somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

গতকাল সালাহউদ্দিন আহমেদ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা থেকে ওয়াক আউট করলেন কেন?

৩০ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল সালাহউদ্দিন আহমেদ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা থেকে ওয়াক আউট করলেন কেন?

উত্তর:
এক কথায় বলতে গেলে, রাষ্ট্র পরিচালনায় দ্বৈত-শাসন ব্যবস্থা যাতে না আসে, ঠিক এজন্যই গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী সালাহউদ্দিন আহমেদ ওয়াক আউট করেছেন৷

দ্বৈত-শাসন ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?
একটি রাষ্ট্র বলতে আমরা প্রধানত সরকারের নির্বাহী বিভাগকেই বুঝি। একটি রাষ্ট্র তিনটি প্রধান অঙ্গ দিয়ে চলে- বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ (সংসদ) ও নির্বাহী বিভাগ।

সংসদ আইন তৈরি করে,
আদালত আইনের বৈধতা পরীক্ষা করে,
আর নির্বাহী বিভাগ সেই আইন বাস্তবায়ন করে।

রাষ্ট্র পরিচালনার এই বাস্তবতা অনুযায়ী, নির্বাহী বিভাগই হলো জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার- যারা মন্ত্রীসভা গঠন করে, প্রশাসন চালায়, পলিসি নেয়, বাজেট করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে, আমলাতন্ত্রকে পরিচালনা করে।

এই নির্বাহী বিভাগ যদি শুধু নামে থেকে যায়, আর বাস্তবে তাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না থাকে- তাহলে সেটা হবে কেবল 'কাগুজে বাঘ'।

নির্বাহী বিভাগে আসীনরা যদি ক্ষমতাহীন হন, কাগুজে বাঘ হন, তাহলে আমলা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কেন নির্বাহী বিভাগের কথা মেনে চলবে?
উত্তর হলো- চলবে না। যেটা আরো পরিষ্কার উদাহরণে দেখা যায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেলায়। প্রায় ১ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও এই সরকারকে পুলিশ এবং আমলারা পাত্তা দেয় না। কারণ, এই সরকার তথা নির্বাহী বিভাগ একটি কাগুজে বাঘ, তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের সক্ষমতা নেই৷ ফলতঃ অভিযোগ উঠেছে, এই সরকারের মধ্যেই রয়েছে আরো একটি সরকার, যা মূলত দ্বৈত শাসনকেই ইঙ্গিত করে।

তাহলে, একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে যদি খুব কম ক্ষমতা দেওয়া হয়, এবং ক্ষমতার বড় একটি অংশ যদি বিভিন্ন কমিটি বা কমিশনকে ন্যস্ত করা হয়- তাহলে নির্বাচিত সরকারের আমলেও দ্বৈত শাসন চলবে। ফলাফল- ঐ নির্বাচিত সরকার দুর্বল হওয়ায় আরো বিতর্কিত হবে৷

গতকাল ঐকমত্য কমিশনের যে আলোচনা ছিলো, তার অন্যতম এজেন্ডা ছিলো 'সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল' নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত।

কমিশন প্রস্তাব করেছে, এসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য একটি কমিটি গঠন করতে হবে। সালাউদ্দিন আহমেদ এই জায়গাটাতেই আপত্তি করেছেন। কারণ, সরকারে থাকবো আমি, অথচ আমি আমার টিম কাদের নিয়ে সাজাবো- তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা আমার থাকবে না! এটা একটা অযৌক্তিক আইডিয়া।

বারবার একটা অজুহাত দেওয়া হচ্ছে যে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে। অথচ, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ঐকমত্য কমিশনের সকল প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলো৷ কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না, সেই প্রস্তাবও মেনে নেওয়া হলো। কিন্তু, তারপরেও যদি নির্বাহী বিভাগে হাত দিতে হয়, তা মেনে নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে কী?

বিচার বিভাগকে বলা হয় গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। আমরা বিচার বিভাগ সংস্কার করলাম। এর অর্থ হলো নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন একশন যদি অসাংবিধানিক বা বেআইনী হয়, তাহলে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আদালত সামনের দিনগুলোতে তার জুশিডিয়াল পাওয়ারের মাধ্যমে অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবে। তাহলে নির্বাহী বিভাগকে ক্ষমতাহীন করতে চাওয়ার যুক্তি কি?

নির্বাহী বিভাগে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তারা প্রত্যেকে জনগণের আস্থায় নির্বাচিত হয়েই তো মন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী হন। সেক্ষেত্রে, তাদেরকে সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়৷ তাহলে সরকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য 'পর্যাপ্ত অথরিটি' আপনি আমাকে দেবেন না, ওদিকে আমার টিম গুছিয়ে দেবে অন্য কেউ আর তার জবাবদিহি করতে হবে আমাকে — এটা কি একটা উদ্ভট আইডিয়া না? সংস্কারের নামে কেন নির্বাহী বিভাগকে প্রোপারলি ফাংশন করতে দিবেন না?

সালাহউদ্দিন আহেমদ আরো বলেছেন, সাংবিধানিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেখানে নিয়োগের জন্য আলাদা কমিটি না করে আপনারা শক্ত আইন পাস করেন। তাহলেই তো অনেকটা চেক এন্ড ব্যালান্স চলে আসে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সাংবিধানিক ও আইনগত সংস্থাগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করা হলে শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য নষ্ট হবে।

অবশ্যই তা হবে। কারণ, দ্বৈত শাসন চলে আসলে ভারসাম্য বলে আর কিছু তো থাকেই না।

এখন আপনি আরো পরিষ্কারভাবে চিন্তা করুন।

দেশে যদি কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারে,
দেশে যদি কার্যকর সার্চ কমিটির দ্বারা তৈরী নির্বাচন কমিশন থাকে, দেশে যদি মুক্ত স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং গণমাধ্যম থাকে, দেশে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকে, দেশে যদি সাংবিধানিক কমিশনগুলোতে নিয়োগের শক্ত আইন থাকে, তাহলে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমানোর আদৌ কি কোনো যৌক্তিকতা আছে? যে বা যারাই নির্বাচিত হোক, তর্কসাপেক্ষে ধরে নিলাম, তারা খুব খারাপভাবে দেশ চালালো। তবুও তো আপনার হাতে ভোট দিয়ে সরকার পরিবর্তন করার অপশন আছে। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আছে। তো এতো কিছু থাকতে কেন নির্বাহী বিভাগের অথোরিটি কেড়ে নেওয়াটাই একমাত্র সমাধান গণ্য করতেছেন?

কুদরত-ই-এলাহী বনাম রাষ্ট্র মামলায় বিচারপতি মুস্তফা কামাল মন্তব্য করেছিলেন, “আদালতই শুধু সুড়ঙ্গের শেষে একমাত্র আলো নয়।”- তেমনি, নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমানোই টানেলের শেষ প্রান্তে থাকা একমাত্র আলোর উৎস না৷

তাই, সংস্কারের নামে দয়া করে দেশটাতে দুর্বল সরকার স্থাপন করার বিদেশী শক্তির সাজেশন চাপায় দিয়েন না।

আপনারা 'নোট অব ডিসেন্ট' দিয়ে একটা সিদ্ধান্ত চাপায় দিতে চান বলেই সালাহউদ্দিন সাহেব ওয়াকআউট করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:২৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×