নাস্তিক্যবাদকে আমি কখনোই খারাপ চোখে দেখি না।
কারণ, ধর্ম এমন একটি জিনিস, যুক্তি দিয়ে যার আগা মাথা পাওয়া সম্ভব না। এখানে স্রেফ এবং স্রেফ বিশ্বাস ছাড়া আর কিছু নেই।
সেক্ষেত্রে যারা যুক্তির সাহচর্যে থেকে ধর্ম মানেন না, তাদেরকে তো "যুক্তিবাদী" হবার দোষে আর গালিগালাজ করা যায় না। তাই তাদের যুক্তিকে আমি সবসময়ই সম্মান দেখিয়েছি, যতই আমার সাথে বিশ্বাসের জায়গায় অমিল থাকুক না কেন।
তবে ভুলে যাবেন না, ঈশ্বরে অবিশ্বাস আর ধর্মে অবিশ্বাস দুটি দুই জিনিস।
কিন্তু সমস্যাটা হয়ে দাঁড়ায় অন্য জায়গায়। মুহাম্মদ(সাঃ) বা অন্যান্য নামে তাদের কুৎসা রটনা এবং গালিগালাজে। এতে সমস্যা হয় দুই জায়গায় -
১
নিজের বিশ্বাস নিজের কাছেই। সেটা প্রমাণেও আমি দোষ দেখি না। কিন্তু পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ ধার্মিক মানুষের চেতনায় বা মননে আঘাত দেয়াটা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আপনি মুহাম্মদকে অপছন্দ করতেই পারেন, কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন কেন, অধিকাংশের কাছে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব, নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয়। এক্ষেত্রে মুখটা সামান্য বন্ধ রাখলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যায়?
বিদেশে বসে এসির হাওয়ায় আপনারা গালিগালাজ করে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলেন, আর তার দায় বহন করে গোয়া মারা খায় এদেশে আপনাদের দেখে অবিশ্বাসী হওয়া অনেক বেকুব, যার একটি বাস্তব উদাহরণ আসিফ মহিউদ্দিন। নাস্তিকতা শেখাবেন, আপত্তি নাই। কিন্তু কেন আরকজনের বিশ্বাসের জায়গায় গালিগালাজ করাকে সমর্থন/উসকানি দিচ্ছেন?
সব জায়গায় যুক্তি খাটে আপনাদের, এই সামান্য কমন সেন্সের জায়গায় কেন যুক্তিটা খাটে না?
২
শাহবাগে গিয়েছেন না করে হলেও ৫ লক্ষ লোক। তার মধ্যে ব্লগিং করেন না করে হলেও অর্ধলক্ষাধিক লোক। তার মাঝে নাস্তিকের পরিমাণ খুব সামান্য। আর তার মাঝে মুহাম্মদকে গালিগালাজ করার লোক তো হাতে গোণা ৪-৫ জন। কিন্তু এই ৪-৫ জনের জন্য আজ সেই ৫ লাখ, মতান্তরে রাজাকারের ফাঁসি চাওয়া ১০ কোটি মানুষও আজ ধর্মবিদ্বেষীর কাতারে, সবাইকে গণহারে রাসূলের অপমানকারী বলা হচ্ছে। চাপা পড়ে গেছে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ইস্যু। ধরে নিলাম, এটা জামাতের চাল। তবুও এর দায় কি আপনারা এড়াতে পারেন?
এদেশে কোটি কোটি ছেলে নামাজ পড়ে না, রোজা রাখে না, কথায় কথায় "মাশাল্লাহ, ইনশাল্লাহ" বলে না ঠিক- কিন্তু তারা কোথাও বলে বসে না যে তারা নাস্তিক, তারা কোথাও মুহাম্মদকে গালিগালাজ করে না। কারণ কোন এক জায়গায় সে জানে, উপরে কেউ একজন আছেন, হয়ত তাকে জানার প্রক্রিয়ায় ভুল রয়ে গেছে, কিন্তু তিনি আছেন। এই প্রক্রিয়াগত ভুল মুখে বলারও সে সাহস করে না, কারণ সে লাল পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে বসে নেই, সে আছে বাংলাদেশে, যেখানে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী তার গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলবে। এটা সেই সাধারণ মানুষের জন্য খুব স্বাভাবিক, যেখানে তারা "নাস্তিক" আর "ধর্মবিদ্বেষী" এই দুটো শব্দকে আলাদা করতে জানে না।
তাই নাস্তিক দেখলেই ঈমান দন্ড খাড়া হওয়া আর আউলিয়াদের নাম দেখলে পাবলিকলি গালিগালাজ শুরু করা- দুটোই অযৌক্তিকতার লক্ষণ। দুই পক্ষকেই একই কাতারে ফেলতে আমি দ্বিধা করি না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:০৬