somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

আয়নাঘরের সাক্ষীঃ গুম জীবনের আট বছর......

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুম নিয়ে যে কয়টি বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে- সেগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। নিজের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে চোখের পানিতে কষ্টগুলো ধুয়ে ফেলতে চেষ্টা করি। ইতিপূর্বে পড়েছি- লেঃ কর্নেল অবঃ Hasinur Rahman এর লেখা "আয়নাঘরঃ তুমি ও আমি", ব্রীগেডিয়ার জেনারেল অবঃ আবদুল্লাহ আল আজমী সাহেবের "আয়নাঘরে বিভিষিকাময় দিনগুলি" এবং কয়েক দিন আগে পড়েছি "আয়নাঘরের সাক্ষী গুম জীবনের আট বছর"।


“আয়নাঘরের সাক্ষী গুম জীবনের আট বছর”- বইটা কেবল একটি আত্মজীবনী নয়, এটি এক রক্তাক্ত ইতিহাসের দলিল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মজলুমের নীরব, অসহায় আর্তনাদের প্রতিধ্বনি। ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) নিজের আট বছরের বন্দীজীবনের করুণ কাহিনী যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি এর ভেতর দিয়ে ফুটে উঠেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের ভয়াবহতম সত্য- গুম নামের এক অমানবিক বাস্তবতা!

এই বই পড়তে পড়তে মনে হয়, লেখকের প্রতিটি শব্দ যেন কারাগারের দেয়ালে খোদাই করা ক্ষতচিহ্ন, প্রতিটি বাক্য যেন ভারী দীর্ঘশ্বাস। নিঃসঙ্গতা, মানসিক নির্যাতন, ক্ষুধার জ্বালা, অনিশ্চয়তা, প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্নতা- সবকিছুর বর্ণনায় হৃদয় কেঁপে ওঠে। আমরা যারা বাইরের আলো-বাতাসে শ্বাস নিই, তাদের জন্য গুম জীবন হয়তো কেবল খবরের কাগজে পড়া একটি শব্দ। কিন্তু এই বই দেখিয়ে দেয়, এর ভেতরে কতটা রক্ত, কান্না আর অন্ধকার লুকিয়ে আছে।

আরমানের লেখা শুধু ব্যক্তিগত বেদনার নয়, এটি প্রতিরোধের এক দলিল। তিনি ভয় পেয়েছেন, কিন্তু ভেঙে পড়েননি, বরং নিজেকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের ইবাদত বন্দেগীতে নিজেকে সঁপে দিয়ে কষ্টকে শক্তিতে রুপান্তর করেছেন। দীর্ঘ আট বছরের দুঃসহ অভিজ্ঞতাকে পরিনত করেছেন শক্তিতে। ফলে বইটি শুধু আবেগঘন পাঠ্য নয়, এটি ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামের আহ্বানও বটে।

শেষ পাতা পর্যন্ত পড়তে পড়তে কতোবার অশ্রুসিক্ত হয়েছি....নিজের স্বল্পকালীন গুম জীবনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছি, বাকরুদ্ধ হয়েছি। আসলে এই বই কেবল একজনের গুম জীবনের সাক্ষ্য নয়, এটি একটি জাতির বিবেককে, বিশ্বমানবতাকে নাড়া দেওয়ার মতো ভূমিকম্প! বলা যায়, “আয়নাঘরের সাক্ষী গুম জীবনের আট বছর” শুধু একটি বই নয়, এটি অমানবিক অন্ধকারে আটকে থাকা হাজারো নিখোঁজ মানুষের শব্দহীন চিৎকারের প্রতিধ্বনি। এই বই পড়ে জেনেছি- তার দুঃসহ বন্দী জীবনের কথা।

তখনও এই বইটি প্রকাশিত হয়নি। গুম নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে 'expert led consultation on truth and healing of victims of post conflict Bangladesh' আয়োজিত একটা সেমিনারে দেখা হয়েছিলো ব্যারিস্টার আরমান সাহেবের সাথে। অনুষ্ঠান শেষে Mahdi Amin ভাই এবং আমি তার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলি। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী। পারস্পরিক কথা বার্তায় তার মুখেই শুনেছিলাম- একদা দেশের অন্যতম ধনাঢ্য পরিবারের সব সম্পদ আওয়ামী লীগের নেতারা কিভাবে লুটপাট করে নিঃস্ব করে দিয়েছে!


পুনশ্চঃ আমরা যারা গুম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি- তাদের প্রত্যেকেরই নিজনিজ গুম নির্যাতনের কথা লেখা উচিৎ। বই লেখা উচিৎ। আমার চেনাজানা যারা গুম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত। প্রত্যেকেরই লেখালেখির অভ্যাস আছে। তাই শ্রদ্ধেয় মারুফ জামান Zaman M Zaman ভাই, Rajon Bapari Wasim Iftekharul Haque Shovan Rezwanul Haque S M Sagor Zahid Hassan ফসিউল আলম Iqbal Chowdhury Lion Anwar Hussain Uzzal আরজান ইভান হাবিব সাত্তার সবুজ এবং আরও যারা গুম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণে বেঁচে এসেছেন তাদেরকে অনুরোধ করবো, সবাই লিখুন। বক্তৃতার মঞ্চে ২/৪ মিনিট বলা কথা কেউ মনে রাখবে না। বইয়ের লেখা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পড়ে জানবে- দ্বিপদী জানোয়ার লেডি হিটলার শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতার কাহিনী।

"Not for glory but to stop forgetting”
আমরা যে পথচলা শুরু করি, তা কখনোই গৌরব কুড়ানোর জন্য নয়। আমরা দাঁড়াই ইতিহাসের পাশে- যাতে আগামী প্রজন্ম ভুলে না যায়। আমরা লিখি, স্মরণ করি, দাঁড়িয়ে যাই ইতিহাসের পাশে।
কারণ ভুলে যাওয়া মানে আবার একই ভুলের দিকে হাঁটা।
আবারও বলছি- গৌরবের জন্য নয়, Not for glory… স্মৃতি বাঁচানোর জন্য! ভুলে যাওয়া মানে হারিয়ে যাওয়া- We fight to stop forgetting.
History never dies, যদি আমরা ভুলে না যাই।
Not for glory, বরং memory alive রাখার দায়ে।
ভুলে যাওয়া নয়- That’s our promise to history.
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×