somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : ক্রাশ বয়

২৭ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দেখাটা কবে হয়েছিল মনে করতে পারছে না । তবে প্রথম ভালোলাগার কথাটা স্পষ্ট মনে আছে ওর। লম্বা ফর্সা এক যুবক পাপড়ির ছিট ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। যুবকের দৃষ্টি পাপড়ির মাথার উপর দিয়ে সোজা জানালার বাইরে! যুবক আনমনে কি যেন ভাবছে। পাপড়ি যে যুবকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই যুবকের। মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি, জটবিহীন লম্বা চুলের যুবককে দেখে ভালো না লেগে উপায় নেই। পাপড়ির চাওয়ার সাথে যেন খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে সবকিছু। সমস্যা শুধু একটাই। অসম্ভব ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যুবক। বাসে ওঠার পর ভুল করে একটি বারের জন্যও তাকায়নি পাপড়ির দিকে। তবে বিষয়টাকে গায়ে মাখেনি পাপড়ি। ড্রিম বয় একটু ভাবারু না হলে কি চলে?

ভার্সিটি লাইফের আড়াই বছর কেটে গেছে পাপড়ির। পাপড়ি যখন ফার্স্ট ইয়ারে, যুবক তখন থার্ড ইয়ারে। দু’জনে একই ডিপার্টমেন্টের। কতবারেই না কতভাবে দেখা হয়েছে দু’জনার। কিন্তু এভাবে ভালোলাগেনি কখনো। সেদিনের পর বলতে গেলে একটা ঘোরের মধ্যেই আছে পাপড়ি। দূর থেকে যুবককে দেখলে বুকের মধ্যে ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায়। স্নায়ুগুলো কর্মবিরতী দিয়ে দলবেঁধে তামাশা দেখে। যুবক কাছে এলেই চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে পাপড়ি। যুবকের পদধ্বনি দূরে মিলিয়ে গেলে আস্তে আস্তে চোখ খোলে সে। ততক্ষণে যুবক অনেক দূরে চলে গেছে। নেভি ব্লু টি শার্ট আর রঙ চটা জিন্সে যুবককের চলে যাওয়া দেখে আবার ধুকধুক করে শব্দ হয় পাপড়ির বুকে।

যুবকের সাথে পাশাপাশি বসে একদিন পিঠা খেয়েছে পাপড়ি। একা না, সাথে একদল বন্ধু ছিল। যুবক শুধু রূপবানই নয়, গুণবানও বটে। অসাধারণ ফুটবল খেলে। বলতে গেলে যুবক একাই ডিপার্টমেন্টকে জিতিয়েছে সেদিন। জুনিওররা তাকে রেহাই দেবে কেন? মৌমাছির চাকের মত ঘিরে ধরেছে তাকে। জুনিওরদের নজর ফাস্ট ফুডের দিকে কিন্তু বেকার সিনিওর নজর দিল পিঠার দিকে। যুবক হেসে হেসে কথা বলল একে একে সবার সাথে। পাপড়ি তো অবাক!

‘থার্ড ইয়ার তো শেষের পথে। কে কোন দিকে টার্গেট নিচ্ছো?’

কারো টার্গেট প্রাইভেট জব, কারো বিসিএস, কারোটা আবার এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। তবে পাপড়ি বিসিএস দেবে। কারণ যুবকের টার্গেট বিসিএস অ্যাডমিন।

যুবকের সাথে কথা বলার জন্য পাপড়ির মন আকুপাকু করছিল। কিন্তু কোন উপলক্ষ্য না থাকায় চুপ করে ছিল এতক্ষণ। অনেক ভেবে একটা উপলক্ষ্য খুঁজে পায় পাপড়ি।
‘আপনি অনেক ভালো খেলেন!’ কথাটা বলেই লজ্জ্বাবতী পাতার মত চুপসে যায় সে।

সাথে সাথেই কথার ফুলঝুরি শুরু হয়। পাপড়ির প্রসংসা বাক্য চাপা পড়ে যায় শত শত তোষামোদির চাপে।

‘আপনি মেসির মত খেলেন!’... ‘না ভাইয়া রোনাল্ডোর মত খেলে!’... ‘বলছে তোকে! ভাইয়া অবিকল নেইমারের মত খেলে!’ ...

এবারে নববর্ষে যুবককে উইশ করে পাপড়ি। যুবক ফোন করে। কাঁপাকাঁপা হাতে রিসিভ করে চুপ করে থাকে পাপড়ি।
- শুভ নববর্ষ!
- শুভ নববর্ষ!
তারপর আর কথা খুঁজে পায়না সে। ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দেয় যুবক।

ফেইসবুকে প্রতিদিন যুবকের ওয়াল চেক করে পাপড়ি। একই ছবি বারবার দেখে। একদিন সাহস সঞ্চয় করে ‘অ্যাড ফ্রেন্ড’ এ ক্লিক করে পাপড়ি! পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট করে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর রিকুয়েস্ট টা ক্যান্সেল করে দেয় সে।

আজ যুবকের জন্মদিন। রাতের টেক্সটটা এখনও ডেলিভার্ড হয়নি। সেজেগুজে যুবকের জন্য বটতলায় অপেক্ষা করছে পাপড়ি। আজ যে করেই হোক যুবকের সামনে দাঁড়িয়ে বার্থ ডে উইশ করবে সে।
যুবক আসে। চোখ বন্ধ করে পাপড়ি। যুবকের পদধ্বনি থেমে যায়। চোখ খোলে পাপড়ি। বড় বড় চোখ করে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে যুবক!

- এই মেয়ে, তোমার সমস্যাটা কি? আমাকে দেখলে চোখ বন্ধ কর কেন?
- কই নাতো!
- তুমি প্রতিদিন এই কাজটা কর। আমাকে দেখলে হয় উলটো পথে হাঁটো নয়তো চোখ বন্ধ করে থাকো। আমাকে ভয় পাও নাকি আমি দেখতে ভয়াবহ?
- ভয় পাব কেন?
- তাহলে ভয়াবহ?
- আপনি অসম্ভব সুন্দর!
- থাক আমাকে খুশি করতে হবে না। এই গরমে ভূতের মত সেজেছো কার জন্য?
- খুব খারাপ লাগছে?
- একদম পেত্নীর মত লাগছে! তুমি এমনিতেই অনেক সুন্দর!
- তাহলে আপনি আমার রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেন না কেন???
- তার আর সময় দিলে কই? টেক্সট দেখলাম কিন্তু লগইন করে দেখি কিছুই নেই!

পাপড়ি এবার যুবকের চোখের দিকে তাকায়। চোখে চোখ রেখে বলে, ‘শু ভ জ ন্ম দি ন!’
যুবক একটা রিক্সা থামায়। পাপড়িকে রিক্সায় উঠতে বলে।
পাপড়ি বলে, ‘কোথায় যাব?’
যুবক বলে, ‘ঘুরতে’
পাপড়ি বলে, ‘কেন?’
যুবক বলে, ‘আহা! এত কথার কি আছে? যেতে না চাইলে চলে যাও!’
পাপড়ি যুবকের হাত শক্ত করে ধরে। ‘রিক্সা বিদায় করো। আজ আমরা হেঁটে হেঁটে ঘুরব! ’

অতঃপর পল্লব এবং পাপড়ি দুপুরের কড়া রৌদ্র উপেক্ষা করিয়া একে অপরের হাত ধরিয়া হাঁটিতে লাগিল!

৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×