘটা করে তাকে স্বামীর বাড়ি আনা হবে। তিমুজিন নতুন বউকে দেখলেন আর শিশু অবস্থাতেই মহা প্রেমে পড়ে গেলেন। সময় পেলেই ছুটে যেতেন শ্বশুরবাড়ি। স্ত্রীর সঙ্গে শিশুতোষ খেলা খেলে আবার বাড়িতে ফিরে আসতেন। এভাবেই হাসি- আনন্দ-ফুর্তির মধ্যে তাদের দিন কাটছিল। শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই 'কুনু কুনু কুসু কুসু' খেলা খেলতেন। 'কুনু কুনু কুসু কুসু' মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে প্রচলিত এক ধরনের পুতুল খেলা।

তিমুজিনের বয়স তখন ১৬, সে দিনই তারা প্রথম বাসর করতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই অপহৃত হলেন বোর্তে। মারকিত নামক এক মরু বেদুইন গোত্র প্রধান অপহরণ করে নিয়ে যায় তিমুজিনের স্ত্রী বোর্তেকে। এক বছর পর, অর্থাৎ ১৭ বছর বয়সে তিমুজিন গোত্র প্রধানদের সহায়তায় উদ্ধার করে ঘরে তুলে আনলেন তার বাল্যবধূ বোর্তেকে। অবশ্য খুব বেশি দিন একসাথে থাকা হল না স্ত্রীকে নিয়ে। কিছুদিনের মধ্যেই আবারও এল বিচ্ছেদ। প্রতিপক্ষ অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যা করল তিমুজিনের গোত্রের লোকদের। সেই সাথে তুলে নিয়ে গেল বোর্তেকেও। এই ঘোর বিপদে তেমুজিন পিতৃবন্ধু তুঘরুল খান ও নিজ বন্ধু জমুখার সাহায্যে উদ্ধার করা হল বোর্তেকে। ফিরিয়ে আনার কিছুদিন পরেই বোর্তের গর্ভে জন্ম নিল চেঙ্গিসের বড় ছেলে জোচি। কিন্তু শত্রু শিবির থেকে বোর্তের মুক্ত হওয়ার মাত্র নয় মাস পর জন্ম হওয়ায় জোচির পিতৃ পরিচয় নিয়ে কানাঘুষা শুরু হল। তবে চেঙ্গিস আজীবন জোচিকে নিজের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন, স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন তার প্রথম প্রেম বোর্তেকে।

প্রেম হিংস্রতম মানুষটিকেও কাউকে ভালোবাসতে শেখাতে পারে, তাবোধহয় চেঙ্গিস খাঁর এই প্রেম কাহিনী না পড়লে জানা যেতনা৷ বহুসন্তানের পিতা হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র বোর্তের চার সন্তানকেই স্বীকৃতি দানের মধ্যে...স্ত্রী বোর্তের প্রতি তার অগাধ প্রেম প্রতিফলিত হয়েছে৷ শিশু কালের বিবাহকে মান্যতা দেওয়া বা অপহৃত স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার যে বারংবার প্রচেষ্টা তা গভীর প্রেমেরই ইঙ্গিত বহন করে৷ এবং তার মতো এক অসম যোদ্ধা যেকিনা তার অপহৃত স্ত্রীকে এত সমাদরে স্থান দিয়ে বিতকির্ত গর্ভজাত প্রথম সন্তানকেও স্বীকৃতি দান করেন, পৃথিবী তাকে যতোই হিংস্র বলুক অন্তত এব্যাপারে তিনি অত্যন্ত উদার মনস্ক ছিলেন৷ যেখানে লঙ্কা থেকে প্রত্যাবর্তনের পর স্বয়ং সীতাকে পর্যন্ত অগ্নিপরীক্ষা থেকে অব্যাহতি দেননি রামচন্দ্র৷

সৌজন্য স্বীকার:
(১) চেঙ্গিস: বার্থ অভ অ্যান এম্পায়ার।
(২) Stay Curioussis.
(৩) হিস্ট্রি অব তেমুজিন এবং চেংগিসখান উইকিপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×