somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাপিত জীবনের কয়েকটা সাধারণ ঘটনা

৩১ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যেখানে থাকি(আমাদের মূল ক্যাম্প এলাকা ) অন্যান্য প্রদেশের বিভিন্ন এলাকার তুলনায় এখানে আবহাওয়া খুব ভালো৷বেশি ঠান্ডা ও না আবার খুব গরম ও না৷প্রায় সারাবছরই মোটামুটি এ ধরনের তাপমাত্রা বিরাজ করে৷কখনো কখনো মনের উত্তাল ঝড়ো হাওয়ার সাথে পরিবেশের নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা মনকে আরো শীতল ও শূন্য করে দেয়৷এই অনাত্তীয় বা পরিবার পরিজনহীন পরিবেশে তখন অন্যদের সাথে আমারও মাথা চুলকিয়ে বলতে ইচ্ছা করে কেমন যেন লাগে রে ৷এখানে রাতে মৃদু ঠান্ডা পড়ে যেটা বাংলাদেশে শীতের শুরুতে অনুভব হয় ৷দিনে হালকা গরম থাকলেও রোদে চেহারা কিছুটা কালো হয়ে যায় ৷ ঘোর অনুজ্জল বর্ণের মানুষদের দেশে এসে কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে লোকজন মুখে যত্ন সহকারে নিয়মিত ক্রিম মাখত ৷দৈনিক ক্রিম মাখার হার এত বেশি ছিল যে একজন আশংকা প্রকাশ করে বললেন অর্থমন্ত্রী জানতে পারলে হয়ত আগামী বাজেটে ক্রিমের দামের উপর ভ্যাট আরোপ করবেন ৷ বর্ষাকালের কনকনে ঠান্ডার মধ্যে সন্ধ্যায় আমরা খুব একটা বের হতাম না৷ ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু জহুর স্যার কারণ তাঁর কানটুপি থিওরি খুব কাজে দিয়েছিল ৷সবাই যখন ঠান্ডার হাত থেকে কান মাথা বাঁচাতে ব্যস্ত তিনি তার প্রিয় কানটুপি পড়ে আরামে চলাফেরা করতেন ৷ তাকে দেখে আরো লোকজন দেশ থেকে কানটুপি আনিয়েছে ৷ক্যাম্প জুড়ে কানটুপির আধিক্য দেখে কঙ্গোলিজরা ভেবে পায়না কি দিয়ে বা কেন এভাবে মাথা বেঁধে রাখা হয় ৷উনার পর একই দায়িত্বে যিনি এসেছেন কাকতালীয়ভাবে তিনিও কানটুপি ছাড়া চলতে নারাজ৷
আবহাওয়ার এই সুন্দর অবস্থার কারণে আমাদের সবার সাস্থ্য ভালো থাকলেও স্থানীয় মানুষদের সাস্থ্য সমস্যা নিয়মিত ব্যাপার ৷আমাদের উদ্যোগে আশেপাশের লোকদেরকে সল্প পরিসরে ফ্রি চিকিত্সা সেবা প্রদান করা হতো প্রথম থেকেই ৷এখন প্রতিদিনই লেভেল ১ নামের আমাদের ছোট্ট হাসপাতালটিতে রোগী আসে ডাক্তার দেখাতে৷বিশাল সংখ্যক মানুষকে নিয়মিত ওষুধপত্র দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ কিন্ত অসহায় মানুষকে আসতে নিষেধ করে দেয়াটাও কষ্টকর ৷তাই সাধ্যের মধ্য থেকে মেডিকেল টিম অনেক ভালো সার্ভিস দিচ্ছে আন্তরিকতার সাথে । এখানকার সাস্থ্যসেবার করুণ অবস্থা সমস্যা জর্জরিত মানুষের জীবনযাপনকে আরো জটিল করে দেয় ৷ ছোটখাটো ডিসপেনসারির সল্প শিক্ষিত দেবতুল্য শল্য চিকিত্সকরা বিল আদায় করেন রোগীদের সুস্থতার পর৷খেয়াল খুশিমত ডলারে বিল নেয়ার অভিযোগ করলেন ভুক্তভোগীরা ৷আমাদের কাছ থেকে জটিল রোগের চিকিত্সা ও বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে এরা খুব খুশি ৷এদের মধ্যে আবার ' থানার পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি চাচার নামে একটা মামলা করেই যাই ' টাইপের ফাঁকিবাজও আছে ৷ মানে আমাদের ক্যাম্প ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রোগীদের লাইন দেখলে পথচারীরাও লাইনে দাঁড়ান ৷ হাতে কিছু থাকলে ওটা দুরে রেখে মাথাটা একপাশে হেলিয়ে দিয়ে এবং চেহারায় ভীষণ অসুস্থ ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকেন ৷ কি অসুখ জানতে চাইলে যা বলেন তা শুনে বুঝা যায় কিছুক্ষণ আগে সুস্থ থাকলেও 'অদূরে ডাক্তার দেখিবা মাত্র রোগীর বাত ব্যথা টন টন করিয়া উঠিল '। অবশ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল থেকে আমরা কিছু ফাঁকিবাজরাও এরকম সুবিধা নিতাম ৷বিকেলে উত্তর ক্যাম্পাস এলাকায় হাঁটতে গেলে ফিরে আসার সময় ডাক্তার দেখিয়ে আসতাম ৷ ভাবতাম কোনো রোগ না থাকলেও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তো থাকেই৷ তাছাড়া বিনা পয়সায় ওষুধ পেলে মন্দ কি৷এখানে তাই সংখ্যায় অল্প এ ধরনের চালাক লোককে চেনা আমার জন্য কঠিন নয়৷ কথাবার্তা বলে অনেক লোকের মাঝ থেকে কয়েকজন বেশি অসুস্থ লোককে বের করে ডাক্তারের কাছে আনি৷তখন তাদের মুখের সেই বিজয়ীর হাসি শুন্য রানে শচীন টেন্ডুলকারকে বোল্ড আউট করা বোলারের হাসির সাথে তুলনা চলে ৷
জহিরুল কাইয়ুম
কঙ্গো থেকে .
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:২১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×