somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ ভালোবাসার বৃত্তে কবিতা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ ভালোবাসার বৃত্তে কবিতা
ব্লগার, কবি খায়রুল আহসান


একজন সাহিত্যিক, প্রবন্ধিক অনেক শব্দ বাক্যে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে অনেক পৃষ্ঠা জুড়ে যা লিখেন, একজন কবি তা মাত্র কয়েকটি শব্দেই চমৎকার ভাবে তুলে ধরেন- এখানেই কবির ক্যারিশমাটিকতা! কবিতা আমার ভালো লাগে, কবিদের আমি সম্মান করি এবং নিজের কাব্যপ্রতিভা নাই বলেই কবিদের আমি হিংসাও করি। তবে কবি ও কবিতা পাঠকদের দুর্দিন বললে ভুল বলা হবেনা। কারণ কবি তার মনের মাধুরি মিশিয়ে কাব্য রচনা করেন নিজের তৃপ্তির জন্য, পাঠকের হাতে কবিতা তুলে দিতে পারলে কবির তৃপ্ততা পূর্ণ হয়। অথচ এখন কবিতার পাঠক খুব কম!

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যার একবার বলেছিলেন- "আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের খুব কম ছাত্র-ছাত্রী ছিলো যে বা যারা ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস নাইন পর্যন্ত একটা কবিতা লিখেনি!" আমি অবশ্য ক্লাস থ্রি তে পড়ার সময়ই এক মেয়ের খাতায় গোপনে লিখেছিলাম- "তুমিও থ্রিতে পড়ো, আমিও থ্রিতে পড়ি। তোমারও ৪টা দাঁত পড়েছে, আমারও ২ টা দাঁত পড়েছে। তুমিও নাইড়া, আমিও নাইড়া- I love you"!
ধরা পড়ে কানমলা খেয়ে আমার কাব্যচর্চা তখনই ইন্তেকাল করে.....কিন্তু কবিতা প্রেম রয়ে গেছে! হয়তো আমার মতো একজন দুর্দশাগ্রস্থ অকবিদের জন্যই কবি খায়রুল আহসান লিখেছেন- 'অকবিদের কবিতা'!
"হয়তো সবই যাচ্ছে তা,
উর্বর বাংলার জনসংখ্যার মত
অগণিত.....
অসহায়....
জন্মায় আগাছার মত।"

(পরের আশাব্যঞ্জক স্তবক বাদ দিলাম)

অনুভবের বৈচিত্র্য এবং প্রকাশভঙ্গির সারল্য কখনো কখনো কবিতার সম্পদ হয়ে উঠতে পারে শ্রদ্ধেয় খায়রুল আহসানের অনেক কবিতাই তার উদাহরণ। তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য স্বতঃস্ফূর্ততা ও স্বচ্ছতা। যা সহজেই পাঠককে গভীর ভাবে স্পর্শ করে। তাঁর বৈচিত্র্যময় কবিতাগুচ্ছের মধ্যে আবেগঘন স্ফূরণ আছে তা প্রচলিত কবিস্তুতির চেয়ে অনেকটাই স্বতন্ত্র। তিনি যখন বলেন,

“ভালো থেকো পাখি তুমি, ভালো থেকো।
আজীবন সুখে থাকো, আদরে থেকো।"

- তখন সংহত বেদনার আভাস তাঁর উচ্চারণকে দেয় একবুক শূন্যতার অনুভূতির অনন্যতা। কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও বলবার, যিনি এভাবে বলতে পারেন, তিনি কেন আরও একটু রোমান্টিক নন! মাঝে মাঝে অতিরিক্ত প্রাঞ্জলতা কবিতাকে একেবারে আটপৌরে করে দেয়, যাকে কবিতা বলে চেনা মুশকিল হয়, বরং বলা যায় চিরন্তন স্নেহান্ধ এক পৌঢ়ের আর্তনাদ।

লেটার মার্কস কাব্যগ্রন্থের (৮০ টি কবিতা) কবিতাগুলিকে বিষয়ের ভিত্তিতে অনেক ভাগে ভাগ করা গেলেও প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়– ব্যক্তিগত অনুভবভিত্তিক, আত্মচেতনা ভিত্তিক এবং পারিপার্শ্বিক সচেতনতাভিত্তিক। প্রথমোক্ত কবিতার মধ্যে বেশ কিছু কবিতা তাঁর সৃজনশীল উপলব্ধির অভিব্যক্তি।অন্তরঙ্গ, অমল-সুধার প্রেম-কাহিনী, স্নেহ ভালোবাসা মমতাময় এই জাতীয় কবিতা। 'আমি বৃক্ষ হবো' কবিতায় একটি গাছ ও একটি নদীর রূপকল্পে মন ছুঁয়ে যায়। এই কবিতাগুলি ভাবনার মৌলিকতায় রূপকল্পের ব্যবহারে স্বতন্ত্র উল্লেখের দাবি রাখে। আত্মচেতনা ভিত্তিক কবিতাগুলোতে কবির সমাজসচেতনতার প্রকাশ। সমাজে নারী-শিশুর অবস্থান নিয়ে যেসব কবিতা তিনি লিখেছেন, একে তার মধ্যে অনায়াসেই ফেলা যায়। পারিপার্শ্বিক অসংগতি বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেখানে তিনি সরব হয়েছেন, সেখানে আর একটু ইঙ্গিতধর্মী হলে কবিতাগুলি আরও মর্মস্পর্শী হত।

আরও একটু পরিকল্পনা করে কবিতাগুলিকে সংকলিত করলে বিষয়বৈচিত্র্যের দিকটি আরো পরিস্ফুট হত। এবার কয়েকটি ভালো-লাগা কবিতার কিছু পংক্তি উদ্ধৃত করা যাক-

“কনকপ্রভা,
তুমি মাঘের কোমল রোদ্দুর হতে এসেছিলে,
...............…
..................
তুমি আষাঢ়ের মেঘ হতে চেও না।
......…..........
.…................
তুমি নরম রোদ্দুর হয়েই থেকো
চোখে মুখে মেখে হবো, আঁধারেও চক্ষুষ্মান!”


এ কবিতাটির নাম কনকপ্রভা। কবিতার অন্তর্লীন জীবনবোধের গভীরতা পাঠককে নাড়া দেয়। জীবন-মৃত্যুর বৈপরীত্য সত্ত্বেও তাদের পারস্পরিক একাত্মতা কবি খুব সূক্ষ্ম ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

আবার কবি যখন তার 'মন খারাপের পদ্য' লিখেন-

কারো সযত্ন অবহেলা যদি বুকে বেজে ওঠে,
চোখের পাতা দুটো তখন ভারী হয়ে ওঠে।
................
................
স্বপ্নেরা খেলা করে আমায় নিয়ে, শিশুদের মত
কখনো হাসায়,কখনো কাঁদায়। আমি বালিশকে
আঁকড়ে ধরে একটা অবলম্বন খুঁজে যেতে থাকি
কোনো গানের চরণ শুনে যদি স্মৃতি মনে ভাসে...”

তখন তাঁর প্রেমিক শিশু মনের আকুতি ঝর্নার কলধ্বনি হয়ে বাজে।

'জীবনের মৃদুহিল্লোল' কবিতাটি আমার হৃদয়েও মৃদু দোলা দিয়ে কৈশোর উত্তীর্ণ জীবনের কোনো এক সময়কে অতীতের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে। বস্তুত, এ রকম বেশ কয়েকটি কবিতা রয়েছে এই সঙ্কলনে যে কথা গোড়াতেই উল্লেখ করেছি। এই কবিতাগুচ্ছের বৈশিষ্ট্য, এগুলি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে রচিত হলেও এক অদৃশ্য বন্ধন রচনা করেন কবি, তা সত্যিই ব্যতিক্রমী।

ভালোবাসার বৃত্তে কবিতা বইয়ের শেষ দুটি কবিতা 'একদিন এমনই হবে' এবং অজানা গন্তব্যে অচেনা পথে' কবিতায় স্রষ্টা এবং সৃষ্টির অমোঘ বিধানের এক মরমী উচ্চারণ কবির ভাষায় খুঁজে পাওয়া যায়।

নারীদের শাড়িসজ্জা, এক ফোঁটা জলের স্মৃতি, ঝড়া পলেস্তারা, সমুদ্র ও নারী, কোনো এক সুস্মিতার হাসিমুখ, দিশাহীন আমি, বর্ণহীন পৃথিবী, উপেক্ষিত সম্ভ্রম, উজ্জ্বল পিংগল কৈশোর..... এমন আরও কতো সুন্দর সুন্দর কবিতা- কোনটা রেখে কোনটা বলবো!

কবি খায়রুল আহসান সাহেব তার অনেক কবিতায় 'মত' শব্দটা ব্যবহার করেছেন। শব্দ অর্থগত কারণে 'মত' এবং 'মতো' / 'মতও' শব্দ ব্যবহারে অর্থগত ভিন্নতা প্রকাশ পায়....একাধিক যায়গায় 'মত' না হয়ে 'মতো' হওয়া বাঞ্চনীয় মনে হয়েছে। আমার কাছে যেকোনো বইয়ের বিষয়বস্তু কেন্দ্রীক প্রচ্ছদ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে 'ভালোবাসার বৃত্তে কবিতা' বইয়ের প্রচ্ছদ ভালো লাগেনি।

কর্নেল খায়রুল আহসান (অবঃ) এর ইতিপূর্বের লেখা একটি আত্মজীবনী মূলক স্মৃতি কথা এবং বর্তমান আলোচ্য ভালোবাসার বৃত্তে কবিতার বই সহ মোট ছয়টি বই পড়েছি। কবিতার সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা-ভালোবাসায় ছেদ পড়েনি কখনও। তাইতো বর্তমানে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন দেশ-বিদেশ ঘুরে আর অসাধারণ সুন্দর সব কবিতা লিখে।
নিরন্তর শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বস্তিবাসী সেই অগ্নিকন্যাকে নিয়ে লেখা একটি কাব্যগাথা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫


ঢাকার আকাশ তখন ধুলোমাখা সন্ধ্যার রঙে ছিল ডেকে
বস্তির সরু গলিতে শিশুদের কান্না
নর্দমার স্রোতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সেই অন্ধকার জন্মঘরে প্রথম আলো দেখেছিল
এক বস্তিবাসী কন্যা শিরিন
এখনো এক অচেনা নাম
যার ভেতর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবুল আলীই আমাদের বাংলাদেশের প্রতীক

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭



আপনাদের কি এই ছবিটার কথা মনে আছে? এই বছরের শুরুতে চলতি বছরের জানুয়ারীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বেআইনিভাবে বাংলাদেশের জমিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×