somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

ডিজিএফআই বিলুপ্ত নয়, সংস্কার ও পুনর্গঠনই হোক জাতীয় নিরাপত্তার মূলমন্ত্র।

১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিজিএফআই বিলুপ্ত নয়, সংস্কার ও পুনর্গঠনই হোক জাতীয় নিরাপত্তার মূলমন্ত্র।

সম্প্রতি কিছু প্রবাসী ইউটিউবার ও আত্মপ্রচারপ্রিয় বিশ্লেষক ডিজিএফআই বিলুপ্তির দাবি তুলেছেন। তাদের বক্তব্যে “মানবাধিকার” ও “গণতন্ত্র” এর আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য এক ভয়ংকর উদ্দেশ্য- বাংলাদেশকে দুর্বল করে পার্শ্ববর্তী দেশের প্রভাববলয়ে ঠেলে দেওয়া। যারা আজ ডিজিএফআই নিষিদ্ধ করার কথা বলছে, তারা হয়তো বুঝে বা না বুঝে এমন এক ষড়যন্ত্রে সহায়তা করছে যা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্যই হুমকি।

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টিকে থাকে তিনটি স্তম্ভে- জনগণ, সরকার এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) সত্যিকার অর্থেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এরপর থেকে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত সেই সংস্থাকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যন্ত্রে পরিণত করা হয়। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ বদলে শুরু হয় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নজরদারি, দমন-পীড়ন ও ভয় দেখানো এমনকি গুম হত্যার মতো অমানবিক কার্যক্রম।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো- যেসব সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও পেশাদার সেনা কর্মকর্তা এ ধরনের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছিলেন, কিংবা নৈতিক কারণে সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, তাদেরকেই ‘প্রতিবন্ধকতা’ মনে করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

এক সময় যে সংস্থা ছিল রাষ্ট্রের চোখ ও কান, আজ সেটিকেই কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ব্যবহার করছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের অস্ত্র হিসেবে। এ যেন জাতির নিরাপত্তা নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা বাহিনীর অপব্যবহার- যা দেশের স্বাধীনতা ও সেনাবাহিনীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত।

ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে ডিজিএফআই-এর পুনর্গঠনঃ
শেখ মুজিবুর রহমানের পতনের পর, ১৯৭০-এর দশকে জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। স্বাধীনতার পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তিনি একটি পেশাদার, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক গোয়েন্দা সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সেই প্রেক্ষাপটেই ডিজিএফআই পুনর্গঠিত করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল পেশাদারীত্বের সাথে জাতীয় প্রতিরক্ষা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

ডিজিএফআই-এর প্রকৃত ভূমিকা ও দায়িত্বঃ

রাজনৈতিক বিতর্ক ও নানা সমালোচনার আড়ালে ডিজিএফআই-এর প্রকৃত কার্যক্ষেত্র প্রায়শই আড়ালেই থেকে যায়। সংস্থাটি শুধু রাজনীতির খবরাখবর রাখে না, বরং রাষ্ট্রীয় নিয়োগ, প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি, সাইবার নিরাপত্তা, বিদেশি গুপ্তচরবৃত্তি প্রতিরোধ, এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের ঝুঁকি নির্ণয়ের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে। এক কথায়, এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র।

দুর্নীতি ও অপরাধে জড়িত কর্মকর্তারা নয়, প্রতিষ্ঠানই মুখ্যঃ

তবুও এটা সত্য- ডিজিএফআই-এর কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা গুম ও খুনের মতো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হয়েছেন। এ ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও কলঙ্কজনক।
তবে এখানেই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে- কয়েকজন অপরাধী কর্মকর্তার জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত করা কি ন্যায্য বা যুক্তিসঙ্গত?
একটি রাষ্ট্রের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা বিলুপ্ত করে দেওয়া মানে তার আত্মরক্ষার বর্ম খুলে ফেলা। এটি কেবল বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে না, বরং প্রতিবেশী শক্তিধর দেশগুলোর সামনে আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতাকে ন্যস্ত করে দেওয়ার শামিল।

সংস্কারই হোক মুক্তির পথঃ

গুম, খুন বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো আপসের সুযোগ নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ধ্বংস নয়, সংস্কারই হতে হবে মুক্তির পথ।
ডিজিএফআই-কে রাজনীতি ও ক্ষমতার প্রভাবমুক্ত রেখে, পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতার কাঠামোর মধ্যে এনে পুনর্গঠন করতে হবে। তাহলে এই সংস্থা আবারও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে।

শেষকথাঃ
একটি রাষ্ট্র তখনই দুর্বল হয়, যখন সে নিজের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে।
আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়- ডিজিএফআই কোনো দলের নয়, কোনো সরকারের নয়- এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রতীক। কয়েকজন দুষ্কৃতিকারীর জন্য এই প্রতিরক্ষা প্রাচীর ভেঙে দেওয়া মানে আমাদের স্বাধীনতাকে বন্ধক দেওয়া।
অতএব, অপরাধীদের বিচার হোক, সংস্কারও হোক; কিন্তু প্রতিষ্ঠান টিকে থাকুক- রাষ্ট্রের অস্তিত্বের স্বার্থে।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×