somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে নৈতিকতা : কোরআন এবং হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ অধ্যায়:ধর্ষণ (শেষ পর্ব)

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইসলামের প্রতিষ্ঠার সাথে ধর্ষণ ওৎপ্রোতভাবে জড়িত । যুদ্ধের ময়দান একজন ধার্মিকের জন্যে সম্ভোগ ক্ষেত্র— বন্দী নারীদের যৌনদাসি করা এবং নিজেদের মাঝে তাদের বণ্টন ব্যাবস্থা ইসলাম দ্বারা স্বীকৃত— কোন নারী কে দাসি রূপে ক্রয় করা এবং তার ইচ্ছাধীন ব্যাবহার সৃষ্টিকর্তা নির্দেশিত । বিভিন্ন ইসলামিক পন্ডিত এমন এক উন্মুক্ত সত্যকে কখনো অস্বীকার করেন না, কিংবা করতে পারেন না । প্রচলিত অন্য সব ধর্মের মতই, ইসলাম, পুরুষের সাম্রাজ্যকে পুরুষের স্বার্থ চিন্তা করেই গড়ে দিয়েছে— যেখানে একজন নারী শুধুমাত্র তাদের যৌন সম্পদ, যাদের জীবন-যৌবননিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা একমাত্র পুরুষের ।

কোরআন, তার বিশ্বাসী পুরুষকে সম্মতি দিচ্ছে যুদ্ধেবন্দী নারী এবং ক্রীতদাসিদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে, আর হাদিস জানাচ্ছে কিভাবে ধর্মানুসারীরা তার প্রয়োগ বাস্তবে ঘটিয়ে গেছেন । জয়ী মুসলিমগণ পরাজিত যুদ্ধ-ভূমিতে দাঁড়িয়ে লুট করে আনা অসহায় নারীদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে, যাদের পরবর্তীতে বিক্রি করা হয়েছে দাস বাজারে । একজন যুদ্ধবন্দিনীর, যার স্বামী-পরিবার মুসলিমদের হাতে নিহত অথবা বন্দী, সম্মতি থাকতে পারে না সে যৌনতায়; যার ভবিষ্যত লেখা হয়ে গিয়েছিল তখনি—কোন পুরুষের যৌন-দাসি হয়ে জীবন অতিবাহিত করায় !

একজন নারী ধর্ষিত হলে ইসলাম ধর্ম অনুসারে কী বিধান প্রযোজ্য হবে ?
ঐশীগ্রন্থ কোরআনে সরাসরি ধর্ষণের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই— একজন বিশ্বাসীর কাছে তা যতই পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হোক না কেন । ইসলামিক আইন জানায়, কোন নারী-পুরুষের যৌন-মিলন তখনই ধর্ষণ বলে গণ্য হবে যখন, হয় ধর্ষক নিজে সেটা স্বীকার করবে, অথবা অন্তত পক্ষে চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত হয়ে সে ব্যাপারে সমর্থন দেবে (৪:১৫ এবং ২৪:৪ অনুসারে)— নতুবা এধরণের অভিযোগ গৃহীতই হবে না ।
[সুরা আন-নিসা আয়াত ১৫]

আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন।

Those who commit unlawful sexual intercourse of your women – bring against them four [witnesses] from among you. And if they testify, confine the guilty women to houses until death takes them or Allah ordains for them [another] way.

উপরোক্ত আয়াত থেকে স্পষ্টই বোঝা সম্ভব, অনুমোদিত শাস্তির বিধান শুধুমাত্র একজন জিনাকারী (বিয়ে-পূর্ব যৌন সম্পর্ক ও বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক) তথা ব্যাভিচারীর জন্যেই প্রযোজ্য, যেখানে অভিযোগ প্রমানের জন্যে প্রয়োজন চারজন বিশ্বাসযোগ্য পুরুষের সমর্থন । যতদূর বোঝা যায়, ঐশীবানী নাজিলের সময়কালে বল-পুর্বক যৌনতাছিল খুবই সাধারণ ঘটনা, ফলে তার বিরুদ্ধে কোনরূপ নির্দেশনার প্রয়োজন পড়েনি । আর একারনেই বর্তমান সময়কালে ব্যাভিচারের বিধানই হয়েছে ধর্ষণের বিধান । কোন নারী, যিনি ধর্ষনের অভিযোগ এনেছেন, তিনি যদি চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারেন, তবে সেটা শুধুমাত্র তাদের ভেতরকার যৌন সম্পর্কেরই প্রমান দেবে— এক্ষেত্রে তাদের কেউ যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তবে উলটো তারা উভয়ই ব্যাভিচারের সাঁজা ভোগ করবেন ।

প্রকৃত মানে এই দাড়ায়, ইসলামিক আইন তথা শরিয়াহ মোতাবেক ধর্ষণের ঘটনা প্রমান করা প্রায় অসম্ভব । কেননা যদি অভিযুক্ত ব্যাক্তি দাবি করেন যে তাদের যৌন সম্পর্ক পরস্পরের সম্মতিতে ঘটেছিল, তবে এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারীর করার তেমন কিছুই থাকে না (যেহেতু তিনি কোন প্রকার প্রমান উপস্থিত করতে ব্যার্থ হয়েছেন) । ইসলামি ফতোয়াঅনুযায়ী, কোন নারীর কাছে যদি এমন কোন প্রমান না থাকে যা তার অভিযোগ সত্য দাবি করে, তবে তার উচিত নয় কোন পুরুষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপন করা । -এটা অকল্পনীয় এবং হাস্যকর যে, একজন ধর্ষক বল-পুর্বক সঙ্গম-ক্রিয়ার সময় সেখানে কোন সাক্ষী উপস্থিত রাখবে !

ইসলামি আইনে, দাম্পত্য জীবনেও ধর্ষণ বিষয়ক কোন ব্যাপার নেই । একজন স্ত্রীর কোন অধিকার নেই তার স্বামীর যৌন-ডাক উপেক্ষা করার (গুরুতর কোন কারণ ব্যাতিত); একজন পুরুষ যখনি আহ্বান করবে, সাড়া দিতে হবে তার স্ত্রীকে— প্রয়োজনে শারীরিক শাস্তি প্রদানের বিধান দেয় ইসলাম ।

[সুরা নিসা আয়াত ৩৪]

আর যাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কোন অবাধ্যতা খুঁজে পাও তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না।

As to those women on whose part you see ill conduct, admonish them, and abandon them in their beds, and beat them, but if they return to obedience, do not seek a means against them.

আল-বুখারি (৩২৩৭) এবং মুসলিম (১৪৩৬) বর্ণনা করেছেন,

আবু হুরাইরা বললেন : আল্লাহর নবী জানালেন, ‘যদি কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে (যৌন-ক্রিয়ার উদ্দেশ্যে) এবং সে তা উপেক্ষা করে, এবং উক্ত ব্যাক্তি স্ত্রীর ওপর রাগ নিয়ে রাত্রি যাপন করেন, তবে ফেরেস্তারা সকাল পর্যন্ত ঐ মহিলাকে অভিশাপ প্রদান করতে থাকেন ।’

সুতরাং যখন কোন নারী তার স্বামীর আদেশ উপেক্ষা করে, তাকে তার অবাধ্যতার ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে, আর ভয় প্রদর্শন করতে হবে আল্লাহর নির্দেশ এবং ফেরেস্তাদের অভিশাপের ব্যাপারে । এরপরেও যদি সে স্ত্রী তার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাকে আঘাত করা যাবে শারীরিক ভাবে; অতঃপর যৌনক্রিয়ায় জোর করলেও উক্ত ব্যাক্তি কোনরূপ অভিযুক্ত হবে না ।
বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশই ইসলামিক আইন কঠোর ভাবে অনুসরণ করে না, বরং পাশ্চাত্যের ধার করা নিয়মানুসারেই চলে । ফলে এসব দেশের ধর্ষিতরা প্রায়শই সঠিক বিচার পেয়ে থাকে, এবং তা বিজ্ঞান সম্মত প্রমানের ওপর ভিত্তি করেই ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×