সন্ধ্যা সাতটার সময় নীলার সাথে চাইনিজে ডেট করার কথা।এমন সময় মা এসে জানালেন বাবাকে কেমন জানি অসুস্থ লাগছে, ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে হবে।ষাটটি বছর এ পৃথিবীতে অতিক্রম করায় বাবা এখন রুগ্ন, জীর্ণ এক ব্যক্তি।বৃদ্ধকালীন নানা রোগ বালাই তাকে ইতিমধ্যে বেশ কাবু করে ফেলেছে।তাই মা তাকে কখনো একা বের হতে দেন না।একা বের হতে দেন না ভাল কথা কিন্তু বড় দুই দুইটা ভাই রেখে আমার কেন বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার কাজটি করতে হবে? এ কাজ আমি কখনো করি না।বাসার হাবিজাবি সব কাজতো বড়রাই করে।আমার মনের কথাটা মাকে জানাতে একটুও কুণ্ঠা বোধ করলাম না।নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে আমি কখনো লজ্জা পাই না।যাকে যা বলার সরাসরি বলে দেই।মা জানালেন, বড় ভাই বাসায় নেই।আর মেজো ভাইয়ের সাথে কোথাও যেতে বাবা নাকি কমফোর্ট ফিল করেন না।না করারই কথা অবশ্য।মেজোটা যা বদ।কথায় কথায় বাবাকে ধমক দেয়।
বাবার অবস্থা বেশ খারাপ দেখে ডাক্তার দেখানোর কাজটা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পিছাতে পারলাম না।বাবাকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম।যতো তাড়াতাড়ি পারা যায় ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে এসে তারপর না হয় নীলার সাথে ডেট হবে। অনেকদিন পর নীলার সাথে দেখা হবে ।আজ দেখা না করলে আবার কবে হবে ওনলি গড নোজ।সে প্রায়ই ডুব দিয়ে থাকে।কি যে স্বভাব মেয়েটার! আমি বরং রিক্সা ড্রাইভারকে তাড়াতাড়ি এগুতে বলি।
ডাক্তার সবকিছু দেখে বললেন তাড়াতাড়ি একটা টেস্ট করিয়ে নিয়ে আসতে হবে।আমার তো মাথায় বাজ! হাতে মোটেও সময় নেই।সাতটা বাজতে আর সাত মিনিট! এখন টেস্ট করাতে গেলে আরো এক ঘন্টা চলে যাবে।কাল টেস্ট করা যাবে ।বাবা যেহেতু কানে কম শুনেন, ডাক্তারের কথা নিশ্চয়ই শুনতে পাননি।আমি তাড়াতাড়ি করে বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।তারপর হন্তদন্ত হয়ে চাইনিজে রওনা দিলাম।নীলা একটার পর একটা কল দিচ্ছে। আমি কল ধরলাম না।তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারলেই হল।
নীলা নেই।রাগ করে চলে গেছে নিশ্চয়ই।মোবাইলে কল দিলাম তাকে ।নীলা কল কেটে দিয়ে মেসেজ দিল।"থাক আর কখনো আমার সাথে দেখা করতে হবে না তোমার।" ইন্নালিল্লাহ! নীলা যে এক কথার মানুষ বাবা! কিভাবে যে তার রাগ ভাঙাবো! কলটা ধরলে তবুও একটা কথা ছিল।
রাতে মন খারাপ করে যখন শুয়ে আছি তখন মা রুমে ঢুকলেন।বললেন, ‘তুই আজ ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ায় তোর বাবা আজ খুব খুশী।’ খুশী হবে না ছাই হবে? হাহ! আমার এতো বড় একটা ক্ষতি করে তারপর বাবা খুশী হয়েছেন! বাবা আমার! ওদিকে মা বলেই চলেছেন, ‘জানিস, তখন তুই অনেক ছোট।এক সকালে দেখি তোর খুব জ্বর।শিগগীর তোকে ডাক্তার দেখাতে হবে।ওদিকে তোর বাবার তো ১০ টা থেকে অফিস।আমি বললাম, আমি তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব।তুই গোঁ ধরলি, বাবা ছাড়া ডাক্তার দেখাবি না।তোর বাবা অফিস না গিয়ে তোকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে রওনা দিল।কতো করে তাকে বারন করলাম।বললাম অফিসে চলে যেতে।উনি আমাকে ধমক দিয়ে প্রশ্ন করলেন, ছেলে আগে না চাকরি আগে।আমি আর কথা বাড়ালাম না।সেদিন আবার উনার বড় সাহেব অফিস ভিজিটে এসেছিল।তখনকার দিনে তো মোবাইল ফোন ছিল না।আর বড় সাহেবও অনেক গরম ছিলেন।তাই তোকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাবার জন্য তার ঐ চাকরিটা চলে গিয়েছিল।
ঘটনাটা আমার জানা ছিল না।এতো বড় একটা ঘটনা, অথচ বাবা কখনো এটাকে গল্প করার মতো কোন বিষয় বলে মনে করেননি।আপন মনেই প্রশ্ন করলাম, বাবা আগে নাকি নীলা।বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম। এখনো বেশি রাত হয়নি।ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা পেতে পারি।