somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

'ওরা' পারেও....

১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'ওরা' পারেও....

২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ফজরের ওয়াক্তে আমাকে আর Zahid Hassan কে র‍্যাব-১০ থেকে মিরপুর থানায় হস্তান্তর করে। সেই দিনই আমাদের কোর্টে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আনে।

অনেক দেনদরবার করে থানা হাজতে আমার আর জাহিদের 'ধোলাই খাড়া' কাটানো হয়েছে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকায়....তার একটা বড়ো অংক আইও সাহেব ওসিকে দিয়েছে সেটার প্রমাণ পেয়েছি....

তারপরও মিরপুর থানার গোপালিশ ওসি কুখ্যাত দাদন ফকির, তাকে বিশ্বাস নাই! আমাদের আইও এস আই জাহাঙ্গীর সজ্জন অফিসার। আমার ভাগ্নে ওসিকে ফোন করে নিজের পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে ফোন কেটে দেয়। তারপর একাধিক বার ফোন করলেও রিসিভ করেনি। আইও'র ফোনে ওসি দাদন ফকিরকে একাধিক বার ভাগ্নে ফোন করেছিলো, কিন্তু সে ফোন রিসিভ করেনি। বরং ফোন লাইনে থাকা অবস্থায় দাদন ফকির বলেছিল- "বলে দাও আমি ডি আই জি হেডকোয়ার্টার, পুলিশ কমিশনার, আইজি এবং হোমমিনিষ্টার ছাড়া আর কারোর ফোন রিসিভ করি না!"
আইও'র সাথে কথা বলার পর আইও আস্বস্ত করেছে- আমাদের দুইজনের উপর জুলুম করা হবেনা। তারপরও ভাগ্নের প্রশাসনিক জেলার একটা থানার ওসি মিজান নামের একজন সিনিয়র ইনস্পেক্টর যিনি তখন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত তাকে মিরপুর থানায় পাঠায় আমাকে আর জাহিদকে দেখাশোনা করতে। ইনস্পেক্টর মিজান সাহেব ইউনিফর্মড প্রতিদিন বিকেলে থানায় এসে রাত এগারোটা পর্যন্ত ওসি দাদন ফকিরের রুমে বসে থাকেন। দাদন ফকির বিরক্ত হলেও কিছু বলে না, কারণ ইনস্পেক্টর মিজান তার অনেক সিনিয়র।

বিকেল থেকেই লক্ষ্য করি- থানা হাজতে কিছুক্ষণ পরপর পুলিশের এক একটা টিম ৪/৫ জন করে গ্রেফতার করে নিয়ে আসছে... জাহিদ সবার সাথে মুহুর্তেই খাতির জমিয়ে 'জিগিড়ী দোস্ত' বানিয়ে ফেলে! কাকে কোথা থেকে ধরে এনেছে, কে কোন দলের নেতা কর্মী সমর্থক- সব বের করে ফেলে। 'বিএনপি' হিসাবে যাদেরকে ধরে আনা হতো তাদেরকে বিএনপির অফিশিয়াল তালিকা থেকে রাজনৈতিক পরিচয়, পদ-পদবী নিশ্চিত হয়েই পুলিশ ধরতো, কাজেই তাদের রাজনৈতিক পরিচয় লুকানোর সুযোগ নাই, বরং আরও বেশী নির্যাতনের শিকার হবে জেনেও সবাই গর্ব করে নিজেকে বিএনপি পরিচয় দেয়। যাদেরকে সন্দেহ জনক ধরে আনতো তারা মাদক ব্যবসায়ী কিম্বা অন্য দলের হলেও প্রায় সবাই নিজেকে বিএনপি সমর্থক পরিচয় দিতো। যাদেরকে জা-শি বলে গ্রেফতার করে তারা নিজেদের নির্দলীয় পরিচয় দেয়!
জাহিদের অদ্ভুত এক ঘ্রাণশক্তি এবং অন্তর্দৃষ্টি আছে- বলে দিতে পারে কে আসল/ নকল বিএনপি! কেউ মিথ্যা পরিচয় দিলে জাহিদ ধরে ফেলতো।

সন্ধ্যা নাগাদ জামায়াত শিবির পরিচয়ে ৫ জনকে ধরে নিয়ে আসে- তাদের ৪ জন মনিপুর স্কুল/কলেজের শিক্ষক, ১ জন স্টাফ। যথারীতি তারাও নিজেদের অরাজনৈতিক পরিচয় দেয়। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, টি শার্ট পরিহিত একজন সুদর্শন বডি বিল্ডার শিক্ষক নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দেয়। আমরা যখন যায়গা সংকুলান না হওয়ায় ভাগ ভাগ করে মাগরিব, এষার নামাজ আদায় করছিলাম তখন সেই নাস্তিক নামাজীদের অনেকটা তাচ্ছিল্য /অবজ্ঞা করে সিগারেট ফুকতে ছিলো...

যাইহোক, হাজতে ২৫/২৬ জন আসামি কষ্টকরে থাকতে পারলেও রাত এগারোটা নাগাদ সেই যায়গায় আসামি প্রায় একশো জন! এদিকে ধরে আনা লোকদের ২/৩ জন করে এক একজন আইও নিয়ে যায়, কিছুক্ষণ পর রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। চলে টাকা পয়সার লেনদেন। (১) "কম টাকা, বেশী মাইর- কঠিন ধারায় মামলা, ১০ দিনের রিমান্ড।" (২) "বেশী টাকা- কম মাইর এবং মোটামুটি সহজ ধারায় মামলা, ২/৩ দিনের রিমান্ড।" (৩) অনেক বেশী টাকা দিলে কেউ কেউ ছাড়া পায়....
রাতে শতাধিক আসামি থাকলেও দিনের বেলা ৬০% কোর্টে চালান দিতো, আবার নতুন আসামিতে থানা গারদ উপচে পড়তো।

জাহিদ বিএনপির অনলাইন অফলাইনের সক্রিয় কর্মী। ওর বাসাও মনিপুর স্কুলের আসপাশে। মনিপুর স্কুলের শিক্ষক/স্টাফদের মধ্যে সবাইকেই জাহিদ জা-শি বলে শনাক্ত করেছে, যা গোপনে আমাকে জানিয়েছে। এমনকি যিনি নিজেকে নাস্তিক দাবী করেছে তাকেই জা-শি'র নেতা হিসেবে চিনহিত করেছে। গভীর রাতে স্বঘোষিত নাস্তিক শিক্ষককে বড়ো অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশ ছেড়ে দেয়। ওদের সাথে থাকা চারজনকে 'মিডিয়াম স্কেলে' ধোলাই দিয়ে সন্দেহজনক জা-শি বলে মামলা দেয়। যদিও ওরা কেউই নিজেকে জা-শি স্বীকার করেনি, এবং 'সাত আসমান জমিনের কসম' কেটে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততাও অস্বীকার করে। মজার ব্যাপার হলো- মামলা দেওয়ার পর আমাদের কাছে নিজেদের জা-শি এবং নাস্তিক দাবী করা লোকটা ওদের নেতা (রোকন) বলেও স্বীকার করে!

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নাস্তিক দাবীদার জা-শি রোকন ভাইকে দিন পনেরো পর গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। জেলে এসে সেই লোক পুরোদস্তুর 'দীনি ভাই' হিসেবে রাজনৈতিক দীনিইলম কার্যক্রম পরিচালনা করেন!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেমিট্যান্সযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

টাকা পাচারকারীদের ধরা খুব মুশকিল বলে উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেছেন, টাকা পাচারকারীদের যদি কোনোভাবে ধরতে পারেন, তাহলে ছাড় দেবেন না। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহাকাশের দূত ও সৌর শক্তির ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২০


মহাকাশের দূত ও সৌর শক্তির ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি
সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি প্রফেসর শঙ্কু — তাঁর নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিজ্ঞানের আশ্চর্য সব আবিষ্কার, একেকটি কল্পনার জগৎ, আর রহস্যে ঘেরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিশুদের গুড টাচ ব্যাড টাচ শেখানো আপনার দায়িত্ব

লিখেছেন অপলক , ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৩৪

বর্তমানে বাংলাদেশে একক পরিবার বেশি। আগের যুগে যৌথ পরিবারে শিশুরা বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে অনেক কিছু শিখত, নিরাপত্তা পেত। এখন সে সুযোগ অনেকটাই কম। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ৫ বছরের শিশুও... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুন্নী না হয়ে জান্নাতি হওয়ার কোন সুযোগ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫৯



সূরাঃ ১৭ বনি ইসরাঈল, ৭৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৭৭। আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে পাঠিয়ে ছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও সুন্নাত (নিয়ম) এরূপ ছিল। আর তুমি আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×