আমরা যেখানে থাকি(আমাদের মূল ক্যাম্প এলাকা ) অন্যান্য প্রদেশের বিভিন্ন এলাকার তুলনায় এখানে আবহাওয়া খুব ভালো৷বেশি ঠান্ডা ও না আবার খুব গরম ও না৷প্রায় সারাবছরই মোটামুটি এ ধরনের তাপমাত্রা বিরাজ করে৷কখনো কখনো মনের উত্তাল ঝড়ো হাওয়ার সাথে পরিবেশের নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা মনকে আরো শীতল ও শূন্য করে দেয়৷এই অনাত্তীয় বা পরিবার পরিজনহীন পরিবেশে তখন অন্যদের সাথে আমারও মাথা চুলকিয়ে বলতে ইচ্ছা করে কেমন যেন লাগে রে ৷এখানে রাতে মৃদু ঠান্ডা পড়ে যেটা বাংলাদেশে শীতের শুরুতে অনুভব হয় ৷দিনে হালকা গরম থাকলেও রোদে চেহারা কিছুটা কালো হয়ে যায় ৷ ঘোর অনুজ্জল বর্ণের মানুষদের দেশে এসে কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে লোকজন মুখে যত্ন সহকারে নিয়মিত ক্রিম মাখত ৷দৈনিক ক্রিম মাখার হার এত বেশি ছিল যে একজন আশংকা প্রকাশ করে বললেন অর্থমন্ত্রী জানতে পারলে হয়ত আগামী বাজেটে ক্রিমের দামের উপর ভ্যাট আরোপ করবেন ৷ বর্ষাকালের কনকনে ঠান্ডার মধ্যে সন্ধ্যায় আমরা খুব একটা বের হতাম না৷ ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু জহুর স্যার কারণ তাঁর কানটুপি থিওরি খুব কাজে দিয়েছিল ৷সবাই যখন ঠান্ডার হাত থেকে কান মাথা বাঁচাতে ব্যস্ত তিনি তার প্রিয় কানটুপি পড়ে আরামে চলাফেরা করতেন ৷ তাকে দেখে আরো লোকজন দেশ থেকে কানটুপি আনিয়েছে ৷ক্যাম্প জুড়ে কানটুপির আধিক্য দেখে কঙ্গোলিজরা ভেবে পায়না কি দিয়ে বা কেন এভাবে মাথা বেঁধে রাখা হয় ৷উনার পর একই দায়িত্বে যিনি এসেছেন কাকতালীয়ভাবে তিনিও কানটুপি ছাড়া চলতে নারাজ৷
আবহাওয়ার এই সুন্দর অবস্থার কারণে আমাদের সবার সাস্থ্য ভালো থাকলেও স্থানীয় মানুষদের সাস্থ্য সমস্যা নিয়মিত ব্যাপার ৷আমাদের উদ্যোগে আশেপাশের লোকদেরকে সল্প পরিসরে ফ্রি চিকিত্সা সেবা প্রদান করা হতো প্রথম থেকেই ৷এখন প্রতিদিনই লেভেল ১ নামের আমাদের ছোট্ট হাসপাতালটিতে রোগী আসে ডাক্তার দেখাতে৷বিশাল সংখ্যক মানুষকে নিয়মিত ওষুধপত্র দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ কিন্ত অসহায় মানুষকে আসতে নিষেধ করে দেয়াটাও কষ্টকর ৷তাই সাধ্যের মধ্য থেকে মেডিকেল টিম অনেক ভালো সার্ভিস দিচ্ছে আন্তরিকতার সাথে । এখানকার সাস্থ্যসেবার করুণ অবস্থা সমস্যা জর্জরিত মানুষের জীবনযাপনকে আরো জটিল করে দেয় ৷ ছোটখাটো ডিসপেনসারির সল্প শিক্ষিত দেবতুল্য শল্য চিকিত্সকরা বিল আদায় করেন রোগীদের সুস্থতার পর৷খেয়াল খুশিমত ডলারে বিল নেয়ার অভিযোগ করলেন ভুক্তভোগীরা ৷আমাদের কাছ থেকে জটিল রোগের চিকিত্সা ও বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে এরা খুব খুশি ৷এদের মধ্যে আবার ' থানার পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি চাচার নামে একটা মামলা করেই যাই ' টাইপের ফাঁকিবাজও আছে ৷ মানে আমাদের ক্যাম্প ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রোগীদের লাইন দেখলে পথচারীরাও লাইনে দাঁড়ান ৷ হাতে কিছু থাকলে ওটা দুরে রেখে মাথাটা একপাশে হেলিয়ে দিয়ে এবং চেহারায় ভীষণ অসুস্থ ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকেন ৷ কি অসুখ জানতে চাইলে যা বলেন তা শুনে বুঝা যায় কিছুক্ষণ আগে সুস্থ থাকলেও 'অদূরে ডাক্তার দেখিবা মাত্র রোগীর বাত ব্যথা টন টন করিয়া উঠিল '। অবশ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল থেকে আমরা কিছু ফাঁকিবাজরাও এরকম সুবিধা নিতাম ৷বিকেলে উত্তর ক্যাম্পাস এলাকায় হাঁটতে গেলে ফিরে আসার সময় ডাক্তার দেখিয়ে আসতাম ৷ ভাবতাম কোনো রোগ না থাকলেও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তো থাকেই৷ তাছাড়া বিনা পয়সায় ওষুধ পেলে মন্দ কি৷এখানে তাই সংখ্যায় অল্প এ ধরনের চালাক লোককে চেনা আমার জন্য কঠিন নয়৷ কথাবার্তা বলে অনেক লোকের মাঝ থেকে কয়েকজন বেশি অসুস্থ লোককে বের করে ডাক্তারের কাছে আনি৷তখন তাদের মুখের সেই বিজয়ীর হাসি শুন্য রানে শচীন টেন্ডুলকারকে বোল্ড আউট করা বোলারের হাসির সাথে তুলনা চলে ৷
জহিরুল কাইয়ুম
কঙ্গো থেকে .
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



