মধ্যআফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করা লোকজনের কাছে ' মনিক বিস্কুই ' আর ' জাম্বো পাপা ' এ দুটি শব্দ অধিক পরিচিত । বিস্কুটের ফরাসী ভাষার উচ্চারণ বিস্কুই । এটি কঙ্গোর মানুষদের অতি পছন্দের খাবার তারা দেখা মাত্রই বিস্কুই চাইবে এবং ডি আর কঙ্গোর মিশনের সংক্ষিপ্ত নাম মনুক( বর্তমানে মনুস্কো ) । স্থানীয় লোকজন বহুজাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীকে একটি কমন নামে ডাকে সেটি মনিক । আর সোহায়েলি ভাষায় জাম্বো মানে শুভ সকাল( আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই এভাবে সমবাষণ করে থাকে এবং এ সৌজন্যতাবোধটা ভালো লাগার মত ) । এখানে দারিদ্র পীড়িত সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনধারা আমাদের থেকে আলাদা হলেও গ্রামীন সেটআপ টা বাংলাদেশের মতই ।অসংখ আদিবাসী জনগোষ্টি , তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি দিয়ে গঠিত বিশাল আকৃতির একসময়কার এই বেলজিয়াম উপনিবেশ । বাংলাদেশ মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানির মূল ক্যম্পের ভেতর অবস্থিত সেই আমলের তৈরী ইতিহাসের সাক্ষী হলুদ রঙের বাড়িটিকে স্থানীয় লোকজন " হয়াইট মেন হাওজ "বলে পরিচয় দেয় । অত্যাচারী ইউরোপিয়ান সাদা মানুষের প্রতি একধরনের অশ্রদ্ধা বোধ থাকার কারণে এশিয়ান মানুষদেরকে ও এরা অবিশ্বাসের চোখে দেখে ।বাংলাদেশী শান্তি রক্ষীরা তাদের কাজ ও আচরন দিয়ে এখানকার মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে । তার প্রমান পৃথিবীর দূরতম গহীন অরণ্য ঘেরা বৈচিত্রহীন জীবনধারার লুবিম্বে টু গ্রামে মেজর শাকিলের ও মেজর তানভীরের নাম সবার মুখস্ত ।
একদিন হয়ত আজকের এই দুর্দশাগ্রস্ত ,কুসংস্কার ও নিরাপত্তাহীনতা অবস্থা থেকে কঙ্গোর মানুষদের পরিবর্তন ঘটবে । আফ্রিকার মানুষদের যেমন জংলি ও আগ্রাসী ভাবা হয় তেমনটাও আর থাকবে না । অভাবী বাবা-মারা তাদের ছেলে মেয়েকে ৭ /৮ কি মি দুরের এক স্কুলে পাঠাছে । জীবনের ঝুকি নিয়ে বন্ধুর পাহাড়ী পথে দলবেধে বিদ্যা অনুরাগী বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে আসছে খুব আগ্রহ নিয়ে । কিন্ত কর্মসংস্থানের অভাব প্রকট । গাড়ির চাকা চললে এদের অর্থনীতির চাকাও গতিশীল হবে এবং দুই প্রদেশকে যুক্ত করবে এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তার পুনর্বাসনের কাজ করছি আমরা ।
অনুবাদক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছি তাই সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ রয়েছে । দেখা হলেই কেউ কেউ মোটামুটি সুখ দুঃখের গল্প শুরু করে যার সারমর্ম হচ্ছে একটা কাজ চাই । স্থানীয় জাতিসংঘ মিশন দপ্তরের হাজারও নিয়মের কড়াকড়ি থাকার কারণে কাজ দেয়ার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই আমাদের । মানে আমরা খুব সামান্যই সাহায্য করতে পারি যেমন মাঝে মাঝে আমাদের লোকজন বিশেষ করে অফিসাররা কলম,কাপড় চোপর দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেন । অবশ্য এখানকার পুরুষ লোকদের বেশিরভাগই অলস প্রকৃতির । সকালবেলা দেখা যায় মহিলারা দা , কোদাল নিয়ে মাঠে কাজে যাচ্ছে আর গৃহকর্তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । রাত্রিকালীন সুরাপাত্রের ঘোলা পানির ঘোর তখনও কাটেনি । মাঝে মাঝে দেখা যায় স্বামী স্ত্রী দু জন হেটে যাছে কিন্ত বাচ্চাটা বৌয়ের পিঠে আর বোঝাটাও তার মাথায় । ভদ্রলোক সাজগোজ করে ফুলবাবু সেজে গায়ে বাতাস লাগিয়ে হাটতে পছন্দ করেন ।
স্থানীয় গ্রামপ্রধান জানালেন শান্তিরক্ষীরা এসেছে তাই তারা রাতে নিচ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন । আগে নানা ধরনের সন্ত্রাসী ও প্রতিবেশী দেশের বিদ্রোহী গ্রুপের তান্ডবে জীবন বিপর্যস্ত ছিল । কিন্ত বড়দের কাছে ভরসার স্থল হলেও তারা রাতে বাচ্চাদের ভয় দেখান ' ঘুমাও,না হয় মনিক আসবে ' । দিনের বেলায় ঠিকই ছোট বাচ্চারা তাদের 'বিস্কুই ' সরবরাহকারী বন্ধু কাইযুমু , আমিনীর খোজে কাম্পের কাছে চলে আসে ।
জহিরুল কাইয়ুম
মুবনে , ডি আর কঙ্গো .
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



