somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুত্তা আতংক | শৈশব স্মৃতি

২৪ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোনো এক অজানা কারণে আমাকে একা দেখলেই নন্দ কাকুর শান্তশিষ্ট ভদ্র কুত্তাটা ঘেউঘেউ করতো।
তাই স্কুলে যাওয়ার বেলায় চাচ্চুর ঘুম না ভাঙলে চোখেমুখে কুত্তা-আতংকের ছাপ ফুটিয়ে সহজেই স্কুল ফাঁকি দিতে পারতাম।
চাচ্চু প্রায়ই বকাঝকা করে করে মা-ফুফুদের বলতেন,
'' তোমরা তো তারে চেনো না! আস্ত একটা শয়তানের ঘোড়া। কুকুরের চাইতেও তার লেজ বেশি বাকা।''
চাচ্চুর বকাঝকা আমার গায়ে লাগতো না। আসলে স্কুল ফাঁকি দেওয়ার আনন্দের কাছে ঐসব বকাঝকা নিতান্তই সামান্য ছিলো।

নন্দ কাকুর কুত্তাটার প্রতি আমার রাগের কোনো অন্ত ছিলো না। কারণ চাচ্চু কিংবা অন্যকেউ সাথে থাকলে, সে টু-শব্দ পর্যন্ত করতো না। অথচ আমাকে একা দেখলে হুদাই ঘেউঘেউ.... খেউ খেউ খেএএএউউউউ করে তেড়ে আসতো....
স্কুলের পথে যেতে যেতে একদিন চাচ্চুকে বললাম, তুমি বড় মানুষ; কুত্তা তোমাকে তাড়া করতে ভয় পায়।
চাচ্চুর জবাব, তাহলে সল্লুকে তাড়া করে না কেনো? সল্লু কি তোমার চাইতে অনেক বড়ো।
কথা সত্য। তাই আর কিছু না বলে চুপ করে শুনলাম।
চাচ্চু বলতে থাকলেন,
বড় ছোট ফ্যাক্ট না; কুকুরকে দেখে ভয়ে ঠ্যাং কাপলে কুকুরও মজা পায়। হাসে। কুকুরেরা মানুষের মতো হিহি করে হাসতে পারে না; তারা ঘেউঘেউ করে হাসে, হু হু করে কাঁদে আর রেগে গেলে ঘাউঘাউ করে....


২.

বর্ষার টানা বৃষ্টি আর পাহাড় থেকে নামা ঢলে রাস্তার দুপাশ পানিতে টইটুম্বুর। কয়েকদিন ধরে স্কুল টিস্কুল বন্ধ।
আমাদের বাড়ির প্রবেশ পথে, গ্রামের মেইন রাস্টার পাশেই একটা বিশাল তেঁতুলগাছ ছিলো। একবিকেলে বাশের ঠেঙা (লাঠি) দিয়ে সেই তেঁতুলগাছ থেকে তেতুল পাড়ছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়লো নন্দু কাকুর কুত্তাটা ২০-২৫ ফুট দূরে দূরে দাঁড়িয়ে ভীতসন্ত্রস্ত চোখে আমারকে দেখছে। আমিও মনযোগ সহকারে কিছুক্ষণ কুত্তার মনস্তাপ বুঝবার চেষ্টা করলাম।
মনে হলো- হাতে বাশের ঠোঙ্গা দেখে কুত্তা মহাশয় বাশ আতংকে ভুগছে। মাঠঘাট পানিতে ভরপুর থাকায় তার(কুত্তার) বাড়ি ফেরারও আর বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।

কুত্তার অসহায়ত্ব দেখে মনের মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠলো। শালাকে শিক্ষা দেওয়া এর চাইতে ভালো সুযোগ আর পাবো না।
হাতের বাশটা নিয়ে কুত্তার দিকে তেড়ে গেলাম। কুত্তা আত্মরক্ষার্থে কিছুটা দূরে সরে আমার দিকে মুখ করে বললো, ঘেউ (একবার)
'ঘেউ' শুনে গতি আরো একটু বাড়িয়ে বাশ উঁচিয়ে তেড়ে যেতে যেতে বললাম, আবার ঘেউ কয়? শালা.... দাড়া...
এবার কুত্তা 'খিইইই খিক....' টাইপ আওয়াজ করে অনেকদূরে চলে গেলো। এবং আমার দিকে মুখ করে পথে বসে রইলো।
কুত্তাকে ধাওয়া করতে পেরে উৎফুল্ল মনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবলাম,
যাক শালা কুত্তাকে শিক্ষা দিতে পেরেছি। এখন আমাকেও সে ভয় পাবে। রাস্তায় একা দেখলে অকারণে ঘেউঘেউ, খেউ খেউ করার না; তেড়ে আসবে না।


সাপ্তাহখানেক পর পানি কমে গেলে স্কুল টিস্কুল পুনরায় শুরু হলো। এক সকালে একাএকা স্কুলে যাচ্ছি। হাতে ছোটখাটো একটা বাশের ঠেঙ্গা।
যদিও মনেমনে বিশ্বাস ছিলো- কুত্তা আমাকে ভয় পাবে; তবুও হাতে করে বাশের ঠোঙা নিয়ে গিয়েছি। বলা তো যায় না, একলা পেয়ে যদি আক্রমণ করে!

সেদিন নন্দ কাকুর বাড়ির কাছাকাছি যেতেই কুত্তা জোরেশোরে ঘেউঘেউ, খেউ খেউ শুরু করলো। আমি ভেতরে ভয় পেলেও বাহিরে সাহস দেখানোর চেষ্টা করে করে এগুলাম। হাত উঁচু করে বাশের ঠেঙ্গা দেখালাম। ভাব এমন, যেন আজ সামনে পেলে কুত্তাপেটা পেটাবে।

হাত উঁচিয়ে বাশ দেখানোতে সম্ভবত কুত্তা আরো রেগে গেলো। এবং নন্দকাকুদের বাড়ির গেইটের কাছে যেতেই 'ঘাউঘাউ' করে তেড়ে এলে আমি ঘাবড়ে গিয়ে লাঠি ফেলে দিলাম এক ভো দৌড়।
অত:পর, কুত্তা একদম কাছাকাছি চলে এলে ব্যাঘ ফেলে দিলাম পানিতে ঝাপ। রাস্তার পাশের ধানে মাঠে তখনো, হাটুর উপরে জল। কুত্তা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘাউঘাউ, খেউখেউ, ঘেউঘেউ করতে লাগলো।
মিনিট দশের পর, পাড়ার এক বড়ভাই কুত্তার হাত থেকে উদ্ধার করে বাড়ি পর্যন্ত পৌছিয়ে দিলো।

কুত্তা আতংক, জোকের কামড়, জলে গড়াগড়ি... সব মিলেমিশে একাকার হয়ে রাতে জ্বল চলে এলো।
তারপর থেকে রোজ ছোটচাচা স্কুলে নিয়ে যেতেন, আবার ছুটি হলে নিয়ে আসতেন।

মাস দুয়েক পর, হঠাৎ কুত্তাটা নিখোঁজ হয়ে গেলো। নন্দ কাকু অবশ্য দুঃখভরা মনে মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়ি এসে বলতেন,
তিনি জানতে পেয়েছেন তিনার শান্তশিষ্ট ভদ্র কুত্তাটা গুম হয়ে যাওয়ার পেছনে ছোটচাচা জড়িত।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×