বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যারোর তথ্যমতে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ৭ কোটি। এই ৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু ছিলো ১৩.৫% অর্থাৎ ৯৪ লাখ ৫০ হাজার। । মুসলমান ছিলো ৮৫.৪ % বা ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার। এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ছিলো ১.১% বা ৭ লাখ ৭০ হাজার।
২০১১ সালে মোট জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। যার মধ্যে হিন্দু ৮.৫% বা ১ কোটি ২০ লক্ষ ৯৭ হাজার। মুসলিম ৯০.৪% বা ১২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার। অন্যান্য ১.১% বা ১৫ লাখ ৬৫ হাজার।
উপরের তথ্যমতে স্বাধীনতা পরবর্তী ৩৭ বছরে দেশে হিন্দু হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৫%। এই কমার পেছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে। যেমন:
৭৫'রে বঙ্গবন্ধু হত্য। মিলিটারি ক্যু। ধর্মীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্তান। রাজনৈতিক অস্থিরতা...
প্রভাবশালী ভূমি দস্যু কর্তৃক ভূমি দখল, বিচ্ছিন্ন কিছু নির্যাতনের ঘটনা, সুষ্ঠু বিচার না হওয়া; এবং হিন্দু কমিউনিটিতে প্রচলিত বিবাহ রীতি।
উপরে উল্লিখিত কারণগুলোর মধ্যে 'হিন্দু বিবাহ রীতি' জনসংখ্যা হ্রাসের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বলে বলে আমি মনে করি। আমি নিজে দেখেছি ২০১১ পূর্ববর্তী হিন্দু সমাজে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে পরস্পর বিয়ের সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা নিষেধ ছিলো। এখন আছে কি না জানিনা।
কিছুকিছু এলাকায় একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রেও বাধা নিষেধ ছিলো। এছাড়া তারা জাত-বর্ণ, গোত্র বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। হিন্দু কিমিউনিটিতে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহও সবসময়ই কম ছিলো। অপরদিকে মুসলিম কমিউনিটিতে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ সবসময়ই বেশি ছিলো। ধর্মীয় কুসংস্কারে বিশ্বাসের ফলে মুসলিমরা সন্তান জন্মদানেও অসচেতন ছিলো। গ্রামে গ্রামে এখনো ১০-১৫ সন্তানের পিতামাতাদের দেখা যায়।
'হিন্দু কমিউনিটির বিবাহ রীতি এবং মুসলিমদের সন্তান জন্মদানে অসচেতনতা মাথায় রেখে ৫ বছরে একটা ভূখণ্ডের জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটা পরিসংখ্যান বের করার চেষ্টা করি।
মনে করুন, ১০০ জন জনসংখ্যার একটি ভূখণ্ডে বসবাসরত মোট জনসংখ্যা মধ্যে ৮০% মুসলিম, এবং ২০% হিন্দু। অর্থাৎ ৮০ জন মুসলিম। ২০ জন হিন্দু।
এখন,
৮০ জন মুসলিমের সমন্বয়ে যদি ৩০ টি ফ্যামিলি তৈরি হয়, তাহলে ২০ জন হিন্দুর সমন্বয়ে ৭ টি ফ্যামিলি তৈরি হবে। (ফ্যামিলির সংখ্যা গাণিতিকভাবেই বের করা হয়েছে। লজিক্যালি ভাবলে হিন্দু কমিউনিটিতে গঠিত ফ্যামিলি সংখ্যা আরো কম হওয়ার কথা।)
প্রতিটি মুসলিম ফ্যামিলিতে ৫ বছরে গড়ে ৩ টি করে শিশু জন্ম নিলে ৫ বছর পর মুসলিম কমিউনিটির মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৭০ জন। (৮০+৯০)
প্রতিটি হিন্দু ফ্যামিলিতে ৫ বছরে গড়ে ২ টি করে শিশু জন্ম নিলে ৫ বছর পর হিন্দু কমিউনিটির মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩৪ জন। (২০+১৪)
ফলাফল: ৫ বছর পর ঐ ভূখণ্ডে মোট জনসংখ্যা বেড়ে হবে ২০৪ জন। যার ৮৩% মুসলিম এবং ১৭% হিন্দু। অর্থাৎ হিন্দু জনসংখ্যার পার্সেন্টিজ কমবে। (এই ৩% গায়েব হয়ে গেছে বলাটা কি যথাযথ হবে?)
সন্তানজন্মদান বা প্রজনন হার মুসলিমদের সমান হলেও ৫ বছর পর হিন্দু জনসংখ্যার পার্সেন্টিজ কিছুটা কমে যাবে। এটাই স্বাভাবিক।
খ)
২০১৬ সালে সোলাদনায় উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও তার পালিত গুণ্ডাপাণ্ডা বাহিনী নিরপরাধ গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছিলো। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পূর্বে আমাদের এলাকায়ও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিলো। বিএনপি অধ্যাসিত একটা গ্রামে আওয়ামী নেতাকর্মীরা হামলা ও ভাঙচুর করেছিলো।
দেশের আনাচেকানাচে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ নির্যাতিত নিপীড়িত হচ্ছে। তারা হিন্দু মুসলিম দেখে নিপীড়ন করছে বলে মনে হচ্ছে না। তবুও কোথাও হিন্দু নির্যাতন হলে সেটি সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুরু মুসলিম জাতিকে জঙ্গি, মৌলবাদী বলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একটাসময় দেশে সত্যি সত্যি হিন্দু বিদ্বেষ, দাংগা ফসাদ সৃষ্টি হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত হিন্দু মুসলিম ঘাটাঘাটি না করে নির্যাতিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। এবং আইনের শাসন বাস্তবায়নে সোচ্চার হওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৬