somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিঃ ইহা কতটুকু বাস্তব সম্মত!

০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ- একটি অতি পরিচিত বাক্য। হাজার বছর ধরে অন্য বহু কিছুর পাশাপাশি এই বাক্যটিও চলে আসছে। পুলিশ প্রহরায় কেন পুজা উদযাপন করতে হয়- এর ব্যাখ্যা খুব পরিস্কারঃ গুটিকয়েক বিচ্ছিন্নতাবাদীর জন্য ‘আমাদের যেন বদনাম না হয়’; ঐসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে ধর্মের কোন যোগ নেই.. এরা কেউ প্রকৃত মুসলমান নয়.. বিরোধীদল যাতে সাবোটাজ করতে না পারে.. ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আমারও কিছু বলার নেই। যস্মিন দেশ যদাচার। আমি একেবারেই পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে, স্বাভাবিক জীবন যাপনের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কি পর্যায়ে আছে তা একটু দেখতে চাচ্ছি।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কিভাবে খুঁজবোঃ
হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি যুগ যুগ ধরে বাস করছে।একজন আরেকজনের বিপদে আপদে এগিয়ে
আসছে। কোন ঝুটঝামেলা নেই। সব ঠিক ঠাক। এটাকে কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরবো? না, ধরবো না। কারন যতক্ষন পর্যন্ত ধর্ম একটা ইস্যু হিসাবে সামনে না আসছে ততক্ষন কেউই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে আচরন করছে না। বেশিরভাগ সময় মানুষ সামনে আসছে পেশাগত পরিচয়ে, বিহেভ করছে অর্থবিত্তের তারতম্যের নিরিখে, এমনকি রাজনৈতিক মতপার্থক্যের আলোকে। যুগের ব্যস্ততার ফাঁকে, মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েনের চক্করে ধর্মের ইস্যু হয়ে ওঠার সুযোগই কম। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নিয়ে ভিন্ন ধর্মের লোকজনের মধ্যে আলাপচারিতা মাঝে মাঝে হলেও ধর্মীয় দর্শন নিয়ে বাহাস হয় না বললেই চলে। তাই দুই বা তার বেশি ভিন্ন স্রোত খুব সতর্কভাবে পাশাপাশি বয়ে যায় দিনের পর দিন। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ধারাটিকে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয় যেন বেখেয়ালে বিপদসীমা পেরিয়ে না যায়, আর সবল ধারাটিও ভদ্রতার খাতিরে কিংবা সংখ্যালঘুকে আমানত মনে করে অধিকাংশ সময় তর্ক এড়িয়েই চলে। এটাকে কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলা যাবে? আযান আর শাঁখের সুর এক পাড়ায় শোনা গেলেই কি সেটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোন নিদর্শন? বোধহয় না।

তাহলে নিদর্শনগুলো কিরকম হবে? কিকরে বুঝবো কোথাও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে বা নেই?
সম্প্রীতির রকমফেরঃ
ধরা যাক, শহীদ এবং শৈলেশ দুই বন্ধু। তরুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ক্লাসের ছাত্র। পাশাপাশি বাড়ি। দুই পরিবারের সখ্যতা তাদের জন্মের আগে থেকেই। কোরবানীর গরু কেনার জন্য শহীদ এবং তার বাবা হাটে যাচ্ছে।

১। সম্প্রীতির একটা প্রচলিত ধরন এরকম- শৈলেশ ঈদের দিন বাসা থেকে বের হয় না। তার অস্বস্তি লাগে। বন্ধুরাও কেউ তেমন জোর করে না। ধর্ম নিয়ে তাদের মধ্যে কখনো কোন আলোচনা হয় না। অর্থাৎ ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা, বন্ধু চিরকাল, রেললাইন বহে সমান্তরাল’। তথ্য-উপাত্ত ছাড়া নিশ্চিত করে বলা যাবে না; তবে আমার ধারনা, সারা দেশ কভার করে, শুধু শহুরে মধ্যবিত্ত অঞ্চলে নয়, মেথডিকালী সার্ভে করা হলে সম্প্রীতির এই রূপটাই সবচে প্রচলিত হিসাবে বেরিয়ে আসবে। এবং এই জিনিসকে আমি আদৌ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলতে নারাজ।

২। শহুরে মধ্যবিত্ত বলয়ে বেশ স্মার্ট একটা রূপ দেখা যায়। আমাদের মিডিয়ার ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ টাইপ রূপ। এখানে দেখা যায় আমাদের শৈলেশ ঈদের দিন তার মুসলমান বন্ধুদের সাথে হৈচৈ করে আড্ডা দিচ্ছে। যদিও গরুর মাংস খাচ্ছে না। আবার পুজার সময়ও খাওয়া দাওয়া আড্ডা হৈ-হুল্লোড় একসাথেই হচ্ছে। লক্ষ্যনীয়, এখানে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের হিসাব আদৌ আসছে না। ধর্ম আসছে উৎসবের উপলক্ষ্য হয়ে, দর্শন হিসাবে নয়। মতপার্থক্যগুলোর সামনে আসারই সুযোগ নেই। রাজনীতি, খেলা, বই, সিনেমা আর ‘মাইয়ামানুষ’ নিয়ে তুমুল আড্ডায় ধর্ম পুরোপুরি উপেক্ষিত এবং অনুপস্থিত। এই যে কেউ কারো সীমানায় না ঢোকা; ধর্ম নয়, সম্পুর্ণ ভিন্ন কোন প্লাটফর্মে একত্রিত হওয়া- এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কি করে হয়? এ তো স্রেফ বন্ধুত্ব (এক ধরনের)।


৩। তৃতীয় আরেকটি ধরন কল্পনা করা যাক। গরুর হাটে যাবার সময় শহীদ শৈলেশকে ডেকে নিল। উদ্দেশ্য পরিস্কার। বাবাকে গরু বাছাবাছি দরদাম এসবের জন্য সামনে সামনে রেখে দুই বন্ধুতে দীর্ঘপথ আড্ডাবাজী করা। অবশ্য শৈলেশ এসেই চাচাকে বেশ করে বুঝিয়ে দিলো যে যেহেতু তার দাদার গরুর খামার আছে এবং সে প্রায়ই গ্রামের বাড়ি যায় সেহেতু সে শহীদের চেয়ে গরু ভালো চেনে। গত বছর দুর্গাপুজাতে শহীদও ‘এভাবেই’ শৈলেশদের খুব সাহায্য করেছিলো। তার যুক্তিও যথেষ্ঠ জোরালো ছিলো- যেহেতু তার বড় বোন চারুকলা থেকে পাশ করা সেহেতু সে গেরাইম্যা শৈলেশের চেয়ে ঘরবাড়ি সাজানোর ব্যাপারটা ভালো বোঝে।
হাঁটতে হাঁটতে দুই বন্ধুতে কথা হচ্ছে। বিষয় ধর্ম, ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় সংস্কৃতি ইত্যাদি। দুজনেই পরস্পরের ধর্ম নিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করছে। সতর্ক কৌতুহল; কোন অবজ্ঞা নয়। দুজনেই যে যার ধর্মকে সাধ্যমতো ডিফেন্ড করছে কিংবা ‘জানি না’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছে। কৌতুহল সংবরণ করছে। প্রসঙ্গ পাল্টে যাচ্ছে।
তো এটাও কিন্তু ঐ ‘রেললাইন বহে সমান্তরাল’ কেস। পার্থক্য এটুকুই- এখানে বন্ধুত্বের অভিনয় তুলনামূলক কম।

৪। এসবের বাইরে বোধহয় আর একটাই ধরণ থাকতে পারে- দুটাই নাস্তিক কিংবা এগনস্টিক কিংবা ধর্মকে স্রেফ কালচার হিসাবে দেখে এবং মোটেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করে না। অর্থাৎ এখানে সম্প্রদায়গত বিভেদটাই নেই। সম্প্রদায়ই নেই। কাজেই ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ অপ্রাসঙ্গিক।

তাহলে? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কি তবে শুধুই একটা মিথ্যা কথা?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×