somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন যেখানে যেমন (২)

১৪ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ লেখায় কঙ্গোর গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার একটা অংশ নিয়ে আলোচনা থাকছে এবার। গ্রামাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সাধারনত ভিলেজ চীফ বা গ্রাম প্রধানরা । নানান ধরনের স্বদেশী বিদেশী বিদ্রোহী গ্রুপ ও সন্ত্রাসীদের উৎপাতে অতিষ্ঠ জীবনকে শংকামুক্ত করার পরিবর্তে আরও বেশি আতংকগ্রস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে ভিলেজ চীফদের উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে । অভাব আর ক্ষুধা জর্জরিত মানুষ কোন সমস্যা নিয়ে তাদের দারস্থ হলেই আয় উপার্জনের একটা ব্যবস্থা হয়ে যায় । গরু,ছাগল,মোরগ মুরগি ,পানীয় ইত্যাদি নজরানা বা সালামী হিসেবে দিলেই কাজ হয় । বেলজিয়ান উপনিবেশ সময়কার একটা ভুমি আইন থাকলেও তাঁদের বিদায়ের পর ভিলেজ চীফরা আবারও চরম ক্ষমতাশালী দেবতার আসনে চলে যান। কোন লোক বসতবাড়ি বানানো ও এক ফসল চাষাবাদ করার জন্য সে অঞ্চলের ভিলেজ চীফকে যথা বিহিত সম্মান পূর্বক চাহিদা মোতাবেক উপহার দিতে বাধ্য থাকেন । প্রায় অর্ধশত গ্রামের একজন গ্রুপমেন্ট (গ্রামের এসোসিয়েশন) চীফের সাথে কাজের ব্যাপারে কথা বলতে গেলে এক পাকিস্তানি অফিসারকে তিনি বলেন আপনি কিন্ত আমার প্রটোকল মানছেন না । পরে তাঁর হাতে যখন সম্মানী স্বরূপ দুই প্যাকেট বিস্কুট ধরিয়ে দেয়া হল তাতে তার প্রটোকল রক্ষা হয় !! কালেক্টটিবিটি চীফ (অনেকটা স্থানীয় সরকার টাইপের) আবার একধাপ উপরে । তাঁর পরিবারকে কোন এক অজানা কারনে রাজকীয় পরিবার(ফামি রয়্যাল) বলা হয় । ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ রাজ পরিবারের মত এদের কোন জৌলুস নেই। আছে শুধু বংশ পরস্পরায় নিজস্ব কিছু খান্দান আর সম্মানী হিসেবে পাওয়া রসের বোতলের উত্তরাধিকার। এভাবে একের পর এক মর্যাদাবান চীফ থাকেন । বেশ কিছু ভিলেজ চীফকে দেখলাম খুব দুষ্ট ও চালাক প্রকৃতির । তাদের ছেলে কিংবা ভাইদের কু-কৃতি ও বেপরোয়া আচরণ তো থাকেই। জানতে চাইলাম ভিলেজ চীফ হওয়ার জন্য প্রথমত কি যোগ্যতা দরকার । জবাবে বাপকা বেটা টাইপের ছেলে মাথা দেখিয়ে বলল সবার আগে চাই অনেক বুদ্ধি । খুব সম্ববত এ কারনেই তাঁর সাথে কথা বলার সময় নিজেকে ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ বলে পরিচয় দিতে আনন্দ পায়। হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান হলেও বাংলাদেশের গ্রামের কিছু মোড়লদের কর্মকাণ্ডের সাথে এদের অনেক মিল খুঁজে পাই। বুঝতে পারলাম অসহায় সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি সব জায়গায় একই রকম । এদের সমাজ ব্যবস্থায় একজন ভিলেজ চীফের পদাধিকার বলে একাধিক বিয়ে করতে পারেন । তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও বেশি সংখ্যক সন্তানের জনক হওয়াটাকে ধনী হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। ত্রিশ জন জনশক্তির গর্বিত পিতা একজন চীফ আমার কাছে নিজ মুখে এ কৃতিত্বের কথা বলেছেন । আমাদের এক সহকর্মী পুরো ব্যাপারটিকে একটা বিনোদন বললেন । আসলেই কি তাই ? আর হলেই বা কি ?

নিজের অভিজ্ঞতার আরও একটা অপ্রয়োজনীয় প্যাঁচাল টাইপের গল্প বলছি। দূরের ক্যাম্পে রুটিন কাজের বাহিরে তেমন কিছু করার থাকেনা বলে সময় কাটানো বেশ কষ্টকর । যারা ওখানে থাকেন তারা বুঝতে পারেন কতো সেকেন্ডে এক ঘণ্টা হয় । অন্য দিকে হেড কোয়ার্টারে থাকলে সময় ভালোই কাটে । সাত সকালে শরীরচর্চা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু । যেন অধিক ভোজনজনিত কারনে ক্রমশ বর্ধিষ্ণু শরীরে মেদ জমতে না পারে। অনেকের আয়তন ও আকৃতি বৃদ্ধির ফলে জামা কাপড়ের সাইজ ছোটো হতে থাকে । এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লেও এখন ঠিক আছি।
কাজের সময় ছাড়া বদ অভ্যাসবশত বেশিরভাগ সময় নিজের মত চুপচাপ থাকি। হাজার বার চেষ্টা করেও এ অভ্যাস থেকে বের হতে পারিনি। মাঝে মাঝে রাতে কয়েকজন একসাথে বসে নাটক বা মেগা সিরিয়াল দেখা হয় । সংলাপ ও ঘটনার উপর ভিত্তি করে অনেক রকমের মন্তব্য আসতে থাকে বিভিন্ন দিক থেকে । নাটকের নায়ক নায়িকার ফুল বিনিময়ের দৃশ্যে কেউ কেউ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে। অবিবাহিত বলে সন্দেহ ! আহা ! বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু করার একটা সুযোগও পাইনি একথা তাঁদের বুঝাই ক্যামনে ।আগে রাতের খাওয়া দাওয়ার পর মজলিশ নামক মজার আড্ডা বসতো এবং তা চলতো মাঝ রাত অবধি । নিতান্তই মজা করার জন্য ‘জলে ভাসা পদ্ম আমি শুধু পেলাম ছলনা’ নিয়মিত একজন সারাদিন গেয়ে চলেন সংগীতের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে অতি উচ্চ স্বরে । একজন নাকি দুঃখ বিলাসের বর্ষপূর্তি বা এ ধরনের কিছু একটা নীরবে উদযাপন করেন। ‘ আছে টেলিফোন আছে পিয়ন আছে টেলিগ্রাম , বন্ধু নাই আমার মনের খবর কারে পোছাইতাম’ লুকিয়ে লুকিয়ে গাওয়ার মানুষও আছে। এগুলো হতাশা অথবা মনের আকুতির বহিঃ প্রকাশ নয় ! শুধুই বিনোদন !!

জহিরুল কাইয়ুম
কঙ্গো থেকে।
( এ লেখাটা পড়ে যারা কিছু বুঝতে পারছেন না তারা এ ব্লগারের অন্য লেখাগুলো পড়ার বিরক্তিকর কাজটি করলে হয়ত কিছুটা মিল পাবেন । ধন্যবাদ )
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:৩৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×