somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তরুনীর বিবাহ সমাচার (পর্ব-০৩)

০৫ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পর্ব-০১

পর্ব-০২


পর্ব-০৩

আকাশ গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করিয়া বাজিয়া চলিয়াছে। সেই কখন হইতে। তরুণীর মনের অন্দরেও আকাশের মতনই গুড়ুম গুড়ুম বাদ্য বাজিতেছে। মুখ ভার!

সকালের সূর্য উঠিয়াছিলো ফকফকা হইয়া। মাড় দেওয়া সাদা কাপড়ের মতন চারিদিকে চকচক করিতেছিলো। দিনে্র প্রথম ভাগ হইতে প্রকৃতির অনুরূপ ভাব মনের মধ্যে বিরাজ করিতেছিলো তরুণীরও। সারা সকাল হইতে মধ্য দুপুরের গনগনে রৌদ্রের আলোর মতন তাহার মনের মধ্যেও আলো চমকিত হইতেছিলো। বৈকালের পূর্বাবধিও ঘুমাইবার আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াও দুই চক্ষের পাতা এক করিতে পারিতেছিলো না। অশান্ত হইয়া যাইতেছিলো বারে বারে। যতই সে শান্ত রাখিতে চেষ্টা করিতেছিলো, তথাপি পারিয়া উঠিতেছিলোনা।

বৈকাল হয় হয় এমন সময়ে আচমকা আকাশ গাল ভার করিয়া কাহার উপরে জানি তাহার সমস্ত আবেগের ভাব গোপন করিয়া রাখিতে না পারিয়া হাউমাউ করিয়া কান্দিয়া বুক ভাসাইলো। এহেন আকাশের ক্রন্দন দেখিয়া তরুণী কিঞ্চিৎ আশান্বিত হইয়া উঠিলো এই ভাবিয়া যে আজগে আর কোন ঘটনা ঘটিবে না।

বৈকাল গড়াইয়া যাইয়া সন্ধ্যা হইয়া আসিতেছে। এতক্ষণে আকাশের ক্রন্দনও থামিয়াছে। বোধকরি, মেঘের সাথে তাহার অভিমানেরও সমাপ্তি ঘটিবার তোরজোড় চলিতেছে।
নতুন করিয়া ঝগড়া বাঁধিবার সম্ভাবনাও একেবারে উড়াইয়া দেওয়া যাইতেছে না যদিও।

উত্তর পাশের কক্ষের কাছ দিয়া যে বারান্দা রহিয়াছে, সেইখানে দাঁড়াইয়া তরুণীর মাতা কাহাকে যেনো টেলিফোন করিয়া কুশল জিজ্ঞাসা করিলো। তাহার পরে কাহার আগমনজনিত কারনে রন্ধনগৃহে নানাবিধ খাদ্য সজ্জিত করিতে নিজেকে ব্যপৃত রাখিতে চলিয়া গেলো।

তরুণী ইহার সকলই জানিতো। “কাহার আসিবার কথা আর কে আসিতেছে!” তরুণী স্মিত হাসিয়া উঠিলো আপন মনে।

দিন দুয়েক আগে তরুণী সৌন্দর্য্য চর্চাকেন্দ্র হইতে আপন বাটীতে ফিরিয়া আসিবার পর মাতার সহিত মাতার কামরায় বসিয়া রহিয়াছিলো। মাতা তাহার পত্রিকার পাতা উল্টাইয়া পত্রিকায় প্রদত্ত বিবাহ শাদীর বিজ্ঞপ্তিগুলান চোখ বুলাইয়া যাইতে যাইতে একখান ঠিকানায় আসিয়া থামিয়া গিয়া আপন কন্যাকে অস্থির হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “পারুল, লক্ষ্য করিয়া দেখো, এইখানে কি একটিবার টেলিফোন করিতে পারি?”
পারুলও উৎসুক নয়নে মাতার ডাকে পত্রিকায় চক্ষু বুলাইলো। যেই লম্বা সুদর্শন যুবকের আসিবার কথা ছিলো তাহারই প্রতীক্ষা করিতে করিতে বোধ করি তরুনী তাহাকে কিঞ্চিৎ ভালোবাসিয়া ফেলিতেছিলো। আর তাহার আগমনের কথা থাকিলেও সে আসিতেছিলো না বলিয়া তাহার উপরে অভিমানও হইতেছিলো। সেই অভিমানবশেই সে আচমকা এক সিদ্ধান্ত লইলো। মাতাকে বলিয়া উঠিলো, “বার্তা লও উক্ত পাত্রের।“ বলাই বাহুল্য এই পাত্র বলিতে আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন এক যুবকের কথাই সে বলিতেছে যাহাকে সে চেনে না; এমনকি তাহার বৃত্তান্তও কিছুই জানা হয় নাই। মাতা তৎক্ষণাৎ টেলিফোন করিয়া বসিয়াছেন। বিবাহের হেতু একজন যুবকের আশায় বসিয়া থাকিলে তো চলিবে না। দেখাই যাউক না, আল্লাহ কাহার সাথে তাহার কন্যার জীবন বাঁধিতে চান। আর তরুণীর এইরুপ ব্যবহারের হেতু হইলো এই, যে তাহার সেই সুদর্শনকে দেখাইবে, “তুমি না আসিলে কি হইবে, আমাকে দেখো আরো অনেকেই বিবাহ করিতে আগ্রহী!” এইসবের কিছুই যদিও উক্ত সুদর্শনের জানা সম্ভব ছিলো না কোনপ্রকারেই।

সেই সেইদিন যাহাকে হঠাত করিয়া ফোন করিয়া বসিয়াছিলো মাতা, আজ অপরাহ্নে তাহারই আসিবার কথা। পাত্রের মাতা। পাত্র লম্বায় তরুণীর সমান উচ্চতা। সরকারী চাকুরে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হইয়াছে। ইহার আগেও আরো দুই দুইবার এই দুই মাতার কথা হইয়াছিলো। এইবার লইয়া তৃতীয়বার। একবার তরূণীর পিতা এবং আর দুই বার উক্ত ভদ্রমহিলা বিবাহের সম্বন্ধ ঘটাইবার ইচ্ছা পোষণ করিয়া পত্রিকায় বিবাহের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করিয়াছিলো।

তরূণীর মাতা সেই লম্বা যুবকের জন্য কয়েক পদ মিষ্টান্ন ও অন্যান্য আয়োজন করিয়া রাখিয়াছিলেন। মাতাও একখান দীর্ঘশ্বাস গোপন করিলেন, “কাহার জন্য খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করিলাম আর কে আসিয়া এইসব সাবাড় করিবে!”

তরুণী তখন গৃহের মধ্যে এক কামরা হইতে আরেক কামরায় অস্থির পদে হাঁটিতেছিলো। এমন সময়, বাড়ির সদর দরজায় কেহ আসিয়াছে বলিয়া সাড়া দিয়া উঠিলো দরজা স্বয়ং। অর্থাৎ বেল বাজিয়া উঠিলো। তরুণী অভ্যাসবসে দরজার ছিদ্রে যাহাকে লুকিং গ্লাস বলা হইয়া থাকে তাহাতে চোখ বুলাইয়া দেখিতে পাইলো, এক ভদ্রমহিলা সালোয়ার কামিজ পরিধান করিয়া তাহাদেরই দরজায় দাঁড়াইয়া!

তরুণী দরজা না খুলিয়া ভিতর হইতে তাহার মাতাকে ডাকিয়া “ঐ ভদ্রমহিলা আসিয়াছেন বোধকরি!” কহিয়া দ্রুত পদে নিজের কক্ষে যাইয়া প্রবেশ করিলো। এবং উক্ত কক্ষের দাঁড় টানিয়া দিয়া বিছানার এক কোণায় বসিয়া তাহাকে ডাকিবার অপেক্ষা করিতে লাগিলো। এ এক পরীক্ষা! রোজ রোজ! পুরুষ সম্প্রদায় যদি জানিতো এইরকম হেনস্থার কথা, বুঝিতে পারিতো!

অপরিচিত ভদ্রমহিলা আসা হইতে তিনি চলিয়া যাইবার পর সময়কাল পর্যন্ত কোনরুপ অনিষ্টকর ঘটনা ঘটে নাই। তরুণীর হৃদয়ের মধ্যকার উথাল পাথালও অনেকখানি শান্ত হইয়া গুমোট গরমের পরে হঠাত একপলক দমকা বাতাস যেমন করিয়া প্রশান্তি জুড়াউয়া যায় মনের মধ্যে সেইরকম প্রশান্তি দিতেছিলো। কিন্তুক, আগমনী হেতু হইয়া মনকে প্রশান্ত করিয়া দিয়া গেলো যিনি তাহার একখান কথাতেই চাপা ক্ষোভ দানা বাঁধিয়া উঠিতে লাগিলো।

না, ক্ষোভ তাহার সমীপে নহে যিনি কন্যা দেখিতে আসিয়াছেন। ক্ষোভ তাহার আপন পিতা-মাতার প্রতি।

(চলিবে...)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৪:২০
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×