"আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর''.....
এমনটা হওয়ার কথাই ছিল। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। ভাবনারও কিছু নেই। কথায় বলে, ‘আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর।’ পাপের বোঝা যখন ভারী হয় তখন নেমে আসে গজব। সে গজবে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়- যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার চোদ্দগুষ্টি নিয়ে পলায়ন!
"সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুনের জমি-ফ্ল্যাট জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ"- এই নিউজটা পড়ে "আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর''- প্রবচনটির কথা মনে পড়েছে।

মো. হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস (হারুন বিশ্বাস)
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব (সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এর পিএস ছিলেন টানা দশ বছর (উপ-সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদন্নোতি পাওয়া পর্যন্ত)। হারুন বিশ্বাস আমাদের আত্মীয় না হলেও একই এলাকায় গ্রামের বাড়ির সুবাদে- পারিবারিকভাবে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আমার ছোট ভাইর (ডি আই জি, বাধ্যতামূলক অবসর ২০২৩) সহপাঠী। অন্যদিকে আমার স্ত্রীর বড়ো ভাই (সাবেক শিক্ষা সচিব) এর জুনিয়র বিসিএস এডমিন ক্যাডার অফিসার। আবার ততকালীন আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী (সাবজেক্ট ভিন্ন, আমার বাল্যবন্ধু দেবুর সহপাঠী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু)। আমি যখন গুম হই তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় এর আরও একজন সহপাঠী স্বরাষ্ট্র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) সিনিযর সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। আমরা সবাই ব্যক্তিগত এবং পারস্পরিক পারিবারিক সৌহার্দ্যপূর্ণ স্বজন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্যঃ আমি গুম হবার পর সব সম্পর্ক বদলে যায়! বিভিন্ন পত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়ায়, ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়- "ব্লগার জুলভার্ন নিখোঁজ".....
যাই হোক, গুমের রহস্য উদঘাটনে এবং সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পিএস, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেন- তাই আমার স্ত্রী সন্তান, স্ত্রীর বড়ো ভাই, আমার ছোট ভাই প্রথমেই ছুটে যায় উল্লেখ্য তিন জনের কাছে। ব্যস্ততার অজুহাতে আইজিপি, স্বরাষ্ট্র সচিব, পিএস হারুন বিশ্বাস কেউই দেখা করেননি। তবে "খোঁজ নিচ্ছি, দেখবো, অনেক চেষ্টা করেও কোনো খোঁজ পেলাম না'- বলে এক পর্যায়ে ফোন যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়।
শেখ শহীদুল ইসলাম (শেখ শহীদ) স্বাধীনতাত্তর ছাত্রলীগ সভাপতি, শেখ হাসিনার আপন খালাতো ভাই, এরশাদ সরকারের বিভিন্ন সময়ে যুব, পূর্ত এবং শিক্ষামন্ত্রী, জাপা (মঞ্জু) জেনারেল সেক্রেটারি- তিনি আমার শ্রদ্ধেয় ঘনিষ্টজন, পারিবারিক সুহৃদ। আমার স্ত্রী সন্তানেরা তার কাছে ছুটে যান। তিনি ততকালীন র্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ এবং পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াকে (তিনজনই গোপালগঞ্জের বাসিন্দা) ফোন করে আমার বিষয়ে বলেন এবং আমার বড়ো ছেলেকে তাদের সাথে দেখা করতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দেন। বড়ো ছেলে র্যাব ডিজি বেনজির আহমেদ এর সাথে দেখা করলে আমার সরকার বিরোধী লেখালেখির ব্যাপারে তিরস্কার করে ছেলেকে বিদায় করে দেন। তারপর দিন শহীদ ভাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দেন। আমার স্ত্রী এবং দুই ছেলেদের নিয়ে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ওয়েটিং রুমে অপেক্ষমাণ তখনই আমার স্ত্রীকে থানা থেকে ফোন করে জানানো হয়- "আপনার স্বামীকে র্যাব-১০ গ্রেফতার করে মিরপুর থানায় হস্তান্তর করেছে....."!
৫ আগস্ট ২০২৪, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পলায়নপরঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এর সাথে তার দীর্ঘদিনের অপকর্মের দোসর হারুন বিশ্বাসও পালিয়ে তাদের প্রভুর দেশ ইন্ডিয়া চলে গিয়েছে। সাবেক আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী সৌদি আরবে চুক্তিভিত্তিক রাষ্ট্রদূতের চাকরি অবস্থায় আত্মগোপনে চলে গিয়েছে। ততকালীন র্যাবের কুখ্যাত ডিজি এবং পরবর্তীতে আইজিপি বেনজির আহমেদ হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেশ থেকে পালিয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া গ্রেফতার হয়ে জেলে।
কথায় আছে ,”চিরদিন কাহার ও সমান নাহি যায়। আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়”- এ কথা অনস্বীকার্য যে সুসময় ও দুঃসময় হাতে হাত রেখে চলে। সময় যদিও নিজের গতিতেই অতিবাহিত হয় তবুও দুঃসময়ের মুহূর্তগুলি মনে হয় পাহাড়প্রমাণ দীর্ঘায়িত। দিন যায়, কথা থাকে.....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


