somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা, না নীলা?

১১ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যা সাতটার সময় নীলার সাথে চাইনিজে ডেট করার কথা।এমন সময় মা এসে জানালেন বাবাকে কেমন জানি অসুস্থ লাগছে, ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে হবে।ষাটটি বছর এ পৃথিবীতে অতিক্রম করায় বাবা এখন রুগ্ন, জীর্ণ এক ব্যক্তি।বৃদ্ধকালীন নানা রোগ বালাই তাকে ইতিমধ্যে বেশ কাবু করে ফেলেছে।তাই মা তাকে কখনো একা বের হতে দেন না।একা বের হতে দেন না ভাল কথা কিন্তু বড় দুই দুইটা ভাই রেখে আমার কেন বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার কাজটি করতে হবে? এ কাজ আমি কখনো করি না।বাসার হাবিজাবি সব কাজতো বড়রাই করে।আমার মনের কথাটা মাকে জানাতে একটুও কুণ্ঠা বোধ করলাম না।নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে আমি কখনো লজ্জা পাই না।যাকে যা বলার সরাসরি বলে দেই।মা জানালেন, বড় ভাই বাসায় নেই।আর মেজো ভাইয়ের সাথে কোথাও যেতে বাবা নাকি কমফোর্ট ফিল করেন না।না করারই কথা অবশ্য।মেজোটা যা বদ।কথায় কথায় বাবাকে ধমক দেয়।
বাবার অবস্থা বেশ খারাপ দেখে ডাক্তার দেখানোর কাজটা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পিছাতে পারলাম না।বাবাকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম।যতো তাড়াতাড়ি পারা যায় ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে এসে তারপর না হয় নীলার সাথে ডেট হবে। অনেকদিন পর নীলার সাথে দেখা হবে ।আজ দেখা না করলে আবার কবে হবে ওনলি গড নোজ।সে প্রায়ই ডুব দিয়ে থাকে।কি যে স্বভাব মেয়েটার! আমি বরং রিক্সা ড্রাইভারকে তাড়াতাড়ি এগুতে বলি।
ডাক্তার সবকিছু দেখে বললেন তাড়াতাড়ি একটা টেস্ট করিয়ে নিয়ে আসতে হবে।আমার তো মাথায় বাজ! হাতে মোটেও সময় নেই।সাতটা বাজতে আর সাত মিনিট! এখন টেস্ট করাতে গেলে আরো এক ঘন্টা চলে যাবে।কাল টেস্ট করা যাবে ।বাবা যেহেতু কানে কম শুনেন, ডাক্তারের কথা নিশ্চয়ই শুনতে পাননি।আমি তাড়াতাড়ি করে বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।তারপর হন্তদন্ত হয়ে চাইনিজে রওনা দিলাম।নীলা একটার পর একটা কল দিচ্ছে। আমি কল ধরলাম না।তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারলেই হল।
নীলা নেই।রাগ করে চলে গেছে নিশ্চয়ই।মোবাইলে কল দিলাম তাকে ।নীলা কল কেটে দিয়ে মেসেজ দিল।‌‌‍"থাক আর কখনো আমার সাথে দেখা করতে হবে না তোমার।" ইন্নালিল্লাহ! নীলা যে এক কথার মানুষ বাবা! কিভাবে যে তার রাগ ভাঙাবো! কলটা ধরলে তবুও একটা কথা ছিল।
রাতে মন খারাপ করে যখন শুয়ে আছি তখন মা রুমে ঢুকলেন।বললেন, ‘তুই আজ ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ায় তোর বাবা আজ খুব খুশী।’ খুশী হবে না ছাই হবে? হাহ! আমার এতো বড় একটা ক্ষতি করে তারপর বাবা খুশী হয়েছেন! বাবা আমার! ওদিকে মা বলেই চলেছেন, ‘জানিস, তখন তুই অনেক ছোট।এক সকালে দেখি তোর খুব জ্বর।শিগগীর তোকে ডাক্তার দেখাতে হবে।ওদিকে তোর বাবার তো ১০ টা থেকে অফিস।আমি বললাম, আমি তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব।তুই গোঁ ধরলি, বাবা ছাড়া ডাক্তার দেখাবি না।তোর বাবা অফিস না গিয়ে তোকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে রওনা দিল।কতো করে তাকে বারন করলাম।বললাম অফিসে চলে যেতে।উনি আমাকে ধমক দিয়ে প্রশ্ন করলেন, ছেলে আগে না চাকরি আগে।আমি আর কথা বাড়ালাম না।সেদিন আবার উনার বড় সাহেব অফিস ভিজিটে এসেছিল।তখনকার দিনে তো মোবাইল ফোন ছিল না।আর বড় সাহেবও অনেক গরম ছিলেন।তাই তোকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাবার জন্য তার ঐ চাকরিটা চলে গিয়েছিল।
ঘটনাটা আমার জানা ছিল না।এতো বড় একটা ঘটনা, অথচ বাবা কখনো এটাকে গল্প করার মতো কোন বিষয় বলে মনে করেননি।আপন মনেই প্রশ্ন করলাম, বাবা আগে নাকি নীলা।বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম। এখনো বেশি রাত হয়নি।ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা পেতে পারি।
১৫টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×