ষোলো বছরের অন্ধকার থেকে ন্যায়বিচারের সূচনা....
ষোলো বছর ধরে বাংলাদেশের বুক চিড়ে যে অন্ধকার নেমে এসেছিল- তার সূচনা হয়েছিল ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও রহস্যাবৃত ঘটনার মাধ্যমে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার প্রাণহানি ছিল শুধু একটি ট্র্যাজেডি নয়; এটি ছিল রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিকে ভেঙে ফেলার একটি লক্ষ্যভিত্তিক আঘাত। সেই ঘটনার পর বছরের পর বছর ধরে শত শত সেনা অফিসারকে নানা অজুহাতে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া, গুম-নির্যাতন, এবং প্রহসনের নামে বিচারে দণ্ড দেওয়া- সবকিছুই এক ভয়ংকর স্বৈরাচারী যাত্রার ইঙ্গিত হিসেবে দাঁড়িয়েছিল।
এই ষোলো বছরে শুধু সেনাবাহিনী নয়-
এই রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, নারী-শিশুরা- কেউই মুক্ত ছিল না।
হাজারো গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মিথ্যা মামলা, নির্বিচারে গ্রেফতার- বাংলাদেশের মানুষ প্রতিটি দিন কাটিয়েছে ভয়ংকর আতঙ্কের মধ্যে।
২০২৪ জুলাই আন্দোলন তো যেন পুরো জাতির ওপর আরেকটি কালো অধ্যায় হয়ে নেমে এসেছিল। প্রায় দুই হাজার মানুষের মৃত্যু, হাজারো মানুষের দৃষ্টিশক্তি হারানো, ত্রিশ হাজারের ওপর আহত হওয়া- এ যেন কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নয়, যেন কোনো দখলদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতায় ঘটে যাওয়া ঘটনা। আমার, আপনার এবং আমাদের অভিজ্ঞতা কোনো ব্যক্তিগত গল্প নয়; এগুলো সেই অন্ধকার সময়ের সবচেয়ে নির্মম সাক্ষ্য।
এই সমস্ত অপরাধের বিচার অবশেষে যখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থার কঠোর পর্যবেক্ষণে সম্পন্ন হলো- তখন বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখালো: ন্যায়বিচারের পথ কঠিন, কিন্তু তা এড়ানোর পথ নেই। আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিচার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেছে, এটাকে “due process”-এর অনন্য উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
কিন্তু বিস্ময়করভাবে-
যখন হাজার হাজার পরিবার তাদের হারানো সন্তানের স্মৃতি বুকে নিয়ে কিছুটা শান্তির নিশ্বাস নিতে শুরু করল, তখনই দেখা গেল কিছু শিক্ষিত ব্যক্তিরা বিচার না দেখে, ভুক্তভোগীর কান্না না দেখে, মানবতার পক্ষে না দাঁড়িয়ে- অপরাধী রক্ষার বুলিতে বিবৃতি দিচ্ছে। এই অবস্থান শুধু অমানবিকই নয়- ন্যায় বিচারের প্রতি চরম অবমাননা।
যারা বছরের পর বছর মানুষ হারানোর ব্যথা দেখেনি, গুমের বিভীষিকা বোঝেনি, কিংবা দমন-পীড়নের রাতগুলোতে নামহীন কবরের গল্প শোনেনি- তারা বিচারকে “রাজনীতি” বলে অবমূল্যায়ন করতে পারে।
কিন্তু একটি জাতি জানে-
এই বিচার নিছক রায় নয়, এটি ন্যায়বিচারের পুনরুত্থান।
১০০১ জন শিক্ষক নামের কুলাংগার বিচারবিরোধী বিবৃতি যারা দিচ্ছে- তারা ভুলে যাচ্ছে, শিক্ষকতার মানে হলো সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, নির্যাতিতের পাশে দাঁড়ানো, মানবতার শিক্ষা দেওয়া। ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করা, গণহত্যা অস্বীকার করা, গুম-খুনকে হালকা করে দেখা- এগুলো কোনো সভ্য সমাজে শিক্ষকের পরিচয় হতে পারে না। এদের বক্তব্য ইতিহাসের কাছে নিন্দিত হবে;
এই জাতি কখনো ভুলবে না কে ন্যায়বিচারের পাশে দাঁড়ালো আর কে অন্যায়ের পাশে।
আজকের এই বিচার-
একটি সরকারের পতনের বিচার নয়,
একটি রাজনৈতিক দলের বিচার নয়-
এটি হলো অমানবিকতার বিরুদ্ধে মানবতার জয়।
এ কারণেই যারা চোখ বন্ধ করে অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে- তারা ইতিহাসের আদালতে নিজেরাই দায়ী হয়ে থাকবে।
ন্যায়বিচার শুরু হয়েছে। এই জাতি আর সেই অন্ধকারে ফিরবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


