আমাদের ক্যাম্পে প্রীতিভোজ উপলক্ষে ( বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিভোজের মত তবে এখানে বড় খানা বলা হয় ।এটা আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম তাই হলের মত মজা করে গোগ্রাসে খাওয়ার প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত ) গরু কেনার জন্য আশেপাশের এলাকার একমাত্র জনপ্রিয় বাজার কাংকিন্দায় গেলাম । বাংলাদেশের বাজারের সাথে তুলনা করলে বলা যায় এটি একটি আদর্শ বাজার । মঙ্গলবারের সাপ্তাহিক এই গ্রামীন বাজারে চাল-ডাল ,তেল সাবান , কাপড় চোপড় থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক্সের জিনিসপত্র, অস্থায়ী পানশালা এসব কিছু একজায়গায় পাওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার না । কেনা বেচার জন্য খুব সাজগোজ করে বহু দূর থেকে মানুষ আসে ।পুরুষ লোকদের কেউ কেউ স্যুটেড ব্যুটেড হয়ে সুগন্দি মেখে গলার নিচে এক বিগত সাইজের একটা টাই পড়ে বাজারে আসছেন যথাসম্ভব গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে(বেলজিয়ানদের শেখানো স্টাইল)। দোকানিদের অধিকাংশই মহিলা যারা পাহাড়ী পথ বেয়ে মালামাল নিয়ে এসেছেন সেই সকালে। গরুর হাট ছাড়া পুরুষদেরকে সাধারণত গলির ভেতর পানশালায় বোতল হাতে ডেকুর তুলতে বেশি দেখা যায় । বেশ দূর থেকে বোঝা নিয়ে আসা কর্মঠ লোকও আছে। রবিবারের প্রার্থনা সভার পর এ ধরনের বাজারই হচ্ছে সাধারণ মানুষের দেখা সাক্ষাতের দ্বিতীয় সুযোগ তাই ঐতিহ্যবাহী চুলের সাজ নিয়েও আসেন কেউ কেউ ।ছেলে কিংবা মেয়েদের কেউ একজন হয়ত চুলকে রশির মত পাকিয়ে নিয়ে এসেছেন। কারো মাথার চুল দেখে দুবাইয়ের রাস্তার পাশের খেজুর বা পাম গাছের সারির মত মনে হতে পারে। .মাথা থেকে উপরের দিকে চুলের গোছা চিকন ও লম্বা করে বাঁধানো ।ফুটবল বা ক্রিকেট খেলায় আমরা আফ্রিকান ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের খেলোয়ারদের এ ধরনের বিশেষ চুল দেখে অভ্যস্ত ।
বাজারের একটি রঙিন দ্রব্য সামগ্রী দেখে কৌতুহল চেপে রাখতে পারলাম না। যে মাত্র ছবি তুলতে গেছি ক্রেতা ভেবে দোকানি দৌড়ে এসে এক গ্লাস কেনার জন্য জোরাজোরি শুরু করলো । ততক্ষণে আমার পেটের ভেতরের সব কিছু মুখ দিয়ে বের হয়ে আসার উপক্রম হয়েছে ।কোনো কিছুই ফেলনা নয় তাই পাতিল ভর্তি জমাট বাধা গরুর রক্ত বিক্রি হচ্ছিল কয়েকটি দোকানে ।আমি দ্রুত পালিয়ে বাঁচলাম ওখান থেকে। লোক মুখে শুনি মানবদেহের সব অঙ্গ আহারযোগ্য এ ধারণা ও নাকি পোষণ করে জঙ্গলের বাসিন্দারা । কি সর্বনাশ ! কি সাংঘাতিক !!
কাজ শেষে ফেরার পথে ক্যাম্পের রাস্তায় উঠতেই গান মনে পড়ল গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির পথ । রাঙ্গামাটির পথঘাট রাঙ্গা বা রঙিন কিনা আমি ঠিক জানি না । তবে না হলেও কোনো সমস্যা নাই কারণ এখন রাজশাহীতে রাজা কিংবা শাহী না থাকলেও যেমন চলে । বাহারি রঙের কাদাময় রাস্তায় স্থানীয় লোকজন গামবুট পড়ে হাঁটে ।আমরা যে গ্রামে আছি এখানে মাটির রং লাল।আমাদের বেশিরভাগ লোকের(যারা স্যান্ডেল পড়ে হাঁটি তাদের) পায়ের ফাটা আর পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ধানক্ষেত দেখতে প্রায় একই রকম ।এখানকার মাটিতে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য থাকার কারণে এ রকমটা হয়েছে । একজনকে আফসোস করে বলতে শুনলাম সারা বছর যে পরিমান ক্রিম পায়ে মেখেছি তার অর্ধেকও যদি মুখে মাখতাম তাহলে চেহারা আরো সুন্দর হয়ে যেত কিন্ত পা ঠিক হলো না ।
জহিরুল কাইয়ুম
মুবনে, ডি আর কঙ্গো
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



